হুগলি, 9 নভেম্বর : শারীরিক অসুস্থতা ও আর্থিক অনটনের জেরেই পরিবারের তিনজনকে খুন করে আত্মহত্যার চেষ্টার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে দশঘরার গৃহশিক্ষক প্রমথেশ ঘোষাল । এমনটাই জানাচ্ছেন প্রমথেশের খুড়তুতো বোন ও প্রতিবেশীরা ৷ কিন্তু এরকম নৃশংস একটা খুনের পিছনে কি শুধুই অসুস্থতা ও আর্থিক অনটন ? নাকি ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করেই এই খুন করেছে প্রমথেশ ? খুনে অভিযুক্ত প্রমথেশ গুরুতর জখম অবস্থায় বর্তমানে ধনিয়াখালি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ তাই সুস্থ না হলে এখনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে না পুলিশ ৷
কিন্তু পাড়া-প্রতিবেশী ও খুড়তুতো বোন কী জানাচ্ছেন প্রমথেশ ও তার পরিবারের সম্পর্কে ?
আরও পড়ুন :Crime : বাবা-মা ও বোনকে নলি কেটে খুন করে আত্মহত্যার চেষ্টা যুবকের, ব্যাপক চাঞ্চল্য হুগলির ধনিয়াখালিতে
এলাকায় ভাল গৃহশিক্ষক হিসেবে পরিচিত ছিল দশঘরার রায়পাড়ার ঘোষাল পরিবারের ছেলে প্রমথেশ । কয়েকশো ছাত্র-ছাত্রী পড়াত সে । করোনার কারণে প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ হয়ে যায় । কিছুদিন অল্প কিছু ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেও আয় তেমনভাবে ছিল না । সিরোসিস অফ লিভার রোগে আক্রান্ত ছিল প্রমথেশ । গত দু'বছর ধরে হায়দরাবাদে চিকিৎসা চলছিল তার । চিকিৎসার জন্য 10 লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয় । তাছাড়াও পরিবারে মায়ের অসুস্থতা জন্য 25 থেকে 30 হাজার টাকা খরচ হত । বোনের বিয়ের 10 বছর পরেও সন্তান না হওয়ায় তাঁর চিকিৎসার খরচও বহন করত প্রমথেশ ৷
আরও পড়ুন :Crime : প্রেসিডেন্সি জেলের পাঁচিল টপকে এসে পড়ল গাঁজার ব্যাগ
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় ভাল গৃহশিক্ষক হিসেবে পরিচিত হলেও সেভাবে সকলের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মিশত না প্রমথেশ । একা নিজের জগৎ নিয়েই থাকতে বরাবর ভালবাসত সে ৷ এমনকি খাবারও তার ঘরে দিয়ে আসতে হত ৷ খুব কম কথা বলত ৷ আর্থিক সমস্যা ও মানসিক অবসাদের কারণেও এই ঘটনা থাকতে ঘটে থাকতে পারে বলে অনুমান পুলিশের ।
এই বিষয়ে প্রমথেশের খুড়তুতো বোন অরুণিতা রায়চৌধুরী বলেন, "আমার দাদা ভাল ছেলে হয়েও এত অবসাদের মধ্যে চলে গিয়েছে আমরা ভাবতে পারছি না । লিভারের সমস্যার কারণে 10 থেকে 12 লাখ টাকা খরচ হয়েছে । হয়তো তার জন্য চিন্তা করত । সংসার চালাতে অসুবিধা হচ্ছিল । সেই কারণে এটা করতে বাধ্য হয়েছে । লকডাউনের কারণে আয় অনেকটাই কমে গিয়েছিল । কিছু জিজ্ঞাসা করলেই কথাবার্তা বলত । সারাদিন নিজের পড়াশোনা নিয়েই থাকত । অঙ্কের গৃহশিক্ষক ছিল ৷ প্রাইভেট পড়িয়ে মাসে প্রায় এক লাখ টাকা আয় করত দাদা । ইদানিং পরিবারে খরচ বাড়লেও লকডাউনের জেরে প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই মনে হয় সমস্যা বড় আকার নেয় । যার ফলেই এই ঘটনা ৷"
মানসিক অবসাদ ও আর্থিক অনটনেই কি মা-বাবা-বোনকে খুন ধনিয়াখালির গৃহশিক্ষকের আরও পড়ুন :Crime : স্ত্রীকে খুনের চেষ্টায় ধৃত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
পুলিশ সূত্রে খবর, লোহার রড দিয়ে আঘাত করার পরেও বাবা, মা ও বোনের মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলার নলি ও হাতের শিরা কেটে দেয় । তারপর নিজের হাতের শিরা কাটে । খুনের মোটিভ দেখে পুলিশের অনুমান, বেশ কিছুদিন আগে থেকেই খুনের এই পরিকল্পনা করেছিল প্রমথেশ ৷ এর জন্য পাঁচটি নতুন ব্লেডও কিনেছিল সে । ঘরের মধ্যে বোনের মৃতদেহ খাটের উপরে পরে থাকলেও বাবা ও মায়ের দেহ মেঝের নীচে এদিক ওদিক পড়ে ছিল ।
প্ৰমথেশ নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও সফল হয়নি । ধনিয়াখালি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে । যদিও ধনিয়াখালি থানার পুলিশ খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি । সুস্থ হলেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করবে পুলিশ ৷
হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সুপার আমনদ্বীপ বলেন, "সংসারে একমাত্র রোজগেরে ছিল সে ৷ লকডাউনে রোজগার প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম আর্থিক অনটন চলছিল ৷ পরিবারে বাবা, মা ও বোনের কিছু শারিরীক সমস্যা ছিল । নিজের অসুস্থতার খরচ নিয়েও চাপে ছিল । তাতেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান । মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর বিশদে বিষয়টি জানা যাবে ৷ প্রমথেশ সুস্থ হওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।"
আরও পড়ুন :Crime : পথকুকুরদের খাওয়াতে গিয়ে হেনস্থার শিকার মহিলা আইনজীবী, থানায় অভিযোগ দায়ের