কলকাতা, 11 জানুয়ারি: সন্দেশখালি ইস্যুতে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলা খারিজ কলকাতা হাইকোর্টে । শুক্রবার তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা । সেই ঘটনায় দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলা বৃহস্পতিবার খারিজ করে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ।
এদিন প্রধান বিচারপতি নির্দেশে বলেন, "শুধুমাত্র সংবাদ মাধ্যমের খবরের উপর ভিত্তি করে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে । মামলা নিয়ে কোনও রিসার্চ করা হয়নি । কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার যথেষ্ট ক্ষমতা আছে । তারা জানে এসব পরিস্থিতি কীভাবে সামলাতে হয় । শুধুমাত্র সংবাদ মাধ্যমের খবরের উপর ভিত্তি করে মামলা দায়ের করে আদালতের কাছে আবেদন জানানো অর্থহীন । তাই এই মামলার কোনও গ্রহণযোগ্যতা আছে বলে আদালত মনে করছে না ।"
এদিন বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর বেঞ্চে সন্দেশখালির ঘটনায় চারটে এফআইআর হয়েছে বলে জানিয়েছে ইডি । তারমধ্যে একটি মামলায় ইডির আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে । মিডিয়ার সামনে ইডির অফিসারদের মারধর করা হয় । বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের মৌখিক নির্দেশ, সোমবার পর্যন্ত ইডি অফিসারদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ পুলিশ করতে পারবে না । সোমবার পরবর্তী শুনানি । অন্যদিকে, আজই ইডি তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর খারিজের দাবিতে মামলার আবেদন করে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে। বিচারপতি মান্থা বেলা 12 টায় শুনানির আশ্বাস দিয়েছেন । সেই মামলার শুনানি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি ।
শুক্রবার ইডির অভিযান ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালি । ইডি আধিকারিকদের ওপর চড়াও হন তৃণমূল নেতার অনুগামীরা । না জানিয়ে কেন ইডির হানা ? এই প্রশ্ন তুলে ইডি আধিকারিকদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন সন্দেশখালির দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের ঘনিষ্ঠরা । এরপরই শুরু হয় হামলা, ভাঙচুর । পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে শেষমেশ বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে রেহাই পেতে এলাকা ছাড়তে হতে বাধ্য হন ইডি আধিকারিক ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ।
যদিও সন্দেশখালি কাণ্ডে এখনও অধরা মূল হামলাকারীরা । অভিযোগ, পুলিশের এখনও কোনও হেলদোল নেই । ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কেবলমাত্র পাঁচজনকে আটক করা ছাড়া কোনও গ্রেফতারি নেই এখনও অবধি । স্বভাবতই পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠেছে । তবে, ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর পুলিশের তৎপরতা বেড়েছে ঠিকই । কিন্তু, এই তৎপরতা পুলিশ আগে দেখালে এই 'লজ্জাজনক' ঘটনা এড়াত যেত বলেই মনে করছেন অনেকে ।
সন্দেশখালি কাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড 'বালু' ঘনিষ্ঠ দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের হদিস মিলছে না ঘটনার পর থেকেই ! বাড়িতেও নেই তিনি ।কার্যত বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন সন্দেশখালির এই 'ত্রাস' ! কিন্তু প্রশ্ন হল, হঠাৎ কোথায় উবে গেলেন ? পালিয়ে যায়নি তো অন্য কোথাও ? কেনই বা কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকদের আটকাতে তিনি ও তাঁর অনুগত দুষ্কৃতীরা এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন ? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তরই এখন খুঁজছেন তদন্তকারীরা । আর তার উত্তর মিলতে পারে একমাত্র হামলাকারী অভিযুক্তরা গ্রেফতার হলেই ।
আরও পড়ুন:
- সন্দেশখালিকাণ্ডে কড়া কমিশন, ভোট ঘোষণার আগেই মিডিয়ায় উপর নজরদারির নির্দেশ
- এবার ইডির নজরে শেখ শাহজাহানের আলিশান হোটেল, হামলার ব্লু-প্রিন্ট কি সেখানে বসেই ?
- তৃণমূলের শাহজাহান নাকি নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকা সম্পত্তির মালিক !