কলকাতা, 22 অগস্ট : করোনার জেরে এ বছর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হয়নি । তবুও পরীক্ষার্থীদের থেকে পরীক্ষা বাবদ অর্থ নেওয়া হয়েছে ৷ তাহলে সেই টাকা গেল কোথায় ? কেন সেই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না ছাত্র-ছাত্রীদের ? প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যের শিক্ষক মহল । তাঁদের বক্তব্য, করোনা পরিস্থিতিতে আর্থিক চাপে রয়েছেন সকলেই । তবুও অন্যান্য বছরের মত মাধ্যমিকের জন্য 240 টাকা ও উচ্চমাধ্যমিকের জন্য 444 টাকা নেওয়া হয়েছে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে । সেই টাকা ফেরানোর দাবি উঠছে ৷
হিসেবটা এইরকম :
মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে - নবম শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন খরচ 30 টাকা ।
মাধ্যমিক পরীক্ষার ফিজ বাবদ নেওয়া হয় 160 টাকা ।
সেন্টার ফি বাবদ নেওয়া হয় 50 টাকা ।
সবমিলিয়ে একজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে মোট 240 টাকা দিতে হয়েছে ।
আরও পড়ুন :মাধ্যমিকের একাল - সেকাল
অন্যদিকে উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষেত্রে - একাদশ শ্রেণিতে নন ল্যাব রেজিস্ট্রেশন খরচ 90 টাকা । একাদশ শ্রেণিতে ল্যাব রেজিস্ট্রেশন খরচ পড়ে 100 টাকা । উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফর্মের দাম ও প্রসেসিং ফি বাবদ লাগে 45 টাকা ৷ এবং পরীক্ষা ফি 159 টাকা । সব মিলিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষায় বসতে গেলে একজন পরীক্ষার্থীকে দিতে হচ্ছে মোট 204 টাকা । চলতি বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল 10 লাখ 79 হাজার 749 জন পরীক্ষার্থীর । উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা ছিল 8 লাখ 19 হাজার 202 জনের । সেক্ষেত্রে এই বিপুল অঙ্কের টাকা কোন খাতে খরচ করা হল তা জানতে চাইছেন সকলেই ৷
এই বিষয়ে অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, "এই অতিমারির সময় যেখানে পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বিরাট একটা সংখ্যা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তখন রাইট টু এডুকেশনের আওতায় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার্থীদের থেকে ফিজের টাকা নেওয়া যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করি না । আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি যেন অবিলম্বে ফিজ স্ট্রাকচার বদল করা হয় । সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার লিখিত ও মৌখিকভাবে আবেদন জানিয়েও কোনও ফলাফল পাইনি ।"
আরও পড়ুন :উচ্চমাধ্যমিকের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ, সরব শিক্ষকরা
চন্দনবাবু আরও বলেন, "এই বছর পরীক্ষা হয়নি বলে প্রশ্নপত্রও ছাপা হয়নি ৷ জেলায় জেলায় তা বিলির জন্য গাড়ির খরচও হয়নি ৷ এছাড়াও উত্তরপত্র বিলি করা, খাতা দেখার জন্য শিক্ষকদের সাম্মানিক দেওয়া, পরীক্ষকদের ভাতা ইত্যাদি খাতে কোনও খরচই হয়নি । আগামী বছরও পরীক্ষা হবে কি না তাও বলা যাচ্ছে না । তা সত্ত্বেও পরীক্ষার ফি নেওয়া হয়েছে । এমনকি অ্যাডমিট, মার্কশিট ও সার্টিফিকেট ছাপাতে সবচেয়ে বেশি খরচ । তাই 2022 সালে পরীক্ষা না হলে কারও কাছে টাকা নেওয়া যাবে না ।"
যদিও এই বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "এই বছর পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আমরা একেবারে প্রস্তুত ছিলাম । তাই যাঁরা বলছেন প্রশ্নপত্র ছাপা হয়নি তাঁরা একদম ভুল বলছেন । প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়েছে ৷ প্রশ্নপত্র সেট করে, তা মডারেশন এবং ট্রান্সপোর্টেশনের যে বিশাল খরচ তা ব্যয় করে প্রতি জেলায় কাস্টডিয়ানদের কাছেও পাঠানো হয়েছিল । পরীক্ষা হয়নি বলে যে কোনও খরচ হয়নি তেমনটা একেবারেই নয় । যা ফিজ নেওয়া হয় তার চেয়ে বেশিই খরচ হয় । এবারেও তাই হয়েছে ।"
আরও পড়ুন :মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে একাধিক প্রস্তাব শিক্ষক মহলের
যদিও শিক্ষা সংসদের সভাপতির বক্তব্যের উল্টো সুর শোনা গেল নদিয়া জেলায় বিঘলগ্রাম নেতাজি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক ডঃ শান্তনু মণ্ডলের গলায় ৷ তিনি বলেছেন, "2020 সালে প্রশ্নপত্র ছাপা হলেও এই বছর প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়নি । জেলাগুলিতে প্রশ্নপত্রের কাস্টডিয়ান হল সেই জেলার থানা । প্রশ্নগুলি প্রথমে থানায় আসে । তারপর থানার কর্তা ফোন করে স্কুলের ইনচার্জ বা প্রধান শিক্ষককে সেই প্রশ্নগুলি গুছিয়ে ট্রাঙ্ক বন্দি করে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন । সুতরাং, প্রশ্নপত্র থানায় এলে আমরা যারা ইনচার্জ রয়েছি তাদের কাছে ফোন আসত । পাশাপাশি আমরাই প্রশ্নপত্র সেট করি । এ বছর আমাদের কোনও রকম প্রশ্নপত্র সেট করার কথা বলা হয়নি । তাছাড়া শিক্ষক-শিক্ষিকারা ভেন্ডার ছাড়াও সমস্ত কাজ সম্পন্ন করেছেন । তাই কোনও ভেন্ডারদেরও টাকা দিতে হয়নি । এক্ষেত্রে আমাদের দাবি, করোনা পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে যেমন পরীক্ষা হয়নি, তেমন যে বিপুল পরিমাণ পরীক্ষার ফিজ উঠেছে তার কিছুটা হলেও মুকুব করে ছাত্র-ছাত্রীদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক । এছাড়াও পরের বছরে যদি পরীক্ষা নেওয়া না হয়, তাহলে যেন ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে কোনওরকম ফিজও না নেওয়া হয় ।"
আরও পড়ুন :মাধ্যমিকের এনরোলমেন্ট ফর্ম বিতরণের বিজ্ঞপ্তি জারি মধ্য়শিক্ষা পর্ষদের