ধনিয়াখালি, 18 জুলাই : গত চার বছর মেয়ের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই ৷ প্রজ্ঞা যে আয়েশা জান্নাত মোহনা নাম নিয়ে JMB জঙ্গি দলে নাম লিখিয়েছে তাও জানা ছিল না ৷ আজ প্রজ্ঞার গ্রেপ্তারির খবর পেতেই দুঃখ্যে ভেঙে পড়েছেন প্রজ্ঞার মা গীতা দেবনাথ ৷ যদিও প্রজ্ঞার বাবা প্রদীপ দেবনাথ বললেন, "দোষ করলে ওকে শাস্তি পেতে হবে । ও যদি দেশদ্রোহী হয় তার সাজা সে পাবেই ৷"
ধনিয়াখালির এই বাড়িতেই বড় হয়ে উঠেছে প্রজ্ঞা 2016 সালের 24 শে সেপ্টেম্বর সকালে কলকাতায় কাজ আছে বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল প্রজ্ঞা দেবনাথ । তারপর বছর 25-এর ওই যুবতি আর বাড়ি ফেরেনি । অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি তার ৷ প্রজ্ঞার মা গীতা দেবনাথ বলেন, "হঠাৎ কিছুদিন পর মেয়ে ফোন করে জানায়, সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে ৷ বাংলাদেশের ঢাকায় আছে । মেয়েকে অনেক বুঝিয়েছিলাম । কিন্তু ও কোনও কথা শোনেনি । আর্থিক অবস্থাও স্বচ্ছল ছিল না যে, মেয়েকে খোঁজাখুঁজি করব । তারপর থেকে আমাদের সঙ্গে ওর কোনও যোগাযোগ ছিল না ৷"
এরপর আজ সকালে প্রতিবেশীরা সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পারে, JMB-র সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছে প্রজ্ঞা ৷ সেই খবর শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রজ্ঞার মা । প্রজ্ঞার দাদু দেবেন্দ্র দেবনাথ পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করতেন ৷ 2010 সালে তাঁর মৃত্যু হয় ৷ তারপর থেকেই সংসারে নেমে আসে আর্থিক সংকট । অভাবের সংসারে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে জামা কাপড়ের ব্যবসা করে সংসার চালান গীতাদেবী ৷ প্রজ্ঞার বাবা প্রদীপ দেবনাথ দিন মজুরের কাজ করেন । পরিবারে এক ছেলে ও এক মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হত প্রদীপবাবু ও তাঁর স্ত্রীকে । প্রজ্ঞা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ করে ধনিয়াখালি কলেজে সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে ভরতি হয়েছিল । কিন্তু, তৃতীয় বর্ষ সম্পূর্ণ না করেই বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল সে । গীতা দেবনাথ আক্ষেপ করে বলেন, "পড়াশোনা শেখানোর কোনও দাম দিল না মেয়ে ।"
"পড়াশোনা শেখানোর কোনও দাম দিল না ও " বলছেন প্রজ্ঞার মা স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, ধনিয়াখালি কলেজে পড়াশোনা চলাকালীন কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিল প্রজ্ঞা । পাড়ায় বহিরাগতদের আনাগোনা ছিল । প্রতিবেশীদের অনেকেই জানিয়েছে, বাড়ির বাইরে অনেক রাত পর্যন্ত ফোনে কথাবার্তা বলতে শোনা গেছে প্রজ্ঞাকে । কিন্ত, এইভাবে যে কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়তে পারে পাড়ার চুপচাপ থাকা মেয়েটি, ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি কেউ ।