চন্দননগর, 15 জুন: অবস্থা কোনওদিনও স্বচ্ছল ছিল না ৷ দু'বেলা অন্ন জোগাতে চলে প্রতিনিয়ত লড়াই ৷ তবুও খড়ের ছাউনির নিচে কোনওমতে দিন পার হয়ে যাচ্ছিল ৷ কিন্তু লকডাউন আর আমফানের জোড়া আঘাতে একেবারে হিমশিম অবস্থা ৷ তার উপর চোখ পাকাচ্ছে গঙ্গার ভাঙন ৷ সব মিলিয়ে বিপাকে হুগলির বলাগড়ের জিরাট গ্রাম পঞ্চায়েতের চড়ক্ষয়রামারি এলাকার মানুষ ৷ এই এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাই ভিন জেলা ও ভিন রাজ্য থেকে আসা আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত ৷
মূলত কাজের তাগিদে মালদা, মুর্শিদাবাদ ও ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে এসে বসবাস করা শুরু করে ৷ বলাগড়ে প্রায় 15-16 বছর ধরে বসবাস করছে তারা । তা সত্ত্বেও তাদের কাছে না আছে ভোটার কার্ড, না আছে রেশন কার্ড । 2014 সালে আধার কার্ড হয়েছিল । কিন্তু রেশন কার্ড না থাকায় খাবারের সমস্যা থেকে গেছে । টানা লকডাউনে কারণে কাজ বন্ধ ছিল ৷ তখন অবশ্য প্রশাসনের তরফে মাসে 5 কিলোগ্রাম করে চাল দিয়েছিল । পাশাপাশি স্থানীয় কিছু যুবক ভাত-ডালের ব্যবস্থাও করে ৷ যদিও তা যথেষ্ট ছিল না ৷ বর্তমানে আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষগুলোর কাছে খাবার ও ওষুধ কেনার টাকা নেই । বলাগড় ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন ৷ কিন্তু, এখনও সুরাহা হয়নি ৷
খাস জমির উপর 20টি পরিবার নিয়ে প্রায় 62 জন পুরুষ, মহিলা ও শিশুর বাস । ঘূর্ণিঝড় আমফান এদের দুর্দশা আরও বাড়িয়েছে ৷ উড়ে গেছে ঘরের চাল । মূলত চাষবাস ও দিনমজুরি করে জীবন যাপন করা এই মানুষগুলির মনে আরও একটি আতঙ্ক কাজ করছে ৷ এমনিতেই সারাবছর ধরেই গঙ্গার ভাঙন লেগে থাকে । বর্ষার সময় পাড় আরও তলিয়ে যাবে । সেই আতঙ্কেই এখন কাঁটা গরিব মানুষগুলি ৷ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মোড়ল অর্জুন সোরেন বলেন, "শুধুমাত্র আধার কার্ডটা আমরা পেয়েছি । রেশন কার্ড ও ভোটার কার্ড কোনওটাই পাইনি ৷ তার উপর ঘূর্ণিঝড়ে বেশ কয়েকটি বাড়ির চাল উড়ে গেছে । নিজেরাই সারানোর ব্যবস্থা করেছি । মাঠে ঘাটে চাষবাসের কাজ করে আমাদের সংসার চলে । গঙ্গার পাশে থাকার ফলে ভাঙনের আতঙ্ক সবসময় থেকেই যাচ্ছে । কোথায় যাব ঠিক করতে পারছি না । দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে ।" তিনি আরও বলেন, "এই পরিস্থিতিতে আমাদের খাবারের কোনও সংস্থান নেই । স্থানীয় পঞ্চায়েতে জানালেও আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাইনি । রেশন কার্ড না থাকার ফলে কাজ না থাকলেও খাবার চাল পাওয়া যায় ৷ সেটা থেকেও আমরা বঞ্চিত ।"
লকডাউন কেড়েছে ভাত, আমফান ছাদ ; বিপাকে বলাগড়ের আদিবাসীরা দুর্দশার কথা জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন ফুলমণি মুর্মু নামে এক মহিলা ৷ তাঁর কথায়, "আমার স্বামী অন্ধ । চোখে দেখতে পায় না । আমি মহিলা হয়ে কোথায় কাজ করব? চাষবাসের যেটুকু কাজ করি সেটাও এখন বন্ধ ৷ লোকের কাছে 20 টাকা চেয়েও পাইনি । সরকারের কাছে অনুরোধ, কিছুটা হলেও সাহায্য করুন ।" ফুলমণি মুর্মুর অভিযোগ, "কেউ চায় না আমাদের উপকার হোক । আমফানের পর রেশনের কুপন দেওয়ার কথা বললেও এখনও কিছুই পাইনি । তার উপর ঝড়ে ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে ৷ সেখানে কোনওমতে বাস করছি । লকডাউনে এমনিতেই কাজকর্ম নেই ৷ তাই প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে । রেশন কার্ড না থাকায় চাল, গম কিছুই পাচ্ছি না ।" রেশন কার্ড না পাওয়ার ব্যাপারে BDO সমিত সরকার বলেছেন, "এরা কাজের জন্য এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায় । লকডাউনের সময় এদের দেখা পাওয়া গেছে । অস্থায়ী রেশনের কুপন দেওয়ার ব্যবস্থা করব ।"