কলকাতা, 7 এপ্রিল : তৃণমূল-BJP-র মধ্যে গোপন বোঝাপড়া রয়েছে। গতকাল দুই দলকে আক্রমণ করে একথা বলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বামফ্রন্টের প্রচারের অভিমুখ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসু বলেন, "এবারের নির্বাচনে সারাদেশে একটা মোড় ঘোরানোর মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রে NDA সরকারের নেতৃত্বে থাকা BJP এবং BJP-র প্রাণভ্রমরা RSS-র প্রধান লক্ষ্যবস্তু হল দেশের সংবিধানের গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকে পরিবর্তন করা। সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দেশ চালাতে চায় তারা। এই নির্বাচনে BJP আবার ক্ষমতায় এলে সেই চেষ্টা যে RSS করবে, তা তারা নিজেদের মধ্যেই প্রচার করছে। দেশের সংবিধানের এই ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকে রক্ষা করার লক্ষ্যেই বামফ্রন্ট কর্মীরা প্রচার করছেন। BJP-র আমলে দেশের সাধারণ মানুষের ঐক্য, সংহতি, সম্প্রীতির মেলবন্ধন সুরক্ষিত নয়। দেশের উপরতলার এক শতাংশের স্বার্থেই নীতি নিচ্ছে BJP সরকার। দেশকে সুরক্ষিত রাখতে এবং দেশের আপামর জনগণ, শ্রমিক-কৃষক-শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের স্বার্থে, দেশের ঐক্য, সংহতি, সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে আমরা স্লোগান দিয়েছি : 'BJP হটাও, দেশ বাঁচাও'।"
বিমান বসু বলেন, "এরাজ্যে আমরা একইসঙ্গে 'তৃণমূল হটাও, রাজ্য বাঁচাও' স্লোগান দিয়েছি। BJP-কে এরাজ্যে হাত ধরে ডেকে এনেছে এই তৃণমূলই, সেকথা অনেকেই হয়তো ভুলে গেছেন। 1998 সালে তৃণমূল দল তৈরি হওয়ার পর অনেক অশুভ শক্তির সঙ্গেই এই দল সম্পর্ক তৈরি করেছিল। যার মধ্যে BJP-ও ছিল। পরে BJP-র নেতৃত্বে NDA সরকার তৈরি হলে তার অংশীদার হয় তৃণমূল। RSS-র মুখপত্র 'পাঞ্চজন্য' পত্রিকার এক অনুষ্ঠানে তাদের 'দেশপ্রেমিক' বলে সার্টিফিকেটও দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী। স্বাভাবিকভাবে যে কোনও চিন্তাশীল ব্যক্তিরই এই ধারণা থাকা ভালো, BJP-র সঙ্গে তৃণমূলের কোনও মৌলিক ফারাক নেই।"
তিনি আরও বলেন, "2011 সালের পর আমরা দেখছি, এই সরকার নানাভাবে মানুষের টুঁটি চিপে ধরছে, অধিকার হরণ করছে। তৃণমূলের অত্যাচারে এলাকার পর এলাকায় বামপন্থীরা বাড়িঘর ছাড়া হয়েছেন। লাগামহীন অত্যাচার ও খুন চলছে। সাধারণ মানুষকে এখানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার জন্য লড়াই চালাতে হচ্ছে। জীবন-জীবিকা রক্ষার জন্য লড়াই চালাতে হচ্ছে। বিশেষ করে, দ্বিতীয় তৃণমূল সরকার তৈরি হওয়ার পর আমরা দেখছি, লুটতরাজের রাজত্ব খোলাখুলি শুরু হয়ে গেছে। বেপরোয়া তোলাবাজি চলছে। গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। সেইজন্য রাজ্যে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইকে জোরদার করতেই তৃণমূলকে পরাস্ত করার বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"
পশ্চিমবাংলায় তৃণমূল-BJP-র পক্ষ থেকে একদিকে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ, অন্যদিকে গোপন বোঝাপড়া ব্যাখ্যা করে বিমান বসু বলেন, "BJP সভাপতি ও শীর্ষ নেতারা এরাজ্যে এসে এমনভাবে বলে যেন মনে হবে ওদের মধ্যে ভীষণ বিরোধ আছে। তৃণমূল এবং BJP-র মধ্যে বোঝাপড়া থাকার কারণেই গত 5 বছরে চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে কেন্দ্রের BJP সরকার কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়নি। নারদ ঘুষকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ ফরেনসিক টেস্টে প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও সংসদের এথিক্স কমিটির একটি বৈঠকও তিন বছরে ডাকেনি NDA সরকার। কেন? RSS-র শাখা তৃণমূলের আমলে প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে পশ্চিমবাংলায়। সারাদেশে BJP যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা করছে, তা এখানেও সুকৌশলে করছে। অন্যদিকে, তৃণমূলও ভিন্ন কায়দায় সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করছে। রামনবমীকে কেন্দ্র করে যে হিংসার পরিবেশ সৃষ্টি হল, এরজন্য দায়ী তৃণমূল কংগ্রেস। উভয় দলের পক্ষ থেকে মানুষকে সাম্প্রদায়িকভাবে বিভাজনের চেষ্টা হচ্ছে। সম্প্রীতি রক্ষার লক্ষ্যে আমাদের উভয়দলকেই পরাস্ত করার চেষ্টা করতে হবে।"
এরাজ্যে তৃণমূল ও BJP বিরোধী ভোট এক জায়গায় করা প্রসঙ্গে বিমান বসু বলেন, "এরাজ্যে তৃণমূল ও BJP-র বিরুদ্ধে ভোট এক জায়গায় করার লক্ষ্যে আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে চেয়েছিলাম। সেই উদ্যোগ শেষপর্যন্ত সেভাবে ফলপ্রসূ হয়নি। কিন্তু দুটো আসন, মালদা দক্ষিণ এবং বহরমপুরে বামফ্রন্ট কোনও প্রার্থী দেয়নি। এতেই বোঝা যাবে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা কী। তৃণমূল ও BJP-কে পরাস্ত করার লক্ষ্যেই এই দুই কেন্দ্রে কাজ করছেন বামফ্রন্টকর্মীরা। যেহেতু এই দুই কেন্দ্রে বামফ্রন্ট প্রার্থী নেই, BJP ও তৃণমূলকে হারাতে সক্ষম এবং এরাজ্যে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে এমন প্রার্থীর পক্ষেই তাঁরা প্রচার করছেন।"
কেন্দ্রে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, বিকল্প সরকার গড়ে তোলার যে স্লোগান বামপন্থীরা দিয়েছে, তা কতটা সফল হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসু বলেন, "সারাদেশে এখন যে পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যে এবং আমাদের রাজ্যে, তাতে BJP-বিরোধী একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সরকার তৈরির বাস্তবতা রয়েছে। নির্বাচনের পরে NDA বিরোধী একটি সরকার তৈরির বাস্তব পরিবেশ সৃষ্টি হলে তা নিশ্চয়ই গতিবেগ পাবে এবং বিকল্প একটি সরকার তৈরি হবে, সেই আশা রাখছি।