হুগলি, 18 ফেব্রুয়ারি: বঙ্গের রাজনৈতিক উত্তাপে এখন সরগরম ডানলপ । সামনেই যুযুধান শাসক ও বিরোধী দলের সর্বোচ্চ নেতাদের আনাগোনার সাক্ষী থাকবে গোটা এলাকা । মাত্র দু'দিনের ব্যবধানে ডানলপ ফুটবল মাঠে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় । তাঁদের সফর ঘিরে আবারও আলোচনায় ব্যান্ডেলের সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা । শুধু রাজনীতির স্বার্থে নয়, আগামী দিনে প্রকৃত অর্থে সুদিনের বার্তা পেতে চাইছেন স্থানীয় মানুষ ।
ব্যান্ডেলের ডানলপ কারখানা খোলা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তরজা চলছে । কিন্তু এই শিল্পের পুনরুজ্জীবন আজও বিশ বাঁও জলে। তৃণমূল সরকারের আমলে প্রকাশ্যে দিবালোকে এই কারখানার যন্ত্রাংশ থেকে আবাসনের ইট পর্যন্ত চুরি হয়েছে । সামনেই নির্বাচন । মোদি-মমতার সফর ঘিরে শুরু হয়েছে সাজো সাজো রব। তাই ডানলপ কারখানা এলাকায় শিল্প নিয়ে আবারও নতুন করে আশার আলো তৈরি হয়েছে।
রাজ্যে শিল্প আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চায় শাসক বিরোধী উভয় পক্ষই। 2021 সালের নির্বাচনে শিল্পকেই হাতিয়ার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে বদ্ধপরিকর বিরোধীরা । সেই লক্ষ্যেই নির্বাচনী প্রচারের জন্য এই এলাকাকেই বেছে নিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে প্রধানমন্ত্রীও। 22 ফেব্রুয়ারি ডানলপ কারখানা মাঠেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে । সেই প্রস্তুতি দেখতে এসেই হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, মানুষ এ বার বিজেপিকেই ক্ষমতায় আনবে । পিছিয়ে নেই তৃণমূলও । মোদির সভার একদিন পরই অর্থাত্ 24 ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করবেন ওই একই মাঠে। মোদির সভার বিশেষ প্রভাব সেখানকার মানুষের উপর পড়বে না বলে দাবি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের ।
দু'দিনের ব্যবধানে সাহাগঞ্জে ডানলপ কারখানার মাঠে মোদি-মমতার সভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সভা পালটা সভা থেকে ডানলপ কারখানা খোলার ব্যাপারে কী বার্তা আসে, সে দিকেই তাকিয়ে স্থানীয় মানুষ। শ্রমিকরা দাবি জানিয়েছেন, তাঁদের বকেয়া মিটিয়ে এই কারখানা খোলা বা অন্য কোনও বিকল্প শিল্পের ব্যবস্থা করুক কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ।
আরও পড়ুন:শহরে অমিত, দিনভর কখন কোথায় শাহি-শো...
ব্রিটিশ আমলের ভারতের প্রথম টায়ার কারখানা তৈরি হয়েছিল ব্যান্ডেলের ডানলপে । কয়েকশো একর জমি নিয়ে এই শিল্প নগরী তৈরি হয় । কিন্তু 2008 সাল থেকে এই কারখানা একাধিক বার বন্ধ হয়েছে । 2012 সালে একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। 2016 সালে জেশপ ও ডানলপ অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার । তবে তার পর থেকে রাজ্য সরকার আর এই টায়ার কারখানা নিয়ে ভাবেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের একাংশের ।
জঙ্গলে ভরা এই কারখানা থেকে রাতের অন্ধকারে এমনকী দিনের আলোয় কারখানার যন্ত্রাংশ ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়েছে । এখন কারখানার অবস্থা কঙ্কালসার । সরকারি তরফে শ্রমিকদের জন্য 10 হাজার টাকা ভাতার ব্যবস্থা চালু করেছিল রাজ্য সরকার । বেশ কয়েকজন শ্রমিক বেকার ভাতা পান । কিন্তু ডানলপের শ্রমিকরা নতুন করে কর্মসংস্থান না-পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বহু শ্রমিক ডানলপের কোয়ার্টার ছেড়ে অনেকদিন আগেই চলে গিয়েছেন । আর্থিক অবস্থার কারণে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা থেকে চিকিৎসা সবদিক থেকেই অনেকটা পিছিয়ে এখানকার শ্রমিকরা । তাঁরা চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভা থেকেই নতুন শিল্পের ঘোষণা হোক । আদালতের নির্দেশেই ডানলপে লিকুউডেটর নিয়োগ করা হয় । সূত্রে খবর, 18 ও 19 ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতের নির্দেশে লিকুউডেটরের পক্ষ থেকে ডানলপের সম্পত্তি বিক্রি করে শ্রমিক ও পাওনাদারদের টাকা মেটানোর ব্যবস্থা করা হবে । মোদি ও মমতার সভার আগে বঙ্গ রাজনীতির ঢেউ আপাতত আছড়ে পড়েছে ডানলপে । এখন সেই ঢেউকে কাজে লাগিয়েই নিজেদের ভাগ্য বদলানোর আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয়রা ।