18 লাশে সাঙ্গ হল পঞ্চায়েত ভোট কলকাতা, 8 জুলাই:কোথাও পুকুরে ভাসল ব্যালট বক্স, তো কোথাও বুথের মধ্য়েই জ্বলতে দেখা গেল ব্য়ালট পেপার । আর এই সব কিছুকে এক কথায় ছাপিয়ে গেল একের পর এক রক্তাক্ত দেহের ছবি । বুথের সামনে মাঠের উপরে পড়ে থাকতে দেখা গেল দেহ, আবার হাসপাতালের বাইরেও সেই মৃত দেহ । বোমা, গুলি তো দেদার চললই, তার সঙ্গেই লাঠি, বাঁশ, কাটারি কোনও কিছুই বাদ গেল । শুধু রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা নয়, ভোট কর্মীরাও হামলার হাত থেকে রেহাই পেলেন না । বুথে বসে অঝোরে কাঁদতে দেখা গেল আতঙ্কিত মহিলা ভোটকর্মীদের । কেউ আবার বুথ ছেড়ে পালালেন । শনিবার এই সব খণ্ড খণ্ড হিংসার চিত্রের মধ্যে দিয়েই মিটল গণতন্ত্রের উৎসব । শেষ হল রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট ।
মনোনয়ন পর্বের শুরুর দিন থেকেই রাজ্যে যে রক্তপাত শুরু হয়েছিল, তা অব্যাহত থাকল ভোটের দিনও । সকাল সাতটা থেকে ভোট গ্রহন সরকারিভাবে শুরু হলেও, অভিযোগ আসতে থাকে শুক্রবার রাত থেকেই । একাধিক জেলা থেকে ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় স্পষ্ট হয়ে যায় রাত থাকতেই বুথে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা । প্রিসাইডিং অফিসারের থেকে জোর করে কেড়ে নেওয়া হয় ব্যালট পেপার । প্রাণ বাঁচাতে বুথ ছেড়ে হয় পালিয়ে যান ভোট কর্মীরা, নয়তো লুকিয়ে থাকেন । আক্রান্ত হয়েছেন রাজ্য পুলিশেরও একাধিক কর্মী । কারও মাথা ফেটেছে, কারও পা ভেঙেছে । রেহাই পায়নি ব্যালটও । একের পর এক জায়গায় ব্যালট পেপার পুড়িয়ে দেওয়া হল, ব্যালট বাক্সে জল ঢেলে দেওয়া হল, এর সঙ্গেই আখছাড় চলল ব্যালট বক্স ভাঙচুরের ঘটনা। তারপরও অবশ্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে এদিন নির্বিকারই দেখিয়েছে ।
এদিন ভোট শুরু হওয়ার প্রায় চার ঘণ্টা পর কমিশনের দফতরে পৌঁছন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহা । হেলেদুলে তিনি যখন কমিশনের দফতরে ঢুকছেন, বিরোধীদের অভিযোগ তখন সাত জনের মৃত্যু ঘটে গিয়েছে । উত্তরের কোচবিহার, মালদা, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর, নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা, এদিনের হিংসার ছবিটা ছিল সব জায়গাতেই এক । যদিও কমিশন জানিয়েছে, তিন জনের মৃত্যুর খবর তাদের কাছে আছে । অশান্তির খবরে খোদ রাজ্য নির্বাচন কমিশনার দাবি করেন, কখন কে কোথায় গুলি চালাবে, তা আগাম বলা সম্ভব নয় । এমন সাফাই শুনে বিস্মিত রাজনৈতিক মহল । তবে এদিন অবশ্য ভোটে ঝামেলার অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন রাজীবা সিনহা । কমিশনে প্রায় এক হাজার 300 অভিযোগ বিকাল পর্যন্ত জমা পড়েছে বলেও জানান তিনি । অন্যদিকে, রাতে কমিশন সূত্রের খবর, আট জনের মৃত্যুর খবর তাদের কাছে এসে পৌঁছেছে ।
আরও পড়ুন: কেমন গেল নির্বাচন? জানতে চেয়ে সুকান্তকে ফোন নাড্ডা-শাহের
অন্যদিকে, বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে 66.28 শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এদিন অবশ্য রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের তরফে যখন বার বার দাবি করা হয়েছে তারা কার্যত 'ভিক্টিম কার্ড' হাতে নিয়ে নেমেছে, তখন অন্যদিকে রাতে কমিশনের দফতরে গিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তবে শেষ বেলায় ফের বাহিনী নিয়ে কমিশনের সঙ্গে রীতিমতো তরজায় জড়াতেও দেখা গেল কেন্দ্রীয় বাহিনীর নোডাল অফিসারকে । ভোটে রাজ্যে এসেছিল ৬৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী । তা সত্ত্বেও সকাল থেকেই বিরোধীদের পাশাপাশি ভোটকর্মীদেরও দাবি ছিল দেখাই যায়নি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে । কার্যত উবে গিয়েছিলেন তারা । আর সেই বক্তব্যকেই বিকালে কার্যত মান্যতা দিলেন বাহিনীর নোডাল অফিসার এস বুধোকোটি । কমিশনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তিনি সাফ জানান, কেন্দ্রীয় বাহিনী জন্য চরম অব্যবস্থা দেখা গিয়েছে রাজ্য জুড়ে । সব মিলিয়ে নির্বিঘ্নে মিটল না পঞ্চায়েত ভোট ।