পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

নিম্নমানের খাবার ! সরব আক্রান্তরা

রানিনগরের পঞ্চায়েত ট্রেনিং সেন্টারের সকালের খাবার লুচি-তরকারি। বিশ্ববাংলা ক্রীড়াঙ্গন কোভিড হাসপাতালে দেওয়া হচ্ছে পাউরুটি, ডিম, কলা। তবে খুবই অযন্তে খবরের কাজ ও পলিথিনের প্যাকেটে মোড়া। সোশাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল জলপাইগুড়ির কোভিড হাসপাতালের এই সব ছবি। হাসপাতালে চরম অবস্থায় ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বিক্ষোভে সামিল হন কোরানায় আক্রান্তরা। আর এই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনার মুখে পড়ে জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।

covid diet special
covid diet special

By

Published : Jul 31, 2020, 2:27 PM IST

জলপাইগুড়ি, 30 জুলাই : বর্তমানে বিশ্বজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কোরোনা ভাইরাস। ইতিমধ্যে বিশ্বে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে 16 মিলিয়নের গণ্ডি। এই ভাইরাসকে রুখতে চেষ্টা করেছে চলেছেন গবেষকরা। যতদিন না পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোনও টিকা বা ওষুধ না বেরোয় ততদিন এই রোগকে জবাব দিতে পারে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই। আর এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে একমাত্র উপায় সুষম খাদ্যের সেবন। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইডেট, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্য। সেই মতো হাসপাতালগুলিতে কোরোনা আক্রান্তদেরও সুষম খাবার পরিবেশনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সম্প্রতি জলপাইগুড়ির সরকারি কোয়ারানটিন সেন্টারে নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন কোরোনায় আক্রান্তরা। তাঁদের অভিযোগ, সকালের খাবারে দেওয়া হচ্ছে লুচি, তরকারি। যা শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। পাশাপাশি কোয়ারানটিন সেন্টারে দেখা নেই চিকিৎসকদেরও।

সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় রানিনগরের পঞ্চায়েত ট্রেনিং সেন্টারের একটি ছবি ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, কোরোনা আক্রান্তদের সকালের খাবারে লুচি আর তরকারি দেওয়া হচ্ছে। এবং ভিডিয়োতে কোডিভ আক্রান্তরা হাসপাতালের অব্যবস্থা ও অপরিচ্ছন্নতার অভাবের অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে বিশ্ববাংলা ক্রীড়াঙ্গন কোভিড হাসপাতালের রোগীদের সকালের খাবারে পাউরুটি, কলা ও ডিম দেওয়া হলেও, তা পরিবেশন করা হচ্ছে খবরের কাগজ ও পলিথিনে মুড়ে। এই ছবি ভাইরাল হতেই সরগরম হয়ে ওঠে বিভিন্ন মহল। ইতিমধ্যে সোশাল মিডিয়ায় এই সব ছবি পোস্ট করে সরব হয়েছেন, CPI(M) এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং সাংসদ জন বারলা। রোগীদের দাবি, "আমাদের অনেক কিছু খাবার দিতে হবে না। কিন্তু যা দিচ্ছে সেটার মান যাতে ভালো হয়। নিম্নমানের খাবার খেলে আমরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ব।" কারও কারও মতে এর থেকে বাড়িতে থাকতেই বেশি ভালো থাকতেন।

রাজ্যজুড়ে সরকারি কোয়ারানটিন সেন্টার ও কোভিড হাসপাতালগুলির অব্যবস্থা নিয়ে বেশকিছুদিন ধরেই অভিযোগ উঠছে। তবে এই ভাবে ভিডিয়ো তুলে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করায় সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এবিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিক জেলা প্রশাসনের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছেন। তিনি জানান, "আমরা খাবার সরবরাহ করি না। খাবার সরবরাহ করে জেলাশাসকের দপ্তর। " এদিকে কোভিড হাসপাতালের ছবি কীভাবে বাইরে গেল তা নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে স্বাস্থ্য দপ্তর।

কোরোনা আক্রান্তদের প্রোটিন জাতীয় খাবার দেবার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে লুচি আর তরকারি এমনই অভিযোগ। কোরোনা আক্রান্তদের ডাক্তার দেখতে আসছে না বলেও অভিযোগ। ইতিমধ্যেই CPI(M) এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ও সাংসদ জন বারলা সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন। কোভিড হাসপাতালের দুরাবস্থার চিত্র ভিডিয়ো তুলে সোশাল মিডিয়ায় তুলে ধরা হচ্ছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে একসঙ্গে অনেক রোগী চলে আসার ফলে এমন সমস্যা হয়েছে।এদিকে কোভিড হাসপাতালের ছবি কি করে বাইরে আসছে তা নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। পাশাপাশি জেলাজুড়ে বেড়েই চলেছে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা তাই আক্রান্তদের রাখতে হিমসিম অবস্থা জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের।

বর্তমানে জেলায় কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে 12,00-র গণ্ডি। দিন দিন কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রানিনগর পঞ্চায়েত ট্রেনিং সেন্টার ও মালবাজারের টিয়াবনে কোরোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তবে সেখানেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।

জলপাইগুড়িতে নিম্নমানের খাবার দেওয়ায় সরব কোরোনা আক্রান্তরা

এবিষয়ে উত্তরবঙ্গের OSD ডাঃ সুশান্ত রায় বলেন, "কোভিড হাসপাতালের ছবি বাইরে বের হচ্ছে এটা অপরাধ। সূর্যকান্ত মিশ্র একজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। তাঁকে অনুরোধ, তিনি যাতে একবার এসে দেখে যান। আমি কোনও ভিডিয়ো দেখিনি। ভিডিয়ো বানানো হতে পারে। যারা ছবি দিচ্ছে আমরা চাইলে ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারি। আমরা আগে চেষ্টা করেছিলাম কোভিড হাসপাতালে মোবাইল নিয়ে ঢোকা বন্ধ করতে। কিন্তু কয়েকজন আক্রান্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের ওপর তেড়ে এসেছিল। আমরা এরপর থেকে আর কোভিড হাসপাতালের ভেতরে মোবাইল নিয়ে ঢুকতে দেব না। তাতে কেউ থাকলে থাকবে, না থাকতে চাইলে-না থাকবে।" সুশান্তবাবু আরও জানান, "আমি এই বিষয় নিয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলব। এখানে সব সময় ডাক্তার আছে। এরপর আমরাও ডাক্তারদের ছবি তুলে দেখাব। খাওয়া-দাওয়ার কোন সমস্যা নেই এখানে।"

জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের সুপার ডাঃ গয়ারাম নস্কর বলেন, "একসঙ্গে অনেক রোগী চলে আসায় খাবারের একটা সমস্যা হচ্ছে। তবে অনেকেই বাড়ির মতো খাবার চাইছে। সেটা দেওয়া সম্ভব নয়। সকালে ডিম, দুধ, কলা, পাউরুটি দেবার কথা। কিন্তু লুচি তরকারি দেওয়া হচ্ছে এটা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে সেটা জেলাশাসকের দপ্তর থেকে দেওয়া হচ্ছে। আমরা বলে দেব, যাতে সরকারি নির্দেশিকা মতো খাবার দেওয়া হয়। আমাদের কোভিড হাসপাতালে রোগী ভরে গেছে। আমরা তাই রানীনগরে এবং টিয়াবনে কোভিড রোগীদের পাঠাচ্ছি। আমরা এরপর বিশ্ববাংলা ক্রীড়াঙ্গনের সারি হাসপাতালকে কোভিডে রূপান্তরিত করব। তাতে করে সেখানে ৩০০ জন রোগীকে রাখা যাবে। অন্যদিকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সামনে রোগীর আত্মীয়দের থাকার জায়গাটিকেও সারি হাসপাতালে পরিনত করব।"

যদিও কোভিড হাসপাতালের অব্যবস্থার ছবি ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। 25 জুলাই কোভিড হাসপাতালের চুড়ান্ত অব্যবস্থার সমস্যার সমাধান করতে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসল জলপাইগুড়ি রোগী কল্যাণ সমিতি। খাবারের নমুনা রাখা ও বেড বাড়ানো সহ একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details