ভদ্রেশ্বর, 16 মার্চ : অতি কষ্টে একচিলতে ঘরে ধুলোবালির মধ্যে বেড়ে ওঠে ইটভাটা শ্রমিকদের সন্তানরা । এভাবে বেড়ে ওঠা শিশুদের পাশে দাঁড়ালেন বৈদ্যবাটির এক বাসিন্দা । সন্তানের জন্মদিন উপলক্ষে চন্দননগরের একটি ইটভাটায় কেক কাটার পাশাপাশি মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন তিনি । বঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতেই তাঁর এই উদ্যোগ । এই ভালোবাসা পেয়ে খুশি ইটভাটার ছোট্ট শিশুরাও ।
শাশ্বত রায় । বৈদ্যবাটির বাসিন্দা । পেশায় মেডিকেল রিপ্রেজ়েন্টেটিভ । বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে ভদ্রেশ্বরের এক সংস্থার সহায়তায় ইটভাটার শিশুদের নিয়ে সন্তানের জন্মদিন পালনের চিন্তাভাবনা করেন । শাশ্বতবাবু ও তাঁর স্ত্রী রিকু রায়ের এক বছরের সন্তান শৌখিন( ডাকনাম বোতাম)-এর জন্মদিন ছিল গতকাল । সেই উপলক্ষে ইটভাটার শিশুদের জন্য কেক চকোলেট ও মধ্যাহ্নভোজের বিশাল আয়োজন করেন তিনি । তাতেই খুশি ওই কচিকাঁচারা। ছোট্ট বোতামও তার জন্মদিনে ওই শিশুদের পেয়ে আনন্দিত ।
বোতামের মা বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না এই শিশুরা এই ধরনের আনন্দ পায় । তাই আমার সন্তানের জন্মদিনে তাদের আনন্দ দেওয়ার জন্যই এই উদ্যোগ নিয়ে । অনেকদিন আগেই আমরা এই চিন্তা করি। কিন্তু হয়ে ওঠেনি । তাই বোতামের জন্মদিনের মাধ্যমে আমাদের মনের ইচ্ছাপূরণ হল । কচিকাঁচাদের জন্য আজকের মেনু ছিল- রাইস, চিলি চিকেন, চাটনি, পাঁপড় ও রসগোল্লা ৷ আমরা 100 জনের আয়োজন করেছিলাম ৷ আগামীদিনে যদি আমাদের সামর্থে কুলায় আবার করব এই ধরনের অনুষ্ঠান ।’’
আবেগ ধরে রাখতে পারেননি শাশ্বতবাবু। কথা বলতে বলতে চোখের জল এসে যায় তাঁর । ইচ্ছা একটাই, প্রতি বছর এভাবেই বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে জন্মদিন পালন করবেন তিনি ।
শৌখিনের জন্মদিনে চন্দননগরের ইটভাটার শিশুদের চোখে মুখে হাসি পেটপুরে খেয়ে আনন্দিত শিশুরাও । আর সেই আনন্দ ও সুযোগ-সুবিধা দিতে বদ্ধপরিকর এই সংস্থার উদ্যোক্তারা । সংস্থার অন্যতম পায়েল রায় বলেন, ‘‘আমাদের তরফে এই ধরনের শিশুদের জন্য আমরা এগিয়ে আসি । মিশে যায় তাদের সঙ্গে । শুধু খাওয়া-দাওয়া নয়, জামাকাপড় ও বইও দিয়ে থাকি আমরা । হুগলি জেলার বিভিন্ন জায়গায় আমরা এই ধরনের কাজ করি । স্টেশনের পাশে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করি । এই শিশুগুলির কালচারাল দিকটাও যেমন দেখতে হয়, তার সঙ্গে সঙ্গে সুরক্ষার দিকেও লক্ষ্য রাখতে হয় । আমি ছাড়াও বহু মানুষ আমাদের সঙ্গে যুক্ত । প্রত্যেকে অবসর সময়ে অন্য চিন্তাভাবনা না করে এই ধরনের কাজে এগিয়ে আসেন ।’’