সিঙ্গুর, 5 মার্চ: প্রার্থী তালিকায় ঠাঁই হারাতেই বিস্ফোরক সিঙ্গুরের বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ৷ সাফ জানিয়ে দিলেন, স্বয়ং দলনেত্রী অনুরোধ করলেও এবারের তৃণমূল প্রার্থী বেচারাম মান্নার জন্য প্রচার করবেন না তিনি ৷ দিলেন শিবির বদলের হুঁশিয়ারিও ৷ কোনও রাখঢাক না করেই জানালেন, অন্য়ান্য় দলের মতো বিজেপিও যোগাযোগ রাখছে তাঁর সঙ্গে ৷
করোনা আবহে ভোট হচ্ছে বঙ্গে ৷ শাসক দলের দাবি, প্রবীণদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেই প্রার্থী তালিকা থেকে ছাঁটা হয়েছে তাঁদের নাম ৷ ‘বাতিল’ এই নেতাদের তালিকায় রয়েছেন সিঙ্গুরের চারবারের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যও ৷ যদিও বয়সের কারণে প্রার্থীপদ না দেওয়ার যুক্তি মানতে 88 বছরের এই ‘তরুণ’ ৷ শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, একটা সময় পর্যন্ত এবারও টিকিট পাওয়ার বিষয়ে একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন তিনি ৷ কিন্তু পরে এ নিয়ে সংশয় তৈরি হয় তাঁর ৷ বিদায়ী বিধায়কের মতে, বয়সের কারণে প্রার্থী না করাটা নেহাতই ‘অজুহাত ’৷ তাঁর আশঙ্কা ছিল, এই অজুহাত দেখেই বঞ্চিত করা হবে তাঁকে ৷ শেষ পর্যন্ত হলও তেমনটাই ৷
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে এরপর কী ? কোন পথে পা বাড়াবেন সিঙ্গুরের প্রিয় মাস্টারমশাই ৷ না, এই প্রশ্নের উত্তর এখনই দিতে নারাজ পোড় খাওয়া এই রাজনীতিক ৷ বরং সাসপেন্স বজায় রেখে ‘কয়েকটা দিন’ সময় চেয়ে নিয়েছেন তিনি ৷ জানালেন, সিদ্ধান্ত নেবেন শীঘ্রই ৷
এ কি তবে দলবদলের ইঙ্গিত ? সোজা জবাব না দিলেও উত্তর এড়ালেন না রবীন্দ্রনাথ ৷ তাঁর বক্তব্য়, পরিস্থিতি বুঝেই করবেন পরবর্তী পদক্ষেপ ৷ সেক্ষেত্রে দলবদল একটা বিকল্প তো বটেই ৷ উপরন্তু ‘মাস্টারমশাই’য়ের দাবি, তৃণমূল তাঁকে ‘অক্ষম’ মনে করলেও তিনি নিজে তা মানেন না ৷ মানেন না তাঁর অনুগামীরাও ৷ তাই তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই নিজের ভবিষ্যৎ স্থির করবেন রবীন্দ্রনাথ ৷ সেক্ষেত্রে বিজেপিতে যাওয়ার রাস্তাও খোলা রেখেছেন তিনি ৷ তবে এখানেও রয়েছে ‘যদি’, ‘কিন্তু’র অবকাশ ৷
রবীন্দ্রনাথের দাবি, ‘বাইরের বিভিন্ন দল’ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে ৷ তাদের মধ্যে রয়েছে বিজেপিও ৷ তাহলে কি আগামী 7 মার্চ মোদির ব্রিগেডে দেখা যাবে তাঁকেও ? সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেন অশিতীপর রাজনীতিক ৷ তাঁর চোখে বিজেপি যে আদর্শ দল নয়, খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছেন তাও ৷
ক্ষোভ প্রকাশ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ৷ আরও পড়ুন:প্রার্থী হতে না পেরে কেঁদে ফেললেন আরাবুল ইসলাম
এখানে আর একটি বিষয় মনে রাখা দরকার ৷ শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস নয়, এবার বাম-বিজেপিও তাদের প্রার্থীতালিকায় নবীনদের রাখার দিকেই ঝুঁকেছে ৷ বিজেপির তরফে তো আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বৃদ্ধদের (75 বছরের বেশি বয়সী) আর ভোটের টিকিট দেওয়া হবে না ৷ এমনকী, সাংগঠনিক ক্ষেত্রেও তাঁরা আজ কোণঠাসা ৷ তাই 88 বছরের রবীন্দ্রনাথ সেখানে গিয়ে বাড়তি কোনও সুবিধা পাবেন কি ?
এদিকে, সিঙ্গুর আসনে এবার যে বেচারামকে তৃণমূলের প্রার্থী করেছেন মমতা, তাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিবাদ দীর্ঘদিনের ৷ যার রেশ গড়িয়েছে ব্লক স্তরেও ৷ স্থানীয়ভাবে সংগঠনের রেশ কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে বারবার কোন্দলে জড়িয়েছে বেচারাম গোষ্ঠী ও রবীন্দ্রনাথ অনুগামীরা ৷ এই অবস্থায় বেচারামের স্ত্রী করবী মান্নাকেও প্রার্থী করেছেন মমতা ৷ তিনি লড়ছেন স্বামীর বর্তমান কেন্দ্র হরিপাল থেকে ৷ শুক্রবার এ নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি রবীন্দ্রনাথ ৷ তাঁর ভাষায়, রাজ্য়ের 294টি আসনের নিরিখে এই ঘটনা ‘নজিরবিহীন’ ৷
প্রসঙ্গত, 2001 সাল থেকে পরপর চারবার সিঙ্গুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে লড়ে জয়ী হয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ৷ পরবর্তীতে সিঙ্গুর আন্দোলনে মমতার অন্যতম সেনাপতিও ছিলেন তিনিই ৷ কিন্তু ইদানীংকালে তাঁর সঙ্গে দলের দূরত্ব বেড়েছে ৷ শুভেন্দুর অনুগামীরা যখন ‘দাদার অনুগামী’ লেখা পোস্টার সাঁটিয়ে খবরের শিরোনামে, তার কিছুদিন পরই প্রায় একইরকম পোস্টার সাঁটিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের অনুগামীরাও ৷ যার জেরে সেই সময়েই রবীন্দ্রনাথের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে শুরু হয় জল্পনা ৷ তাঁর টিকিট না পাওয়ার পিছনে সেটাও একটা কারণ হতে পারে বলে মত প্রবীণ রাজনীতিকের ৷ তবে তাঁর বিশ্বাস, এবারও দল যদি তাঁকে প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করত, তাহলে জয় আসত তাঁর ঝুলিতেই ৷ রবীন্দ্রনাথের আক্ষেপ, ‘সৎ’ হয়েও দলের কাছ থেকে ‘উপযুক্ত ব্য়বহার’ পেলেন না তিনি ৷ তাঁর কথায়, ‘তোলাবাজ, কাটমানি খাওয়া অসৎ লোকেদের কথা শুনেই’ তাঁকে প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে দল ৷