শিলিগুড়ি, 8 জুন: টয়ট্রেন! জিনিসটার কথা মাথায় আসলেই প্রথম যে ছবিটা ভেসে উঠে তা হল শৈলরানি দার্জিলিংয়ের বুক চিড়ে চলা খেলনার রেলগাড়ি । যার নাম শুধু রাজ্যে বা দেশে নয় । দেশ-বিদেশের প্রত্যেক পর্যটকদের কাছে এক নামে পরিচিত দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের টয়ট্রেন । বিখ্যাত ওই টয়ট্রেন উত্তরবঙ্গের পর্যটনের মূল কেন্দ্রবিন্দু । 18 দশকে ব্রিটিশ আমলে সমতল থেকে পাহাড়ে ওই টয়ট্রেন পরিষেবা চালু হয় । ভারত স্বাধীনের পর 1999 সালে ইউনেস্কোর তরফ থেকে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়েকে হেরিটেজের শিরোপা দেওয়া হয় । কিন্তু তারপর থেকে সেই শিরোপা ধরে রাখতে অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে চলেছে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ । টয়ট্রেনের হাত ধরে উত্তরের পাশাপাশি রাজ্যের পর্যটন শিল্পে এসেছে আমূল পরিবর্তন । কিন্তু করোনা আবহের জেরে টানা এক বছরের থেকে বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে হেরিটেজ শিরোপাধারী সেই ট্রয়ট্রেন পরিষেবা । যার ফলে অনেকটাই চিন্তিত রেল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি পর্যটনমহলও । এর আগে টানা পাহাড়ে ধস পড়ার কারণে প্রায় তিন থেকে চার বছর বন্ধ ছিল সেই টয়ট্রেন পরিষেবা । সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে পর্যটনের দিকে ফিরে ঘুরে দাঁড়ায় দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে বা ডিএইচআর । সেটির হাত ধরেই ধীরে ধীরে মূলস্রোতে ফিরতে শুরু করে উত্তরের পাশাপাশি পাহাড়ের পর্যটন ব্যবস্থা । কিন্তু করোনার প্রথম ঢেউ থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে থমকে রয়েছে সেই বিখ্যাত টয়ট্রেন পরিষেবা । করোনার আগে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের টানতে নতুন নতুন প্যাকেজ, নতুন নতুন পরিষেবা এবং জয় রাইডের সংখ্যা বাড়িয়েছিল উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ । কিন্তু সেসব এখন বিশবাঁও জলে । করোনা আবহে দীর্ঘদিন ট্রয়ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকায় অনেকটাই হতাশ পর্যটনমহল । যাত্রী এবং পর্যটকদের দেখা না মেলায় লোকোশেডের ভিতরেই একাকী সময় কাটাচ্ছে টয়ট্রেনের ইঞ্জিন এবং কামরাগুলি । তবে করোনা আবহের মাঝেও যাতে ট্রয় ট্রেনের লাইন এবং ইঞ্জিনগুলোর সঠিক দেখাশোনা হয় সেজন্য রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছে পর্যটন সংস্থাগুলি । তাকে আনলক পর্ব আসতেই জোরকদমে ট্রয়ট্রেন পরিষেবা চালু হয় সে দিকেই নজর রাখার আবেদন করা হয়েছে । তবে ধস এবং তারপরে করোনা আবহের জেরে ইউনেস্কোর প্রদান করা সেই হেরিটেজ শিরোপাটি আদৌ ধরে রাখা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে কিন্তু যথেষ্ট সংশয় দেখা দিতে শুরু করেছে । কিন্তু সেই শিরোপা ধরে রাখতে মরিয়া উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ ।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শুভানন চন্দ বলেন, " করোনা অতিমারিতে যাত্রী এবং পর্যটকদের দেখা নেই ৷ যার ফলে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং টয়ট্রেন পরিষেবা এবং পাহাড়ের জয়রাইডগুলি বন্ধ রাখা হয়েছে । কিন্তু প্রতিনিয়ত রক্ষনাবেক্ষণের কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে যাতে করোনার প্রকোপ কেটে গেলেই আমরা ফের সেই পরিষেবা চালু করতে পারি ।’’