সিঙ্গুর, 30 অক্টোবর : সে বহু যুগ আগের কথা ৷ সিঙ্গুরের কাছে তেলেভোলার মাঠ দিয়ে দক্ষিণেশ্বরে যাচ্ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ-পত্নী মা সারদা ৷ রাতে মাঠে তিনি ডাকাতদের সম্মুখীন হন ৷ কিন্তু ডাকাতরা তাঁর মধ্যে স্বয়ং মা কালীকে দেখতে পান ৷ রাতে তাঁকে মেয়ের মতো স্নেহ করে খেতে দেন, আশ্রয় দেন ডাকাত ও ডাকাতের স্ত্রী ৷ সেই মাঠে পরে ডাকাত সর্দার প্রতিষ্ঠা করেন মা কালীকে ৷ এখনও চলছে সিঙ্গুরের ডাকাত কালীর পুজো ৷
চাল কলাই ভাজা দিয়ে পুজো হয় সিঙ্গুরের ডাকাত কালীর । ডাকাতরা মা কালীর পুজো করে ডাকাতি করতে যেত । সিঙ্গুরের পুরুষোত্তমবাটি সে সময় ছিল জঙ্গলে ঘেরা । শোনা যায়, রঘু ডাকাত, গগন ডাকাতের ডেরা ছিল এখানে । সন্ধের পর সাধারণত ওই রাস্তা দিয়ে কেউ যাতায়াত করতেন না ।
কথিত আছে, সিঙ্গুরের ডাকাতে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা হয় মায়ের স্বপ্নাদেশে । কোনও এক সময় পাশের গ্রামের চালকে বাটী গ্রামের মোড়ল, চাষের সামগ্রী নিয়ে শেওড়াফুলি হাটে যাচ্ছিলেন । গরুর পিঠে শস্য বস্তায় বেঁধে নিয়ে সিঙ্গুরের ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় ক্লান্ত অবসন্ন মোড়ল গাছের ছায়ায় বসে ঘুমিয়ে পড়েন । তখন মা কালী তাঁকে স্বপ্ন দেন বাড়ি ফিরে যেতে এবং ওই স্থানে তাঁর মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে । মোড়ল বাড়ি ফিরে গিয়ে গ্রামের সবাইকে ডেকে ঘটনাটি বলেন । যে শস্যের বস্তা বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল মোড়ল, সেই বস্তায় সোনার মোহর পাওয়া যায় । তা দিয়ে একচালার ছোট মন্দির তৈরি হয় । বর্ধমানের রাজাকে মা স্বপ্ন দেন বড় মন্দির গড়ে পুজোর ব্যবস্থা করতে । বর্ধমানের রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে মায়ের পুজোর জন্য জমি দান করেন । সেবাইতও রাখা হয় । সেই সেবাইতের বংশধরেরা এখনও পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন । প্রথম থেকেই পুজোর ভোগে চাল কলাই ভাজা দেওয়া হয় আর কারণ দিয়ে । বর্তমানে মন্দির সংস্কার করা হয়েছে । সারা বছর এখানে ভিড় থাকে । তারকেশ্বরে বাবার মাথায় জল ঢালার সময় ভক্তরা এই মন্দিরে পুজো দিয়ে যান ।