জলপাইগুড়ি, 6 অক্টোবর: দুর্গাপ্রতিমার বিসর্জন (Durga Idol Immersion) চলাকালীন জলপাইগুড়ির মাল নদীর ঘাটে হড়পা বানে আটজনের মৃত্যুর ঘটনায় (Jalpaiguri Immersion Accident) স্পষ্টতই দায় এড়াল পুলিশ প্রশাসন ৷ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত ৷ তাঁর সাফ কথা, তাঁদের কাছে গত 20 বছরের রেকর্ড রয়েছে ৷ কখনও এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি ৷ কাজেই যা হয়েছে, সেটা একেবারেই আকস্মিক ৷ কিন্তু, প্রশ্ন হল, দুর্ঘটনা কি আকস্মিক ঘটবে, না আগে থেকে বলে-কয়ে আসবে ? তার সদুত্তর পুলিশ সুপার দিতে পারেননি ৷ অন্যদিকে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে ধরা পড়েছে প্রশাসনিক গাফিলতি ৷
বুধবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মাল নদীর বিসর্জন ঘাটে হড়পা বান আসে ৷ সেই প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার জানান, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে দুর্যোগের কোনও আগাম আভাস ছিল না ৷ এবং ঘটনাস্থলে যথেষ্ট পরিমাণে পুলিশ, পৌরসভা ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন ৷ যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে পুলিশ সুপারের এই দাবি মেলেনি ৷
আরও পড়ুন:জলপাইগুড়ির ঘটনায় শোকপ্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর, দুর্ঘটনার দায় কার ? উঠছে প্রশ্ন
ঘটনার সময় নদীর ঘাটে প্রায় হাজার খানের মানুষ জমায়েত করেছিল ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হড়পা বান কখনও পূর্বাভাস দিয়ে আসে না ৷ পার্বত্য অঞ্চলে লাগাতার বৃষ্টি হলে যেকোনও সময় নদীতে হড়পা বান আসতে পারে ৷ এটা প্রশাসনের অজানা নয় ৷ তাহলে কেন এত লোককে ঘাটের কাছাকাছি আসতে দেওয়া হল ? কেনই বা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কাছে উদ্ধারকাজে নামার যথাযথ পরিকাঠামো ছিল না ? পুলিশ সুপারের কাছে এসব প্রশ্নেরও কোনও জবাব মেলেনি ৷
দেবর্ষি জানিয়েছেন, হড়পা বানে 27-28 জন ভেসে গিয়েছিলেন ৷ তাঁদের মধ্যে প্রায় 20 জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় ৷ তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের ৷ দুর্গতদের মধ্যে 13 জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয় ৷ এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে ৷ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কারও নিখোঁজ থাকার খবর পুলিশের কাছে আসেনি ৷ তাই পুলিশের অনুমান, এই ঘটনায় আর কারও প্রাণহানির সম্ভাবনা নেই ৷
দুর্ঘটনার দায় এড়ালেন পুলিশ সুপার ৷ তবে, পুলিশ সুপার ঘটনায় দায় ঝেড়ে ফেললেও অন্য কথা শোনা গিয়েছে সঞ্জয় পোদ্দার নামে এক ব্যক্তির মুখে ৷ মালবাজারের বাসিন্দা সঞ্জয় জানান, বিসর্জনের সময় নদীর ঘাটে অগুন্তি মানুষের ভিড় ছিল ৷ পুলিশ, পৌরসভা বা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর উপস্থিতি তেমন করে তাঁর নজরে আসেনি ৷ তিনি বলেন, হঠাৎই নদীতে জল বাড়তে শুরু করে ৷ মাইকে সেকথা ঘোষণাও করা হয় ৷ সকলকে নিরাপদ দূরত্বে সরে আসতে বলা হয় ৷ কিন্তু, এত মানুষের পক্ষে এত দ্রুত পাড়ে উঠে আসা সম্ভব ছিল না৷
এই দুর্ঘটনায় দেবর্ষি তাঁর বোনকে হারিয়েছেন ৷ মৃত তরুণীর নাম সুস্মিতা পোদ্দার ৷ বয়স 23 বছর ৷ দেবর্ষি জানান, জলের তোড়ে তাঁর 7 বছরেরে মেয়ে ভেসে গিয়েছিল ৷ সেই সময়েই ভাইঝিকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন সুস্মিতা ৷ প্রায় 500 মিটার দূরে ওই বালিকাকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও সুস্মিতাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি ৷ দেবর্ষি মনে করেন, হড়পা বান বলে-কয়ে আসে না, এটা ঠিক ৷ কিন্তু, যেখানে এত মানুষের ভিড় জমবে, সেখানে প্রশাসনের নিরাপত্তা অনেক বেশি আঁটোসাটো হওয়া উচিত ছিল ৷ কিন্তু, বুধবার তেমন ব্যবস্থাপনা চোখে পড়েনি ৷ প্রশাসনিক গাফিলতির এই অভিযোগ ঘটনাস্থলে উপস্থিত আরও অনেকের মুখেই শোনা গিয়েছে ৷ অনেকেই বলছেন, কিছু দিন আগেও ওই একই জায়গায় জলের তোড়ে গাড়ি ভেসে গিয়ে আটকে গিয়েছিল ৷ তারপরও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের ৷