জলপাইগুড়ি, 2 নভেম্বর: দেশের হয়ে সোনা জেতার পর এক লহমায় গোটা দেশ চিনে গিয়েছিল তাঁকে । কিন্তু তারপর থেকে নিজের এলাকায় ঘন ঘন ঝুট-ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার জন্যই পরিচিত হচ্ছে হেপ্টাথেলন খেলোয়াড় স্বপ্না বর্মনের পরিবার । এবার খোদ স্বপ্নার বিরুদ্ধেই ফুঁসে উঠলেন গ্রামবাসীরা । মিটমাট করতে সকলকে ডেকে পাঠিয়ে, তিনি নিজেই বেপাত্তা হয়ে যান এবং থানার আইসি এলেও স্বপ্না না-থাকায় আলোচনা হয়নি ।
জলপাইগুড়ির ঘোষপাড়া গ্রামে সপরিবারে বাস স্বপ্নার । পাড়ার ক্লাবের কালীপুজো ঘিরে স্বপ্নার পরিবারের সঙ্গে বিবাদ গ্রামবাসীদের । পাড়ায় কালীপুজো করতে দেবেন না বলে, স্বপ্নার দাদা অসিত বর্মন হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ সকলের । এছাড়াও ভাঙচুর, মারধর-সহ একাধিক অভিযোগ অসিতের বিরুদ্ধে ৷ সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে থানায় যান গ্রামের বাসিন্দারা ৷ বারবার এই ধরনের ঝামেলায় অতিষ্ঠ হয়ে শেষ পর্যন্ত স্বপ্না নিজেই কোতোয়ালি থানার দ্বারস্থ হন । পাড়ার সকলকে নিয়ে আলোচনা করে ঝামেলা মিটিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা জানান । থানার আইসি অর্ঘ্য ঘোষ তাতে মধ্যস্থতা করবেন বলে ঠিক হয় ।
আরও পড়ুন:Cannabis Recovered : সংশোধনাগারে জেলকর্মীর কাছ থেকে উদ্ধার গাঁজা
সেইমতো মঙ্গলবার সকালে ক্লাবের সামনে জড়ো হন সকলে । কিন্তু অনেকক্ষণ কেটে গেলেও, স্বপ্না বা তাঁর পরিবারের কেউ সেখানে হাজির হননি বলে অভিযোগ । স্থানীয়দের দাবি, স্বপ্নাদের বাড়ি থেকে কেউ না আসায় থানার আইসি তাঁদের বাড়িতে যান ৷ কিন্তু আলোচনা করতে হলে তাঁদের নতুন বাড়িতে আসতে হবে, তাঁরা কোথাও যাবেন না বলে আইসিকে জানিয়ে দেয় স্বপ্নার পরিবার । গোটা ঘটনায় স্বপ্নার উপরও এবার চটেছেন গ্রামের মানুষ ।
যদিও গ্রামবাসীদের উপরই গোটা ঘটনার দায় চাপিয়েছেন স্বপ্না । তাঁর কথায়, ‘‘দাদাকে নিয়ে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য ডেকেছিলাম সকলকে ৷ কিন্তু কেউ আমার নতুন বাড়িতে আসতে রাজি হননি ৷ তাই আলোচনা হয়নি ৷ কিন্তু এই গ্রামেই থাকব আমি ৷ আমাদের বাড়ির সামনে পুজো হয় ৷ আগে ঠাকুরকে মালা দিতাম ৷ 2019-এর পর থেকে দিই না ৷ এখনও সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে চাই কোনও ঝামেলা হোক চাই না আমি ৷’’ স্বপ্নার দাদা অসিত বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনা হয়েছে ৷ সব সময় আমার নামে দোষ দেওয়া হয় ৷ তার জন্য বোনের সুমানও নষ্ট হচ্ছে ৷ আমরা সকলের সঙ্গে মিলেমিশেই থাকতে চাই ৷’’
আরও পড়ুন:Jalpaiguri : দুই সন্তানকে নিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিল মা, পলাতক স্বামী
দেশের হয়ে স্বপ্না সোনা জিতে ফেরার পর থেকেই অহরহ তাঁর পরিবারের সঙ্গে ঝামেলা বেধেছে গ্রামের মানুষের । 2019 সালে কালীপুজোয় জোরে গান বাজানো নিয়ে স্বপ্নার দাদা অসিতের সঙ্গে ঝামেলা বাঁধে পাড়া প্রতিবেশিদের । সেই সময় নিতাই বর্মন নামের 50 বছর বয়সি এক ব্যক্তিকে অসিত বেধড়ক মারধর করেন বলেও অভিযোগ ওঠে । চাপের মুখে পড়ে ওই ব্যক্তির চিকিৎসার খরচ দিতে হয় স্বপ্নার পরিবারকে । প্যান্ডেলে ঢুকে অসিত ভাঙচুরও করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে । স্বপ্নার পরিবার যদিও তা অস্বীকার করে ।
এর পর গত বছর স্বপ্নার বাড়ি থেকে বেআইনি ভাবে মজুত করে রাখা মূল্যবান কাঠ উদ্ধার করে বন দফতর । সেই নিয়েও জল অনেক দূর গড়ায় । তিস্তায় ভেসে আসা কাঠ কিনেছিলেন বলে জানান স্বপ্নার পরিবার । কিন্তু বন দফতরকে রসিদ দেখাতে পারেননি তাঁরা । মাস দুয়েক আগেই মত্ত অবস্থায় এলাকার এক দোকানদারকে মারধর এবং দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে অসিতের বিরুদ্ধে । এই ঘটনা বিহিত চেয়ে জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি রাজ্য সড়কও অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা । মেয়ে বিখ্যাত হওয়ার পর থেকেই স্বপ্নার পরিবার গ্রামে হম্বিতম্বি চালায় বলে অভিযোগ করেন তাঁরা । এবার তাঁদের রোষ গিয়ে পড়েছে সরাসরি স্বপ্নার উপরেই ।