চুঁচুড়া, 15 জুন : পৌরসভার কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা ৷ এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল ETV ভারতে। এরপর আজ সমস্ত নিয়োগপত্র বাতিল বলে জানালেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বলেন, হুগলি-চুঁচুড়া পৌরসভার নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম হয়েছে ৷ নিয়োগের মধ্যে অস্বচ্ছতা রয়েছে ৷ যে নিয়োগ হয়েছে তাতে ভুল রয়েছে ৷ এই বিষয়ে পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি ৷ তারপরই নিয়োগ বাতিল করার নির্দেশ দেন ফিরহাদ ৷
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, "আগামীদিনে আইন অনুযায়ী চুঁচুড়া পৌরসভায় কর্মী নিয়োগ হবে ৷ BJP এইসব আন্দোলন করে ঘোলা জলে মাছ ধরছে ৷ আমি ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছি, এই নিয়োগ বাতিল হবে ৷ BJP ইশু তৈরির জন্য এসব করছে ৷"
নিয়োগ বাতিলের এই সিদ্ধান্তে পালটা আক্রমণ করেন BJP-র সাধারণ সম্পাদক লকেটে চট্টোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "ওই নিয়োগে তৃণমূলের কাউন্সিলরই চাকরি পান । এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কর্মীরা সরব হয়েছিলেন । আর আজ শ্রীরামপুরের সাংসদ এই নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ বোঝা যাচ্ছে সত্যি সত্যি দুর্নীতি হয়েছিল এই পৌরসভায় । যেহেতু আমরা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার দুর্নীতির ঘটনা ফাঁস করে দিয়েছি, সেই কারণেই সাংসদ বাধ্য হলেন এটা বাতিল করতে । একদিকে, সাংসদ বলছেন বাতিল হয় হোক ৷ অন্যদিকে, চুঁচুড়ার বিধায়ক বলছেন, এখানে কোনও দুর্নীতি হয়নি । নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া লেগে গেছে । এই একটি মাত্র জায়গায় তৃণমূলের দুর্নীতি ধরে ফেলেছিলাম বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হচ্ছে । তাহলে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পৌরসভায় এরকম দুর্নীতি চলছে, যা এখনও ধরা পড়েনি। ভবিষ্যতে এই ধরনের বড় দুর্নীতি ধরা পড়ুক, আমরা চাই ।"
মজদুর এবং পিওন পদে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে আজ সকাল থেকে হুগলি-চুঁচুড়া পৌরসভার গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখান BJP কর্মী, CPI(M) ও অস্থায়ী শ্রমিকরা । তাঁদের একটাই দাবি, অবিলম্বে বাতিল করা হোক দুর্নীতিপূর্ণ নিয়োগ । এর সঙ্গে পৌর চেয়ারম্যান গৌর মুখোপাধ্যায় ও বিধায়ক অসিত মজুমদার জড়িত বলে অভিযোগ তোলেন তাঁরা ৷ তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার ।
চুঁচুড়া পৌরসভায় কর্মী নিয়োগে অস্বচ্ছতার কথা স্বীকার করলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তৎকালীন CPI(M)-র বিরোধী দলনেতা সমীর মজুমদার বলেন, "অবৈধ এই নিয়োগের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই । পৌরসভা গেটের সামনেই আমরা প্রতিবাদ জানাই । 1 মার্চ যে পরীক্ষা হয়েছিল সেই পরীক্ষায় 67জন মজদুর এবং 9 জন পিওন নিয়ে নিয়োগ ঘোষণা হয়েছিল । পৌরসভার তরফে চরম দুর্নীতি হয়েছে । তড়িঘড়ি বিজ্ঞাপন, পরীক্ষা এবং ফলাফল ঘোষণা করে কর্মী নিয়োগ হয় এখানে । 22 নম্বর ওয়ার্ডের সৌমিত্র মালাকার কাউন্সিলর হয়ে কীভাবে এই পদে নিয়োগ হন? তাছাড়াও অস্থায়ী শ্রমিকদের জন্য কেন পদ রাখা হল না ? এই সমস্ত নিয়ে আমরা আইনি লড়াই লড়ব । এই অবৈধ দুর্নীতিপূর্ণ নিয়োগ বাতিলের দাবি জানাচ্ছি আমরা । আমাদের ধারণা, যেভাবে চেয়ারম্যান এবং বিধায়ক বক্তব্য দিয়েছেন এই দুর্নীতির সঙ্গে তাঁরা দুজনই যুক্ত ।"
কিন্তু, চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদারের মুখে শোনা গেল অন্য কথা ৷ তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, কোনও দুর্নীতি হয়নি ৷ বললেন, "আমি যতটুকু জানি এই পৌরসভায় দুর্নীতির কোনও প্রশ্ন নেই । সরকারি নিয়মে যেভাবে আছে সেই অনুযায়ী নিয়োগ হয় । কাউন্সিলরের কী পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা নেই ? আর কাউন্সিলর যদি পরীক্ষায় পাস করেন, তাহলে কী করা যাবে । তাহলে কি জোর করে ফেল করাতে হবে ? তার জন্য তো হাইকোর্ট আছে । হাইকোর্ট খাতা দেখতে চাইলে আমরা খাতা দেখানোর জন্য তৈরি । পরীক্ষার জন্য সরকারি বোর্ড তৈরি হয়েছিল ৷ কিন্তু সেই বোর্ডে কাউন্সিলর সৌমিত্র মালাকার নেই । ওঁরা এসব না জেনেই বলছেন ।"