আবাদা(হাওড়া), 25 সেপ্টেম্বর: আজ মহালয়া । দেবীর বোধন হতে আর হাতে গোনা কয়েকটা দিনের অপেক্ষা । মা আসছেন এই ধরাধামে । আকাশে বাতাসে পুজো পুজো রব ৷ কাশ ফুলের সুবাস মেখে রয়েছে প্রকৃতি । নীল আকাশে ভাসছে সাদা তুলোর মতো মেঘের ভেলা । আর এই আশ্বিন মাসে দেবী দুর্গার আরাধনায় মূল উপকরণ হিসাবে লাগে 108টি পদ্ম ।
দুর্গাপুজোর মধ্যে সবচেয়ে মহার্ঘ দশ মহাবিদ্যার অন্যতম রূপ দেবী চণ্ডির । অষ্টমীর সন্ধি পুজোতে এই 108 পদ্মই দেবী চণ্ডির মূল উপকরণ । তবে এ বছর একদিকে এই ফুলের ফলন যেমন কম ৷ অন্যদিকে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় ফুলের মানও ভালো থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা ৷
বৃষ্টি না হওয়ায় ফুলের মানও ভালো থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় আবাদা থেকে জকপুর পর্যন্ত রেলের খাদেই মূলত ভালো মানের পদ্ম পাওয়া যায় । কিন্তু এ বছর তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় সেই পদ্মের মানের উৎকৃষ্টতা সেভাবে নেই । কারণ বৃষ্টির ফলে জলস্তর যত বাড়বে ততই পদ্মফুলের মান বাড়বে । কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা না হওয়ায় মাথায় হাত পদ্মচাষিদের (lotus farmer facing losses due to insufficient rain) ।
আবহাওয়ার খামখেয়ালিতে সমস্যায় পদ্মচাষিরা দেবী এবারে গজে আগমন অর্থাৎ শষ্য শ্যামলা হবে ধরিত্রী । তবে এ বছরেই পদ্মের ফলন নিয়ে যথেষ্টই চিন্তিত আবাদা এলাকার পদ্ম চাষি প্রশান্ত মান্না । তিনি বলেন, "এবারে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার দরুন পদ্মের ফলনে সেই গুনমান নেই । গত বছরে লাভের মুখ দেখলেও এ বছরে সেই গুড়ে বালি । এখানে প্রায় 100-150 জন চাষি এই পেশাতে যুক্ত রয়েছেন । তাঁরা পার্শ্ববর্তী কোলাঘাটের কাছে বাজারে পদ্ম বেঁচে দিয়ে আসেন । সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গাতে তা ছড়িয়ে পড়ে ।"
আবাদা থেকে জকপুর পর্যন্ত রেলের খাদেই মূলত ভালো মানের পদ্ম পাওয়া যায় আরও পড়ুন:কসবার আরকে চ্যাটার্জি অধিবাসীবৃন্দের এবারের থিম 'মোরা এবার মোড়াতে'
তবে চাষিদের দাবি, পদ্মের ফলনে সরকারি সাহায্য তাঁরা পান না । কিন্তু এ বছরে কৃষি দফতর থেকে আধিকারিকরা এসেছিলেন এবং তাঁদের পাশে থাকার কথা দিয়েছেন । যদিও আর এক চাষি বাপ্পা মাইতি বলেন, " পদ্ম চাষের সমস্যা অনেক। এখানে খালের কোনও নিকাশি ব্যবস্থা নেই যে তার জল দিয়ে জলস্তর বাড়বে । তার উপরে এই বছরে বৃষ্টিও কম হয়েছে ৷ তাই উৎকৃষ্ট মানের পদ্ম পাওয়া খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে ।"
চাষিদের আরও দাবি, জলাধার থেকে প্রত্যহ 100 জন চাষি পদ্ম তোলেন । 50 থেকে শুরু করে 60টির মতো পদ্ম পান তাঁরা । বাজারে এখন আড়াই থেকে তিন টাকা পদ্মের দাম যাচ্ছে । অনেকসময় বিক্রি না হওয়ায় পদ্ম ফেলে দিয়েও আসতে হয় তাঁদের । এখানকার উৎকৃষ্ট পদ্ম দিল্লি, মুম্বই-সহ অনেক জায়গাতে যায় । সরাসরি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা নিজেরাই পাঠানোর ব্যবস্থা করেন ।
আরও পড়ুন:ভিনজেলায় পাড়ি দিচ্ছে জলপাইগুড়ির মিনি দুর্গা, দেড় ফুট বাই দু'ফুটে সপরিবারে বিরাজমান উমা
তবে দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে পদ্মের যে দাম হওয়া উচিৎ বাজারে এখন সেই তা নেই বলেই আক্ষেপ করে জানান চাষিরা । জলের অপ্রচুর্য থাকার কারণে একদিকে যেমন মার খাচ্ছে ভালো পদ্মের ফলন, অপরদিকে ততটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে পদ্ম চাষের সঙ্গে যুক্ত থাকা চাষিদের অর্থ উপার্জন । পদ্মে দেবীর অকালবোধনে ঝলমলে হয়ে উঠবে পুজো মণ্ডপ ৷ দেবীদুর্গার কৃপাতে কবে তাঁদের ঘরে সৌভাগ্য ও অর্থের উদয় হবে, এখন তার দিকেই তাকিয়ে আছেন আবাদা এলাকার শতাধিক পদ্ম চাষিরা (Durga Puja 2022) ।