রাজবলহাট(হুগলি), 7 ফেব্রুয়ারি: দৃষ্টিহীনদের জীবনে আলোর দিশা দেখাতে দিন রাত এক করে কর্নিয়া সংগ্রহ করছেন হুগলির বছর পঁয়ত্রিশের যুবক সুরজিৎ শীল ৷ দীর্ঘ 15 বছর ধরে সাইকেলে করে তিনি এই কাজ করে চলেছেন ৷ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সুরজিৎ ৷ বাবা পেশায় তাঁতি ৷ 2007 সাল থেকে কর্নিয়া সংগ্রহের কাজে যুক্ত সুরজিৎ । এখনও সাড়ে পাঁচশো জোড়ার বেশি কর্নিয়া সংগ্রহ করেছেন বলে দাবি তাঁর । অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই লক্ষ্য সুরজিতের (Hooghly man collects cornea to help the sightless) ।
সুরজিতের নিজের আয় বলতে সামান্য বাবার সঙ্গে তাঁতের কাজ, পাশাপাশি ওষুধ সাপ্লাইয়ের কাজ করে । তবে বেশিরভাগ সময়টা কর্নিয়া সংগ্রহের কাজেই দেন সুরজিৎ । তবে শুধু তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে রাজবলহাটের তিনজন যুবকও যুক্ত রয়েছেন এই মহান কাজে । এছাড়াও তাঁরা রাজবলহাটের কালচারাল সার্কেল বলে একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত । যেখানে চক্ষু পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা-সহ নানা ধরনের সমাজ সেবামূলক কাজ করেন তাঁরা ।
মরণোত্তর চক্ষুদান ও দেহদান এক মহান কাজ ৷ একজনের জীবনে চির অন্ধকার ঘনিয়ে আসলেও তিনি মরণোত্তর আলো ফোটাতে পারেন অন্য ব্যক্তির জীবনে ৷ আর সেই বার্তা দিতেই কর্নিয়া সংগ্রহের কাজে অঙ্গীকার বদ্ধ হয়েছেন এই তিনজন যুবক ৷ তাঁদের মধ্যেই একজন হলেন রাজবলহাটের সুরজিৎ শীল ৷ নিজের ইচ্ছা শক্তির জোরে কর্নিয়া সংগ্রহ করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে বহু মানুষের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন তিনি ৷ প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে নিরন্তর চক্ষুদানের সচেতনতা ও কর্নিয়া সংগ্রহ করে চলেছেন সুরজিৎ । সাইকেলে সঙ্গে করে কর্নিয়া সংগ্রহের যন্ত্রপাতি নিয়ে হুগলি হাওড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যান তিনি । এ ব্যাপারে প্রথাগত শিক্ষা না-থাকলেও, সরকারি হাসপাতালের ট্রেনিং নেওয়ার পরই এই কাজ শুরু করেছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের এই ছেলেটি ।
উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে চক্ষুদানের প্রচার ও কর্নিয়া সংগ্রহ করাই লক্ষ্য সুরজিতের । সরকারিভাবে সেভাবে স্বীকৃতি না-পেলেও, বিভিন্ন সংস্থা সম্মান দিয়েছে তাঁকে । সুরজিৎ যে সংস্থার অংশ, তারা দাবি তুলছেন, মেডিক্যাল কলেজগুলি ছাড়াও জেলা হাসপাতালে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করুক সরকার । তারা জানায়, গোটা ভারতের 30 লক্ষ মানুষ কর্নিয়া জনিত কারণে দেখতে পান না । বছরে প্রায় 80 লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় দেশে । তার মধ্যে 20 থেকে 30 হাজার মানুষের কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয় । শুধু পশ্চিমবঙ্গে কর্নিয়া সংগ্রহ হয় 2 হাজারের মতো । এ ব্যাপারে বাংলার থেকে তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্রে অনেকটাই এগিয়ে ৷ সরকারি সাহায্য পেলে বহু মানুষের দৃষ্টি ফিরবে বলে আশা ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ।