কলকাতা, 4 জুন:রেল দুর্ঘটনার লজ্জা ঢাকতে পূর্ববর্তী দুর্ঘটনায় মৃতদের নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি ৷ অভিযোগ করলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ রবিবার এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি টেনে আনলেন গোধরা প্রসঙ্গও ৷ বালাসোর রেল দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই পূর্ববর্তী রেল মন্ত্রীদের সময়ে মৃতের সংখ্যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
শুক্রবার সন্ধ্যা 7টা নাগাদ ওড়িশার বালাসোরের কাছে বাহানাগা বাজারে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে 275 জনের। শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে রেলের সমন্বয়ের অভাবের কথা বলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। এরপরই বিষয়টি নিয়ে ময়দানে নামে বিজেপি। তৃণমূলের অভিযোগ, তথ্য তুলে ধরে বিজেপির তরফ থেকে বলা হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে বহু । যার মধ্যে দুটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে 54টি। ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে 893টি। এই দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এক হাজার 451 জন। রবিবার সাংবাদিক সম্মেলন করতে গিয়ে এই তথ্যকে কার্যত 'ফেক নিউজ' বলে উড়িয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতার অভিযোগ, সত্য ঢাকতে মিথ্যার বেসাতি পরিবেশন করা হচ্ছে। এদিন তাঁর আমলে ঘটে যাওয়া রেল দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এই সময়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। আমি ভেবেছিলাম এই সময় রাজনীতির কথা বলব না। আমরা যখন উদ্ধারকাজে নজরদারিতে ব্যস্ত ছিলাম তখন কেন্দ্রের তরফে অথবা রেল বা বিজেপির তরফে মিথ্যা রটানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে আমার সময় প্রায় তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে রেল দুর্ঘটনায়। একইভাবে নীতিশ কুমার এর সময় দুই হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন।" এর পালটা মমতা বলেন, "আমার সময় রেলকে আধুনিকীকরণ করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তার জন্যই আজকে রেলের দুর্ঘটনা কমে গিয়েছে।" বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁর সময়েই রক্ষীবিহীন লেভেল ক্রসিংগুলি পরিবর্তন করে অত্যাধুনিক মানুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত লেভেল ক্রসিং এবং নতুন সিগনালিং সিস্টেম এবং অ্যান্টি কলিসন ডিভাইস নিয়ে আসা হয়েছিল। একই সঙ্গে, মমতা এও উল্লেখ করেছেন, তিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দুর্ঘটনায় যে মৃতের সংখ্যা দেখানো হচ্ছে তা সত্য নয়।
আরও পড়ুন:রেলকে বেচে দেওয়ার ছক কষছে কেন্দ্র, বালাসোর বিপর্যয়ে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত মমতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, "আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমি যদি প্রশ্ন করি গোধরায় কতজন মারা গিয়েছিল! সেখানে কীভাবে এত মানুষের মৃত্যু হয়েছিল! এর পেছনে কারা ছিল? আমি সব করে দিয়ে এসেছিলাম বলে এতদিন রেলটা সুরক্ষিত ছিল। গত চার- পাঁচ বছরে রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি ৷ অবস্থার অবনতি হতে এই ঘটনা ঘটেছে। যাদের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার কথা ছিল, তাঁরা দায়িত্ব না নিয়ে, মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে, আমার সময় কত মারা গিয়েছে, নীতীশ কুমারের সময় কত মারা গিয়েছে এইসব প্রচার করছে। এবার তো ওরা ব্রিটিশ রাজকেও টেনে নিয়ে আসবে। বলবে সে সময় কতজন মারা গিয়েছিল। অতএব এখন মিথ্যে বলে নিজেদের মুখ বাঁচানো যাবে না।" মমতা বলেন, "এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল, এর জন্য আপনারা তো ক্ষমা চাইতে পারতেন। কিন্তু তা না করে অন্যকে দোষারোপ করে বেড়াচ্ছেন। মমতার মতে, নিজেকে বাঁচাতেই এসব করছে বিজেপি।"