কলকাতা, 24 জুলাই : বাবার দাবিদার তিন হলেও আসল বাবা কে? এই প্রশ্ন জেরবার হয়েছিল বাঘাযতীনের একটি বেসরকারি হাসপাতাল ৷ অবশেষে মায়ের বয়ানে কিনারা হল শিশু কন্যার বাবার পরিচয় ৷
ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার ৷ প্রসব বেদনা নিয়ে ওই হাসপাতালে স্বপ্না মৈত্রকে ভরতি করান দীপঙ্কর পাল নামে এক যুবক । তিনি নিজেকে স্বপ্নার স্বামী হিসেবে পরিচয় দেন । সেই সময় স্বপ্নার সঙ্গে এক মহিলাও ছিলেন । তিনি নিজেকে স্বপ্নার মা বলে পরিচয় দেন । গত রবিবার সুস্থ ও স্বাভাবিক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন স্বপ্না । স্বাভাবিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সদ্যোজাতর বাবা হিসেবে দীপঙ্কর পালের নামই নথিভুক্ত করে ।
গোলবাধে তারপর থেকেই ৷ রবিবার বিকেলে এক যুবক স্বপ্না মৈত্রকে দেখতে আসেন । হাসপাতাল কর্মীরা তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে স্বপ্নার স্বামী বলে পরিচয় দেন । এবং দাবি করেন স্বপ্নার সন্তানের বাবা তিনি । তাঁর কথা শুনে হকচকিয়ে যান হাসপাতাল কর্মীরা । তাঁকে স্বপ্নার সঙ্গে দেখা করতে না দিয়ে পুলিশে খবর দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । পুলিশের এসে ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করে । তাঁর নাম হর্ষ ক্ষেত্রী । বাড়ি নিউটাউন । এরপর পুলিশ দীপঙ্করকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে । দীপঙ্কর স্বপ্না মৈত্রর সঙ্গে বিয়ের শংসাপত্র দেখান পুলিশকে । এদিকে, হর্ষ ক্ষেত্রী পুলিশের সামনে দাবি করেন তিনিও বিয়ের শংসাপত্র দেখাতে পারবেন ।
রহস্য আরও ঘনীভূত হয় তৃতীয় যুবকের উপস্থিতিতে । সোমবার বিকেলে প্রদীপ রায় নামে এক যুবক ওই হাসপাতালে এসে স্বপ্না মৈত্রর সন্তানের পিতৃত্ব দাবি করেন । সঙ্গে সঙ্গে থানায় খবর দেওয়া হয় । পুলিশ এসে প্রদীপ রায় নামে ওই যুবককে জেরা করে । ঘটনার রহস্য বাড়ায় স্বপ্নার নীরবতা । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিজ়ারিয়ান বেবি হয়েছে তাঁর । তাই শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে তাঁকে বেশি চাপ দিতে চাইছেন না চিকিৎসকরা । হাসপাতালের সেবিকারা স্বপ্নার কাছে তাঁর সন্তানের পিতৃ-পরিচয় জানতে চান । তবে, তাঁর বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে বলে জানান তাঁরা । অবশেষে গতকাল পুলিশের কাছে স্বপ্না স্বীকার করে , তাঁর সন্তানের পিতা হর্ষ ক্ষেত্রী ৷ নানা পারিবারিক সমস্যার কারণে তিনি হর্ষের সঙ্গে থাকছিলেন না । তাই এই বিষয়গুলির সঙ্গে হর্ষকে তিনি জড়াতে চাননি । এই কারণে, তাঁর বন্ধু দীপঙ্কর তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করান ।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, আজ এই নবজাতক এবং তার মাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হবে । ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে এই শিশুর বাবা হিসাবে থাকছে হর্ষের নাম । গতকাল নবজাতকের সঙ্গে দেখা করতেও দেওয়া হয়েছে হর্ষকে । তবে, ভরতি করানোর সময় দীপঙ্কর কেন স্বপ্নার স্বামী হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে কিছু জানা যায়নি । অন্যদিকে, তৃতীয় দাবিদার প্রদীপ রায় নামের ওই ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে । হাসপাতাল সূত্রে খবর, পুলিশ যেহেতু বলে দিয়েছে হর্ষ ক্ষেত্রী এই শিশুর বাবা, সেই জন্য এদিন নবজাতকের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়েছে হর্ষকে ।