চন্দননগর, 29 ডিসেম্বর : চন্দননগর-সহ রাজ্যের 4টি পৌরনিগমের ভোট ঘোষণা করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ৷ 2022 সালের 22 জানুয়ারি ভোটের প্রস্তুতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি দেওয়াল লিখনে নেমে পড়েছে ৷ শাসকদল উন্নয়নকেই হাতিয়ার করেছে নির্বাচনী প্রচারে । অন্যদিকে তৃণমূলের সন্ত্রাস ও নির্বাচিত পৌরবোর্ড ভাঙা, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রচারে নেমেছে বিরোধীরা (Chandernagore Municipal Corporation at a glance) ।
চন্দননগর কর্পোরেশনে ভোট হয়েছিল 2015 সালে । 33 টি ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেস 23 টি, বামদল 9টি এবং বিজেপি 1টি ওয়ার্ডে জয়ী হয় । মেয়র হন রাম চক্রবর্তী । 2018-র 23 অগস্ট শেষ মেয়র ইন কাউন্সিলের বৈঠক হয় । তাতে এই বোর্ড নাগরিক পরিষেবা ব্যর্থ মেনে নিয়ে 24 তারিখ খারিজ হয়ে যায় চন্দননগর পৌর বোর্ড । জনগণের ভোটে নির্বাচিত বোর্ড নজিরবিহীন ভাবে মেয়াদ শেষের আগেই ভেঙে দেওয়া হয় ।
তৃণমূল কাউন্সিলরদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায় । দলের শীর্ষ নেতৃত্ব একাধিকবার আলোচনা করেও দ্বন্দ্ব মেটাতে পারেনি । ফলে 23 জন কাউন্সিলর থাকা সত্ত্বেও বোর্ড ভেঙে যায় । খারিজ হয়ে যায় কাউন্সিলরদের পদ । পুর কমিশনার হিসাবে স্বপন কুণ্ডুকে বোর্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পদের দায়িত্ব দেওয়া হয় ।
মূলত মেয়র পারিষদদের সঙ্গে ডেপুটি মেয়র জয়ন্ত দাস, কাউন্সিলর জয়দেব সিংহ, অজয় ঘোষদের মতো 15 জন তৃণমূল কাউন্সিলর চিঠি দিয়ে দলের শীর্ষনেতৃত্বকে জানায়, রাম চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পৌর বোর্ড নাগরিক পরিষেবা দিতে পারেনি । ছ'মাস পর বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পাঁচ জনকে মনোনীত করে । রাম চক্রবর্তী এবার চেয়ারম্যান হন ।
চন্দননগর পৌর নির্বাচন 22 জানুয়ারি, কী বলছেন বিভিন্ন দলের নেতারা আরও পড়ুন : Stagnant water problem at Baidyabati : জমা জলে জেরবার হুগলির বৈদ্যবাটির বাসিন্দারা, পৌর প্রশাসককে ঘিরে বিক্ষোভ
তবে নির্বাচনের নিরিখে 2015 তুলনায় তৃণমূলের ভোট বেড়েছে । সেই সমীক্ষা তুলে ধরল ইটিভি ভারত । পূর্ণাঙ্গ চন্দননগর পৌরনিগম গঠিত হয় 1995 সালে ।
- ওয়ার্ড সংখ্যা- 33
- বর্তমানে বরোর সংখ্যা- 5
2015 পুরসভা ভোটের ফল
তৃণমূল কংগ্রেস - 23
বামফ্রন্ট - 9
বিজেপি - 1
2019 লোকসভা ভোট (ওয়ার্ড ভিত্তিক ফল)
তৃণমূল কংগ্রেস - 22
বিজেপি - 11
2021 বিধানসভা ভোট (ওয়ার্ড ভিত্তিক ফল)
তৃণমূল কংগ্রেস - 30
বিজেপি- 3
আরও পড়ুন : Firing At Bansberia: প্রাক্তন পৌরপ্রধানের বাড়ির সামনে চলল গুলি
দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের ভোট বেড়েছে চন্দননগরে । ঘাসফুলের দাবি, উন্নয়নের নিরিখে প্রায় বিরোধী শূন্য হবে বাইশের পৌর নির্বাচন । কলকাতা পৌরনিগমে ধরাশায়ী হয়েছে বিরোধীরা । এই নির্বাচনেও বিরোধীরা প্রভাব ফেলতে পারবে না ৷
তৃণমূল কংগ্রেসের উন্নয়ন
চন্দননগর পৌরনিগমের প্রাক্তন মেয়র রাম চক্রবর্তীর দাবি, গোটা রাজ্যের সঙ্গে চন্দননগরও উন্নয়নে পিছিয়ে নেই ৷
- এতদিন পর্যন্ত শহরে একটাই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ছিল ৷ এবার গোড়াই চণ্ডীতে আরেকটি প্লান্টের কাজ শেষের পথে ৷
- ফ্লাইওভার নির্মাণের ফলে যানবাহন চলাচলে সুবিধা ৷
- মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, খুব শিগগিরি চন্দননগরে আন্ডারগ্রাউন্ড ইলেকট্রিক লাইনের কাজ শুরু হবে ৷ কারণ এখানে ওভারহেড ইলেকট্রিক লাইন থাকায় জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় আলোর সমস্যা মিটবে ৷
- হেরিটেজ কমিশনের অর্থে লালদিঘির ধারে সৌন্দর্যায়ন ৷
- চন্দননগরে প্রায় সব রাস্তার অবস্থাই ভালো ৷ সম্প্রতি বর্ষায় যেটুকু ক্ষতি হয়েছে, তাও দ্রুত মেরামতি করা হবে ৷
- ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে পর্যটকদের জন্য আবাস তৈরির কাজ চলছে ৷
- ইন্দ্রনীল সেনের উদ্যোগে আলো হাব নির্মাণ ৷
- নিকাশি নালা সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকারের কাছ থেকে 1 কোটি টাকা পেয়েছে এই পৌরনিগম ৷ আরও অর্থসাহায্যের প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে ৷
আরও পড়ুন : Kesoram Rayon Factory Reopens : শ্রমিক অসন্তোষ মিটিয়ে 6 মাস পর খুলল হুগলির রেয়ন কারখানা
বামফ্রন্ট
চন্দননগর পৌরনিগমের প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা রমেশ তেওয়ারি ইন্দ্রনীল সেনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "মাথার উপরে যতদিন উনি ছড়ি ঘোরাচ্ছেন, যতদিন উনি থাকবেন, আবারও নির্বাচিত বোর্ড বেআইনিভাবে ভেঙে দেওয়া হবে । আমরা যে উন্নয়ন কাজ করেছি, সেই পর্যন্ত হয়ে এসেছে ।" তাঁর দাবি, গঙ্গার ঘাট থেকে উড়ালপুল-সহ পার্কগুলি তাদের হাতে তৈরি । ওয়ান্ডারল্যান্ডে পার্কে আলো হাব ও আবাসন এগুলো কিছুই দরকার ছিল না। শহরের মধ্যেই আলোক শিল্পীরা কাজ করছিলেন । কোনও আলোক শিল্পীরাই ওই আলোক হাবে যেতে চাইছেন না । এর জন্য পুরোপুরি দায়ী মন্ত্রী তথা বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন ।
বিজেপি
বিজেপির তরফে পার্থ নারায়ণ ভট্টাচার্য বলেন, "কলকাতা পৌরনিগমে বোমা ও হুমকির মধ্যে দিয়ে দিয়ে যেভাবে ভোট করা হয়েছে, তাতে পরিষ্কার যে বিজেপির অস্তিত্ব আছে ।" গেরুয়া শিবিরের দাবি, চন্দননগরে বোমা, গুলি সন্ত্রাসবিহীন স্বচ্ছ ভোট হলে বিজেপি জিতবে । তৃণমূলের উন্নয়ন কেবলমাত্র ফ্ল্যাট প্রেমোটিংয়ে সীমিত । 2018-য় তৃণমূল একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে বোর্ড ভাঙতে হয়েছিল, অভিযোগ বিজেপি নেতার ।