অব্যাহত থাকছে পড়ুয়াদের অবস্থান-বিক্ষোভ কলকাতা, 20 জানুয়ারি:আজ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস। আর তারই মধ্যে ভারতের ছাত্র ফেডারেশন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট অনড় রইল তাঁদের দাবিতে। অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার দাবিতে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে যে রাতভর অবস্থান বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছিল তা অব্যাহত রেখেই পড়ুয়ারা সামিল হবেন প্রতিষ্ঠা দিবস পালনে (Agitation Will Continue on Founder's Day)। এমনটাই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পড়ুয়ারা।
অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে তাঁরা যে অনির্দিষ্টকালের বিক্ষোভ অবস্থানের ডাক দিয়েছিলেন তার প্রায় 60 ঘণ্টার কাছাকাছি কেটে গিয়েছে। এমনকী প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবসেও অব্যাহত রইল তাঁদের এই বিক্ষোভ। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে পারেনি। তাই সংগঠনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার ডিন অফ স্টুডেন্টসের সঙ্গে এই বিষয় দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়। পড়ুয়াদের দাবি, ডিন অফ স্টুডেন্টস তাঁদের জানিয়েছেন ছাত্র সংসদের নির্বাচন করাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমস্যা নেই। তবে যতক্ষণ না-পর্যন্ত রাজ্য সরকারের পক্ষ এই মর্মে কোনও নির্দেশিকা আসছে ততক্ষণ নির্বাচন করানো সম্ভব নয়।
এসএফআই প্রেসিডেন্সি ইউনিটের সেক্রেটারি ঋষব সাহা বলেন, "প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দিবসেও আমাদের এই বিক্ষোভ অবস্থান জারি থাকবে। আমাদের মনে হয় না যে এর ফলে ছাত্রসমাজে কোনওরকম নেতিবাচক বার্তা যাবে। কারণ বাংলার বুকে ছাত্র আন্দোলনে বরাবরই অগ্রণী ভূমিকায় ঠেকেছে আমাদের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রেসিডেন্সি মানেই আন্দোলনের মাটি লড়াইয়ের মাটি এবং অন্য কথা বলার মাটি। আমাদের প্রাক্তনীরাও ছাত্র অধিকার কায়েম রাখার জন্য বরাবর লড়াই করেছন। আমরাও ঠিক তাঁদের পথ অনুসরণ করেই আমাদের নিজেদের অধিকার এবং হকের দাবি নিয়ে এবং প্রেসিডেন্সির ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভেবে আন্দোলন চালাচ্ছি। তাই আমরা প্রেসিডেন্সির প্রতিষ্ঠা দিবসেও আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। আর এই দিবসে যে প্রাক্তনীরা ক্যাম্পাসে আসবেন তাঁদের মধ্যেও এই বার্তা পৌঁছে দেব। তাঁদের জনসমর্থন করানো চেষ্টা করব।"
তিনি আরও বেলন, "টানা তিন বছর বন্ধ রয়েছে ছাত্র সংসদের নির্বাচন। লকডাউনের পরে আবার যখন বিশ্ববিদ্যালয় খোলে তখন আমরা বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে নির্বাচন করাবার দাবি জানিয়েছি। 2019 সালে যখন শেষবার নির্বাচন হয় তখন এসএফআই ইউনিয়ন গঠন করে। এরপর দীর্ঘ তিন বছর কেটে গিয়েছে। এখনও সেই ইউনিয়নই চলছে। শেষ তিনটি ব্যাচে কোনও ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ নেই। কারণ তারা ছাত্র সংসদের প্রশাসনিক আওতার মধ্যে পড়ে না। ফলে তাদের সমস্যা সংসদের কাছে পৌঁছচ্ছে না এবং সংসদ তাদের কাছে পৌঁছতে পারছে না। তাই আমরা পুরনো ইউনিয়ন বাতিল করে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সংগঠনেই জিতুক না-কেন নতুন সংসদ তৈরি করার ওপরে বারে বারে জোর দিচ্ছি। কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা যতবার আমাদের এই দাবি জানিয়েছি তারা জানিয়েছে যে রাজ্য সরকার এখন এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না। শুধু প্রেসিডেন্সিতেই নয় বিভিন্ন কলেজের, সম্প্রতি মেডিক্যাল কলেজের এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এই একই দাবিতে সরব হয়েছেন।"
আরও পড়ুন:ছাত্র সংসদের নির্বাচন-সহ একাধিক দাবি! প্রেসিডেন্সিতে অনির্দিষ্টকালের বিক্ষোভ
পাশাপাশি তিনি আরও বলেন যে, "তৃণমূল সরকার 2011 সালে ক্ষমতায় আসার পরে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন করাতে দিতে চাইছে না। বেশিরভাগ জায়গাতেই তৃণমূলের গুন্ডা দিয়ে তোলাবাজি করানো হচ্ছে। ইউনিয়নগুলিকে দখল করে তোলাবাজির আখড়া বানিয়ে দিয়েছে। সিট বিক্রির আখড়া বানিয়ে দিয়েছে। তাই প্রতিটি ক্যাম্পাস থেকে তৃণমূল বিরোধী যে আওয়াজ উঠে আসছে সেই ভয় তারা নির্বাচন করাতে দিতে চাইছে না।" সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে ফাউন্ডেশন ডে তে তারা একাধিক কর্মসূচির মধ্যে দিতে বিক্ষোভ দেখাবে। বিক্ষোভ জমায়েত মিছিল করা হবে। পাশাপাশি এই অনুষ্ঠানে যারা আসবেন তাঁদের থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হবে।
প্রসঙ্গত 2019 সালের 14 নভেম্বর শেষবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এরপর করোনার জন্য গত দুই বছর বন্ধ ছাত্র সংসদের নির্বাচন। নির্বাচিত ইউনিয়নের বয়স এবছর তিন বছর পেরিয়েছে। আবার অনেকেই পাশ করে বেরিয়ে গিয়েছেন তাই সংগঠন চালাবার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাই নির্বাচন করবার দাবির পাশাপাশি আরও একাধিক দাবি-দাওয়া নিয়ে ক্যাম্পাসেই অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান শুরু করেছে
ভারতের ছাত্র ফেডারেশন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট।