চন্দননগর, 18 জুন : আলোর শহর চন্দননগর ৷ ছোট ছোট রঙিন লাইট ৷ শিল্পীদের হাতের সূক্ষ্ম কাজ বলে যায় কোনও গল্প ৷ কিংবা ফুটে ওঠে বাস্তব কোনও চিত্র ৷ দুর্গাপুজো হোক কিংবা কালীপুজো ৷ আলোর রোশনাইয়ে সেজে ওঠে চন্দননগর ৷ এখানকার জগদ্ধাত্রী পুজোয় তো মূল আকর্ষণ আলোর কাজ ৷ কিন্তু, করোনার কারণে আলোক শিল্পীদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে ৷
করোনার প্রথম ঢেউ ৷ তারপর আবার দ্বিতীয় ঢেউ ৷ ফলে বাধ্য হয়ে পেশা বদলাছেন শিল্পীরা ৷ গতবছরই বেশিরভাগ শিল্পী পেশা পরিবর্তন করেছেন । আর এবছরের করোনা পরিস্থিতিতে অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর ৷ শিল্পীরা প্রায় সবাই বসে গিয়েছেন ৷ চন্দননগরের আলোক শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে 10 হাজার মানুষ যুক্ত । করোনা আবহে সব কিছু শেষ হতে বসেছে । হাতেগোনা কয়েকজন এই শিল্পকে আকঁড়ে ধরে রেখেছেন বটে । কিন্তু অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছেন ৷ চন্দননগর বাগবাজার থেকে বিদ্যালঙ্কা পর্যন্ত আলোক শিল্পের দোকানগুলি গতবছর থেকেই মুদিখানা, মুরগি ও সবজির দোকান হয়ে গিয়েছে ।
আলোক শিল্পীরা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত কোনও পুজো কমিটি এগিয়ে আসেনি । পুজোর বায়না দিতেও কেউ এগিয়ে আসেনি ৷ অন্যান্য বছরে মে মাসে মধ্যে অনেকটাই কাজ হয়ে যায় । কিন্তু এবারে এখনও কেউ আসেনি ৷ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার নিয়ে কোনও মতে কাঁচামালটুকু তাঁরা কিনছেন । তবুও লাভের মুখ দেখার আশা নেই শিল্পী থেকে ব্যবসায়ীদের । ভারতবর্ষের বাইরেও কাজ হয় তাঁদের ৷ কিন্তু, তাও এখন বন্ধ ৷ এই বিষয়ে আলোক শিল্পী অসীম দে বলেন, "পুজো কমিটিগুলি সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছে ৷ তাই তারা এগিয়ে আসতে চাইছে না ৷ তার উপর যদি তৃতীয় ঢেউ আসে তাহলে কী হবে কিছু বোঝা যাচ্ছে না ৷ পুরোটাই সরকারি সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে ৷"
আরও পড়ুন,মালদা থেকে দিল্লি, ফলের রাজার রাজকীয় যাত্রা
চন্দননগর আলোক শিল্পীরা জানাচ্ছেন, সারা বছর একশো কোটি টাকার উপর লেনদেন হত । কিন্তু এখন সব বন্ধ । চন্দননগর আলোক শিল্পের অ্যাসোসিয়েশনে একশো জন শিল্পী যুক্ত । আবার এঁদের সঙ্গে যুক্ত আরও 20 থেকে 30 জন শ্রমিক ও শিল্পী । কিন্তু বর্তমানে যে কারখানাগুলি কাজ হচ্ছে, সেখানে তিন থেকে চারজন কাজ করছেন । নামমাত্র কাজ করানো হচ্ছে । তাছাড়া, পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ছে ৷ পরিবহণ ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ৷ তবু করোনা পরবর্তী সময়ের দিকে তাকিয়ে কিছুটা আশায় বুক বাঁধছেন অনেকে । করোনার তৃতীয় ঢেউ এলে আদৌ কী হবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না কেউই । যদি সরকারিভাবে পুজো সহ অন্যান্য উৎসবে ছাড় দেয় তাহলেই চন্দননগরের আলোক শিল্প বাঁচবে । নয়তো করোনা চন্দননগরের আলোক শিল্পকে গ্রাস করবে । সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী স্বপ্নের প্রকল্প আলো হাব স্বপ্নই থেকে যাবে ।