হাওড়া, 24 ফেব্রুয়ারি : তবে কি পুলিশ মারেনি আনিশকে (SIT probe over Anish Khan Death)? পুলিশকে দেখে পালানোর সময় রেইন পাইপ থেকে হাত ফস্কে মৃত্যু হয় তাঁর ? এই তথ্যই উঠে আসছে বিশেষ তদন্তকারী দলের তদন্তে (Anish Khan fells down and died)।
ধৃত হোমগার্ড কাশীনাথ বেড়া ও কনস্টেবল প্রীতম ভট্টাচার্যকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে । তাঁদের জেরা করে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য । ওই দুই পুলিশকর্মীর জবানবন্দি অনুযায়ী ঘটনার দিন, অর্থাৎ গত শুক্রবার রাতে আনিশের বাড়ির ছাদে উঠেছিলেন হোমগার্ড কাশীনাথ বেরা ও সিভিক ভলান্টিয়ার প্রীতম ভট্রাচার্য । পুলিশি জেরাতে তাঁরা তা স্বীকারও করেছেন ।
সিট (SIT investigation) সূত্রে জানা গিয়েছে, আমতার ওই বাড়িতে অন্য যে পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়াররা গিয়েছিলেন, তাঁদেরকেও চিহ্নিত করা গিয়েছে । সিটের তদন্তে দেওয়া হয়েছে ঘটনা সম্বন্ধে ইঙ্গিতপূর্ণ তথ্য । সিটের তদন্ত অনুযায়ী ওই পুলিশকর্মীরা বাড়ির তিন তলার ছাদে ওঠার পর তাঁদের দেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান আনিশ । পালানোর জন্য রেইন পাইপ ধরে নীচে নামতে গিয়ে মাটিতে পড়ে যান আনিশ ।
তবে সে মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরে তাঁকে তুলে হাসপাতালে কেন নিয়ে যাওয়া হল না এবং আগ্নেয়াস্ত্র ধরে পুলিশের পোশাকে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ অফিসারকে স্যার সম্বোধন করে 'স্যার কাজ হয়ে গিয়েছে' এই মন্তব্য কেন করা হল, এখনও তার কোনও সদুত্তর নেই সিটের কর্তাদের কাছে । সিট সূত্রে খবর, এই প্রশ্নের উত্তর পেতে জেরা করা হচ্ছে ধৃতদের ।
আরও পড়ুন: Anish Khan Death Case : আনিশকাণ্ডে নয়া মোড়, এবার সিবিআই তদন্তের দাবি ধৃত হোমগার্ডের স্ত্রীর
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আপত্তিকর পোস্ট করেছিলেন আনিশ । সেই পোস্ট কেন এবং কী জন্য করা হয়েছে, শুক্রবারই তার খোঁজখবর করতে বলা হয় আমতা থানাকে । উচ্চ পদস্থ দুই কর্তার থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ পেয়ে থানার ওসি ফোন করেন টহলদারিতে থাকা আরটি ভ্যানের কর্তব্যরত অফিসারকে । ওই গাড়িতে ছিলেন এক এএসআই-ও । ছিলেন হোমগার্ড এবং কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার । তবে এখানে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট সংক্রান্ত নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও কোন আইনের সাহায্যে তাঁর বাড়িতে যেতে পারে পুলিশ ? যদিও ধৃতদের দাবি, আনিশের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে থানায় তুলে আনার নির্দেশ এসেছিল ওই টেলিফোনে ।
সিট সূত্রে খবর, কোনওরকম নোটিস ছাড়া কীভাবে তাঁরা ওই রাতে আনিশের বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিলেন, তারও কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি ধৃতরা । বরং সত্য চেপে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি, পুলিশকর্মী, হোমগার্ড ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে । যদিও এই ঘটনায় তিনটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, ওয়ারেন্টে কীভাবে পুলিশ পৌঁছল ও বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করল ? যিনি আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাঁর বাবাকে দাঁড় করিয়ে রাখলেন, তাঁকে কে নির্দেশ দিল ঘটনাস্থলে বিনা প্ররোচনাতে আগ্নেয়াস্ত্র বের করতে । সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কোন আইনের জোরে উচ্চ পদস্থ দুই পুলিশ কর্তার ফোনে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁর বাড়ি পৌঁছল । এগুলোর উত্তর এখনও অধরা ।
আরও পড়ুন :আনিশ-কাণ্ডে দু’জন পুলিশ কর্মী গ্রেফতার, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
যদিও সিট সূত্রের খবর, ওই আরটি গাড়িতে চেপেই টহলদারি পুলিশের দলটি হাজির হয় আনিশের বাড়িতে । আরটি গাড়ি কোন এলাকায় টহলদারিতে যাচ্ছে, তার জিডি এন্ট্রি করতে হয় থানায় । সেই এন্ট্রি দেখেই সংশ্লিষ্ট গাড়িটির ‘লোকেশন’ নির্ধারণ করেছেন তদন্তকারীরা । তদন্তে উঠে এসেছে, হোমগার্ড কাশীনাথ ও সিভিক ভলান্টিয়ার প্রীতম সোজা আনিশদের বাড়ির উপরে উঠে যান । সঙ্গে ছিলেন আরও দুই সিভিক । বাকিরা বাইরে অপেক্ষা করছিলেন । একতলায় দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ অফিসারের সঙ্গে আনিশের বাবার বাদানুবাদ হচ্ছিল । ওই চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় ছাত্রনেতার । তিনি দ্রুত ছাদের নির্মীয়মাণ ঘরে উঠে যান । এরপর সিভিক ও হোমগার্ড তাঁকে ধাওয়া করেন । সিট সূত্রের খবর, তাঁদের হাত থেকে বাঁচতেই রেইন পাইপ বেয়ে নামতে যান আনিশ । তখনই হাত ফস্কে নীচে পড়ে যান তিনি । তাতেই তাঁর মাথায় আঘাত লাগে । শরীরের নীচের অংশ ভেঙে যায় ।