কলকাতা, 8 এপ্রিল : প্রেস্টিজের লড়াই ছিল নন্দীগ্রামে ৷ তাই অন্য কারও উপর ভরসা করতে চাননি নেত্রী ৷ নিজেই লড়ছেন নন্দীগ্রাম থেকে ৷ আর প্রিয় ভবানীপুর ছেড়ে গিয়েছেন বিশ্বস্ত শোভনদেবের হাতে ৷
ভবানীপুর বরাবর তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি ৷ নেত্রী এখানকার ঘরের মেয়ে ৷ দশ বছর আগে রাজ্যে পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা এখান থেকেই উপনির্বাচনে জিতেছিলেন ৷
2011 বিধানসভা নির্বাচন ৷ রাজ্যে তখন প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটের হাওয়া ৷ ভবানীপুরে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন সুব্রত বক্সি ৷ পেয়েছিলেন 87 হাজার 903 ভোট ৷ সিপিএমের নারায়ণ প্রসাদ জৈন পেয়েছিলেন 37 হাজার 967 টি ভোট ৷ বিজেপির ঝুলিতে ছিল 5 হাজার 78 ভোট ৷
এগারোর ভোটে ঐতিহাসিক পালাবদল ৷ চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনের অবসান ৷ তৈরি হল মা-মাটি-মানুষের সরকার ৷ মমতাকে ভবানীপুরের আসন ছেড়ে দিলেন সুব্রত বক্সি ৷ উপনির্বাচন হল ৷ ভবানীপুর থেকে মমতা পেলেন 73 হাজার 635 ভোট ৷ ধারে কাছে ঘেষতে দেননি কাউকে ৷ সিপিএমের নন্দিনী মুখোপাধ্যায় পেয়েছিলেন 19 হাজার 422 ভোট ৷
মমতা-গড় আগলে রাখতে প্রচারে কোনও খামতি রাখছেন না শোভনদেব এরপর 2016 সালের ভোট ৷ ফের একবার ভবানীপুর থেকে দাঁড়ালেন মমতা ৷ পেয়েছিলেন 65 হাজার 447 ভোট ৷ 40 হাজার 126 ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল কংগ্রেস ৷ তৃতীয় স্থানে ছিল বিজেপি ৷ পেয়েছিল 26 হাজার 291 ভোট ৷ তবে এবার মমতাগড়ে নিজেদের শক্তি অনেকটাই বাড়িয়ে নিয়েছিল বিজেপি ৷ অন্তত ইভিএমের হিসেব সেই দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে ৷
আরও পড়ুন : সেলফি তোলার চেষ্টা করতেই জয়ার ধাক্কা, ভাইরাল ভিডিয়ো
তবে এবার মমতা লড়ছেন নন্দীগ্রাম থেকে ৷ তবে অভিভাবকহীন করে ফেলে যাননি ভবানীপুরকে ৷ গুরু দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন শোভনদেবকে ৷ ভবানীপুরের উপর যেন গেরুয়া আবিরের ছিটেফোটাও এসে না পড়ে ৷
নিজেকে ভবানীপুরের ঘরের ছেলে হিসেবে তুলে ধরতে কোনও খামতি রাখছেন না রুদ্র দুঁদে শোভনদেবও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন ভবানীপুরকে ৷ নেত্রীর ভরসার মান রাখতে হবে যে ! প্রচারে তাই কোনও খামতি রাখছেন না শোভনদেব ৷ রোড শো করছেন ৷ পৌঁছে যাচ্ছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ৷
জয়ের ব্যাপারে একশো শতাংশ আত্মবিশ্বাসী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় । এই এলাকার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করবে এমনটাই বিশ্বাস তাঁর । ভবানীপুর তার ঘরের মেয়েকে সমর্থন জানাবে বলেই মনে করছেন তিনি ।
শোভনদেবের বিপরীতে বিজেপির বাজি রুদ্রনীল ৷ প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে না থাকলেও একসময় মমতার বেশ ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন রুদ্র ৷ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদও সামলেছেন ৷ এবার সেই রুদ্রনীলই বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন ৷ যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে ৷
ভবানীপুরের সবুজ দুর্গ কি আগলে রাখতে পারবেন শোভনদেব ? আরও পড়ুন :রাজীবের গড় থেকে তৃণমূলের আন্দোলনের আঁতুরঘর সিঙ্গুর রায় দেবে চতুর্থ দফায়
প্রচারে খামতি দিচ্ছেন না রুদ্রও ৷ নিজেকে ভবানীপুরের ঘরের ছেলে হিসেবে তুলে ধরতে সবটুকু উজার করে দিচ্ছেন ৷ বলছেন, এলাকার মানুষের অসন্তোষ রয়েছে । মুখ্যমন্ত্রীর নিজের কেন্দ্রে বহু সমস্যা রয়েছে । এই কেন্দ্রের বহু এলাকায় উন্নয়ন হয়নি । এলাকার ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে পারছেন না ৷ তাই সুস্থ জীবন যাত্রা ও কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনতে মানুষ বিজেপিকেই ভোট দেবে বলে মনে করছেন তিনি ৷
একদিকে বর্ষীয়ান শোভনদেব ৷ অন্যদিকে সদ্য রাজনীতিতে নাম লেখানো রুদ্রনীল ৷ অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের লড়াইয়ে ভবানীপুর শেষ পর্যন্ত কোন দিকে রায় দেবে ? রুদ্র কি পারবেন মমতাগড়ে গেরুয়া আবির ওড়াতে ? নাকি পোড় খাওয়া অভিজ্ঞতাই শেষ কথা বলবে ভবানীপুরের মাটিতে ? উত্তর মিলবে 2 মে ৷