চুঁচুড়া, 26 এপ্রিল : অ্যাম্বুলেন্সে নেই পর্যাপ্ত PPE কিট, মাস্ক ও স্যানিটাইজার। অ্যাম্বুলেন্স চালক ও রোগীদের মাঝে নেই কোন পার্টিশন। ঠিক মতো হ্যান্ড গ্লাভস পাচ্ছেন না চালকরা । এই পরিস্থিতিতেও নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোরোনা আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা । চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে তাঁদের জন্য নেই কোনও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও ।
কোরোনা বিপর্যয়ের মধ্যেও 24 ঘণ্টা কাজ করে চলেছেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা । তবে তাঁদের সুরক্ষা ? চালকরা বলছেন তাঁদের সুরক্ষা নেই বললেই চলে । ইতিমধ্যেই COVID অ্যাম্বুলেন্সে কর্মরত এক চালকের কোরোনা সন্দেহে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে । কাজ হারানোর ভয়ে মুখ খুলছেন না কেউ । অভিযোগ জানালেই সংস্থার কোপের মুখে পড়তে হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের । চাকরি যাওয়ায় হুমকি দেওয়া হচ্ছে । যদিও 102 অ্যাম্বুলেন্স-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার রাজা খান সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন । তিনি দাবি করেছেন অ্যাম্বুলেন্স চালকদের পূর্ণ সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে । কয়েকটি বিষয়ে আমরা বিশেষ নজরদারি দিচ্ছি ।
হুগলি জেলায় 102 অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা 47টি । তারমধ্যে বর্তমানে COVID অ্যাম্বুলেন্স হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে 11টি । চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর, আরামবাগ ও সিঙ্গুর সহ একাধিক জায়গায় 102 অ্যাম্বুলেন্সগুলিকেই কোরোনায় আক্রান্তদের স্থানান্তরিত করার জন্য ব্যবহার করা হয় । 2
8 জন চালক ও অ্যাটেনডেন্ট COVID অ্যাম্বুলেন্স এর জন্য কাজ করেন । কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দিনে দিনে বাড়ছে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা । রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর এবং জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর কোরোনার জন্য সমস্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলেছেন । সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যদপ্তরে পক্ষ থেকে । কিন্তু সরকারি চোখের আড়ালে এই অ্যাম্বুলেন্স চালকরা সমস্ত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন । অভিযোগ উঠেছে ন্যূনতম সুরক্ষা পাচ্ছেন না কোরোনা জন্য ব্যবহৃত 102 অ্যাম্বুলেন্স চালকরা । সারাবছর এই 102 অ্যাম্বুলেন্স প্রসূতি মায়েদের ও শিশুদের বিনা পয়সায় পরিষেবা দিয়ে থাকে । সেই জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ এই GVK EMRI 102 অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেওয়া এই সংস্থা । কিন্তু কোরোনার মতো প্যানডেমিক দেখা দেওয়ায় এই অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে COVID অ্যাম্বুলেন্স হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারপর থেকেই কোরোনা সংক্রমণের জন্য আতঙ্ক শুরু হয় চালকদের মধ্যেও । আর সেখান থেকেই চালকদের সুরক্ষার ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে ।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর অ্যাম্বুলেন্স চালকদের জন্য কিছু সুরক্ষা ব্যবস্থা করলেও, সেটা পর্যাপ্ত নয় । যদিও 102 অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র পরিষেবা। সেক্ষেত্রেও এই সংস্থার চালকদের সুরক্ষা নিয়ে অনেক গাফিলতির অভিযোগ উঠে এসেছে । ইতিমধ্যেই এক 102 অ্যাম্বুলেন্স চালককে কোরোনা সন্দেহে চুঁচুড়া আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
এক 102 অ্যাম্বুলেন্স চালক সৌমেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের কাছে কোন মাস্ক ও PPE নেই । হাসপাতালের তরফ থেকে একটা করে রেইনকোট দেওয়া হয়েছে । সেই একটাই রেইনকোট সকলে পরে ডিউটি করছি । COVID অ্যাম্বুলেন্স ডিউটি করার পর আমরা অনেক সময়ই অন্য অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে থাকি । যেহেতু আমাদের থাকার ব্যবস্থা নেই বাধ্য হয়ে অন্য অ্যাম্বুলেন্সে এই থাকতে হয়। আমরা যেহেতু অন্যান্য সময় 102-এর অন্য অ্যাম্বুলেন্সে সময় কাটাচ্ছি তাই জামাপ্যান্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে না। সেখানেই সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আমাদের দাবি যে সংস্থা GVK EMRI 102 অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেয় । তারাই আমাদের সুরক্ষার সঠিক জিনিস প্রদান করুক । যাতে আমরাও ডিউটি করতে পারি ।"
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যদিও 102 অ্যাম্বুলেন্সের প্রোগ্রাম ম্যানেজার রাজা খান বলেন, "COVID অ্যাম্বুলেন্সের জন্য মোট ২৮জন চালক এবং অ্যাটেনডেন্ট রাখা হয়েছে । PPE কিট প্রতিটি গাড়িতে দুটি করে দেওয়া হয়েছে । আমাদের অফিস থেকে স্যানিটাইজার ও মাস্ক দেওয়া হচ্ছে । কিছু সমস্যা আছে লকডাউনের জন্য । তবে চালকদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা এখনই করা সম্ভব না । তাদেঁর আসা-যাওয়ার সমস্যা হচ্ছে একটু ।" তবে তিনি স্বীকার করে নেন লকডাউনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সে কোনও ডিভাইডার তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না।