শিলিগুড়ি, 30 জুন : করোনা তো রয়েছেই ৷ দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর আবার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা ৷ সর্বক্ষণ মনের মধ্যে ভয় ভয় ভাব ৷ টিকাকরণ চলছে জোরকদমে ৷ তবু মনের অগোচরে খুঁতখুঁতে ভাব ৷ করোনামুক্ত হয়েও শান্তি নেই ৷ দুশ্চিন্তা, ভয়, আতঙ্ক দানা বাঁধছে মনে ৷ আর সেই সঙ্গে বাড়ছে মানসিক চাপ ৷
করোনা থেকে মুক্তির পর ভয়টা রয়েই যাচ্ছে মানুষের মনে ৷ আবার নতুন করে করোনা হবে না তো ? হলে কী করব ? এইসব দুশ্চিন্তা থেকেই দানা বাঁধছে একাধিক মানসিক সমস্যা । নষ্ট হচ্ছে স্মৃতিশক্তি । বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা । দেখা দিচ্ছে অনিদ্রা, হীনমন্যতা । করোনা জয়ীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই ভুগছেন মানসিক সমস্যায় ।
শুধু করোনা মুক্তরাই নন, আরও অনেকের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে এই ধরনের মানসিক রোগের লক্ষণ । কেউ করোনা আবহে কাজ হারিয়েছেন, কারও বেতন কেটে নেওয়া হয়েছে, করোনা বিধির জন্য কারও ব্যবসা-পাট চুলোয় উঠছে , কেউ বা আবার ঘরবন্দী পড়ে রয়েছেন, এই সবের কারণে অনেকেই হীনমন্যতার মতো জটিল মানসিক অবসাদে ভুগছেন । এর থেকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পোস্ট কোভিড সাইকিয়াট্রিক ক্লিনিক ৷
আরও পড়ুন : প্রীতিভোজ নয়, রক্তদান শিবির করে ভাইপোর বিয়ে সারলেন সোনামুখীর বিধায়ক
উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই চালু করে দিয়েছে পোস্ট কোভিড সাইকিয়াট্রিক ক্লিনিক ৷ রাজ্যে প্রথম এই ধরনের কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল ৷ আপাতত কুড়িটি বেড নিয়ে চালু হচ্ছে এই ক্লিনিক ৷
যাঁরা করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার পর মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি হয়েছে এই ক্লিনিক । থাকছে কাউন্সেলিং, মিউজ়িক থেরাপি, মেডিটেশনের ব্যবস্থা । স্বাস্থ্য দফতর থেকে ইতিমধ্যেই 20 লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এই ক্লিনিকের জন্য ।
উত্তরবঙ্গে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক (পাবলিক হেলথ, উত্তরবঙ্গ) চিকিৎসক সুশান্ত রায় বলেন, " সাধারণ মানুষের পাশাপাশি করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের মধ্যে নানারকম মনোরোগের দেখা দিচ্ছে । সেই কারণে এই ক্লিনিক খোলা হয়েছে ।"
উত্তরবঙ্গে মেডিকেলে খুলল পোস্ট কোভিড সাইকিয়াট্রিক ক্লিনিক আরও পড়ুন : ভুয়ো টিকায় প্রতারিতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রয়োজনে চিকিৎসা ব্যবস্থার আশ্বাস
উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক নির্মল বেরা বলেন, "রাজ্যের মধ্যে প্রথম এই বিভাগ চালু করা হল । করোনা থেকে সুস্থ হয়েও বেশিরভাগ রোগীর মধ্যেই নানা রকম জটিল মনোরোগ দেখা দিচ্ছে । প্যানিক অ্যাটাক, স্লিপ ডিজ়অর্ডার, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, আত্মহত্যার প্রবণতার মতো রোগের এখানে চিকিৎসা করা হবে । বহির্বিভাগের পাশাপাশি যে রোগীদের ভর্তি করে চিকিৎসা প্রয়োজন, তাঁদের জন্য আমরা আলাদা করে ভর্তির ব্যবস্থা রেখেছি ।"
বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চিকিৎসক উত্তম মজুমদার বলেন, " করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মোট মানুষের এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে । মানসিক সমস্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে । সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও নানা রকম মানসিক রোগে ভুগছেন করোনা জয়ীরা । এখানে শুধু চিকিৎসাই নয়, এর পাশাপাশি যে রোগীরা আসবেন, তাঁদের উপর গবেষণা করে থিসিস তৈরি করা হবে । এতে ভবিষ্যতে চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক সাহায্য মিলবে ।"