হুগলি, 20 জুন : একশো দিনের কাজ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ । হুগলির চারটি তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে একশো দিনের কাজের 308.28 লাখ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে । জেলাশাসক দপ্তরের তরফে রিপোর্ট তলব করা হয় হুগলি জেলার তিনটি ব্লকের BDO-কে । BDO-কে এই নির্দেশিকায় সেই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হুগলি জেলা প্রশাসন ।
জানুয়ারির 22 -24 তারিখ কেন্দ্রীয় গ্ৰামোন্নয়ন দপ্তরের পক্ষ থেকে হুগলি জেলার কয়েকটি পঞ্চায়েতে একশো দিনের প্রকল্পের কাজের সমীক্ষা হয় । তাঁদের পর্যালোচনায় চারটি গ্ৰাম পঞ্চায়েতে বিপুল পরিমাণে আর্থিক অসংগতি লক্ষ্য করা গেছে । রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তরের কাছে সেই টাকা ফেরত চাওয়া হয় । হুগলির পোলবা দাদপুর ব্লকের রাজহাট পঞ্চায়েত, সাটিথান পঞ্চায়েত, ধনেখালির বেলমুরি পঞ্চায়েত এবং বলাগড়ের সোমরা 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় 308.28 লাখ টাকার আর্থিক অসংগতি ধরা পড়েছে । জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্লকের BDO ও প্রকল্প আধিকারিককে নির্দেশ দেওয়া হয় টাকা ফেরত দিতে। দোষীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে । পঞ্চায়েত স্তরে যেহেতু একশো দিনের কাজ নির্মাণ সহায়করা দেখাশোনা করেন তাই তাঁদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগের আঙুল উঠেছে ।
অন্যদিকে হুগলি জেলার সব নির্মাণ সহায়করা একটি ফোরাম তৈরি করেন । আগামীকাল DM-কে তাঁরা ডেপুটেশন দেবেন ।
হুগলি জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তী বলেন, একশো দিনের কাজ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের টিম পরিদর্শনে এসেছিল । সেখানে 4টি পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজের হিসাব নিয়ে গরমিলের অভিযোগ এনেছে তারা । মনোজবাবু বলেন, "কাজ যে হয়েছে সেটা স্পট ভিজ়িট করলেই বুঝতে পারবেন । একশো দিনের কাজ যাঁরা করেন তাঁদের মধ্যে অনেক বয়স্ক মানুষও কাজ করেন । যার জন্য অনেক সময় একশো শতাংশ আউটপুট পাওয়া যায় না । আর টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ফেলা হয় । তাই কাজ নিয়ে বা টাকা কারচুপির কোনও প্রশ্নই ওঠে না । " তিনি জানান, ছবিসমেত কাজের খতিয়ান দেওয়া বাধ্যতামূলক । কতজন কাজ করছে ? তার মধ্যে মহিলা কতজন রয়েছেন বা পুরুষ কতজন রয়েছেন সমস্ত রিপোর্ট পাঠাতে হয় প্রতিদিন । পশ্চিমবঙ্গ পর পর একশো দিনের কাজে দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছে । এটাই হয়তো কেন্দ্রীয় সরকারের গাত্রদাহ । তিনি আরও বলেন, "টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারটা অবশ্যই আধিকারিক লেভেলে আলোচনা হবে । তবে আগে পর্যালোচনা করে দেখা উচিত কাজ কতটা হয়েছে । তবে কাজ হয়েছে তার প্রমাণ রয়েছে । কেন্দ্র রাজ্য সরকারকে কালিমালিপ্ত করার জন্যই এটা করেছে । "
ADM যে টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সেবিষয়ে মনোজবাবু বলেন, " ADM-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাই তিনি চিঠি পাঠিয়েছেন । ADM নিজেও এলাকা পরিদর্শন করেছেন । টাকা ফেরত দিতে হলে জন সাধারণকে দিতে হবে । কারণ টাকা তো সরাসরি একশো দিনের কর্মী যাঁরা, যাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাঁদের কাছে চলে গেছে । " তিনি জানান, আগে কেন্দ্র গ্রাম পঞ্চায়েতকে টাকা দিত । গ্রাম পঞ্চায়েত কাজ করিয়ে টাকা দিত শ্রমিকদের । এখন টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি করা সিস্টেম অনুযায়ী শ্রমিকদের কাছে পৌঁছায় । টাকা কোনও পঞ্চায়েত কর্মী বা প্রধানের কাছে যায় না । তাহলে তাঁর প্রশ্ন ফেরত দেবে কে? কেন্দ্রীয় সরকারের যা নিয়ম আছে সেই নিয়মেই একশো দিনের কাজে টাকা খরচ হয়েছে । তাই প্রয়োজনে তদন্ত করে দেখুক । মনোজবাবুর অভিযোগ, এটা কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে বদনাম করার জন্য করছে ।
অবশ্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও উত্তর না পাওয়া গেলেও হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেহেবুব রহমান বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্যাঁচে ফেলতে চাইছে রাজ্য সরকারকে । "