কলকাতা, 9 মার্চ: ইডির দুঁদে গোয়েন্দারা প্রশ্ন করছেন হিন্দিতে ৷ আর অনুব্রত তার জবাব দিচ্ছেন বাংলায় ! সূত্রের দাবি, হাজার অনুরোধেও কোনও কাজ হয়নি ৷ কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের 'বীরভূমের বাহুবলী' সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, জেরার জবাব তিনি মাতৃভাষাতেই দেবেন (Anubrata Mondal ED Interrogation) ৷ ফলে, অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লি 'উড়িয়ে' নিয়ে গিয়েও স্বস্তি নেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (Enforcement Directorate) ! কারণ, তাঁর কথা কিছুই বুঝতে পারছেন না অবাঙালি গোয়েন্দারা ! অগত্য়া, বাংলা জানা দুই আধিকারিককে ঠায় বসে থাকতে হচ্ছে অনুব্রতর সঙ্গে ! তাঁদের কাজ এখন দোভাষীর !
অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে দোলের দিন কেষ্টকে দিল্লি নিয়ে গিয়েছিল ইডি ৷ তাদের দাবি, অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর পরিবারের সম্পত্তি কেনা, বেচা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে ৷ গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, অনুব্রত মণ্ডল নাকি একবার মাত্র 6 দিনের মধ্যে 6 কোটি টাকার সম্পত্তি কিনেছিলেন ! ইতিমধ্য়েই এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয় কেষ্টকে ৷ তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, সম্পত্তি কেনার এই বিপুল টাকা তিনি পেলেন কোথা থেকে ? ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ বলছে, গরুপাচারের 'প্রোটেকশন মানি' (Protection Money of WB Cattle Smuggling Scam) থেকেই নাকি এত রমরমা বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির ! কিন্তু, অনুব্রত নিজে এখনও পর্যন্ত সেকথা স্বীকার করেননি বলেই শোনা যাচ্ছে ৷ জটিলতা বাড়িয়েছে তাঁর বাংলা বলার গোঁ !
ইডি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, 18 কোটি টাকার একটি 'ফিক্সড ডিপোজিট' নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে ৷ সেই টাকার উৎস জানতে মরিয়া গোয়েন্দারা ৷ কিন্তু এ নিয়েও মুখে কুলুপ এঁটেছেন অনুব্রত মণ্ডল ৷ গোয়েন্দারা বলছেন, 2015 সাল থেকে 2018 সালের মধ্যে মণ্ডল পরিবারের সম্পত্তি বেড়েছে উল্কাপাতের গতিতে ৷ অথচ, যাঁদের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কেনা হয়েছে, তাঁদের কেউই তত টাকা রোজগার করেন না ! গোয়েন্দাদের দাবি, এসবই সম্ভব হয়েছে গরুপাচারের সৌজন্যে !
আরও পড়ুন:দিল্লিতে নেমেই বিমানবন্দর থেকে সরাসরি অনুব্রতকে নিয়ে যাওয়া হল ইডি দফতরে
গরুপাচারের কালো টাকা সাদা করতে শুধু যে সম্পত্তি কেনা হয়েছে, তাই নয় ৷ সেই টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বিভিন্ন প্রকল্পে ৷ এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির মধ্যে মলয় পিটের সংস্থাও রয়েছে ৷ আয়কর দফতরের হিসাব বলছে, 2014 সালে অনুব্রত যে পরিমাণ আয়কর দিতেন, 2021 ও 2022 সালে তা অনেকটাই বেড়েছে ৷ এর পিছনে কালো টাকা সাদা করার অসাধু ছক রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা ৷ তবে, এখন তাঁদের বড় সমস্যা হল, ভাষা ৷ হিন্দিতে করা প্রশ্নের বাংলায় উত্তর দেওয়া ! তারপর সেই উত্তরকে ফের হিন্দিতে বুঝিয়ে দেওয়া ! এসব করতেই দীর্ঘ সময় চলে যাচ্ছে ৷ এতে তদন্তের গতি শ্লথ হচ্ছে ৷ সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ মনে করছে, তদন্ত প্রক্রিয়াকে শ্লথ করতে ইচ্ছাকৃতভাবেই সমস্ত প্রশ্নের বাংলায় উত্তর দিচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডল ! প্রসঙ্গত, বাংলার মতো দিল্লিতেও অনুব্রতকে উদ্দেশ করে 'গরুচোর' স্লোগান দেওয়া হয় ৷ বৃহস্পতিবার ইডির দফতরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুব্রতকে নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাটি ঘটে ৷