পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Child Trafficking: পাচারের আগে তিন নাবালিকাকে উদ্ধার করে শহরের হিরো টোটো চালক খুরশেদ - শহরের হিরো টোটো চালক

দুই মহিলা পাচারকারীদের হাত থেকে তিন নাবালিকাকে উদ্ধার করে এখন শহরের হিরো টোটো চালক খুরশেদ আলি। তার উপস্থিত বুদ্ধির কারণেই বিদেশ-বিভুঁইয়ে ওই তিন নাবালিকাকে পাচারের আগে উদ্ধার হতে সক্ষম হয়েছে। আর তারপর থেকেই টোটো চালক খুরশেদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ শহরবাসী ও পুলিশ প্রশাসন।

Etv Bharat
Etv Bharat

By

Published : May 18, 2023, 11:14 AM IST

তিন নাবালিকাকে উদ্ধার করে শহরের হিরো টোটো চালক

শিলিগুড়ি, 18 মে: চোপড়ার তিন নাবালিকাকে শিলিগুড়ি নিয়ে এসেছিল লাদাখের দুই মহিলা। শিলিগুড়ি থেকে ট্রেনে তাদের লাদাখে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার তাদের সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেন পেশায় টোটো চালক খুরশেদ আলি। আর উদ্ধারের পর থেকেই খুরশেদ আলির জন্য গর্বিত এলাকাবাসী। দফায় দফায় তাঁর সঙ্গে দেখা করে উদ্ধারের গল্প শুনতে রীতিমতো লাইন পড়ে যাচ্ছে খুরশেদের বাড়ির বাইরে। এদিকে, ওই দুই মহিলা সেওয়াঙ চোণ্ডো ও ইয়াসমিন মালিককে বুধবার দু'দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

অতি সাধারণ জীবন খুরশেদের। শিলিগুড়ি পৌরনিগমের 40 নম্বর ওয়ার্ডের জ্যোতিনগরের বাসিন্দা। বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে, বোন ও মা। আধাভাঙা ঘর। টিনের চালেরও একই অবস্থা। টোটো চালিয়েই সংসার টেনে চলেছেন খুরশেদ। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে শিলিগুড়ির অলিতে-গলিতে টোটো চালিয়ে জীবন সংগ্রাম করে চলেছেন তিনি। মঙ্গলবারও আর পাঁচটা দিনের মতোই ভাড়ার জন‍্য বিধান মার্কেটে অপেক্ষা করছিলেন। ভাড়ার জন‍্য ঘুরতে ঘুরতে হংকং মার্কেটের সামনে পৌঁছলে তিন নাবালিকা শিশু-সহ ওই দুই অভিযুক্ত মহিলা খুরশেদেরর টোটোতে চাপে।

তারা বর্ধমান রোডের একটি হোটেলে নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু টোটোতে চাপার পর থেকেই ওই তিন নাবালিকা ক্রমাগত কেঁদেই চলছিল। আর তাতেই সন্দেহ দানা বাঁধে খুরশেদের মনে। এরপরই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন খুরশেদ। এই ধরনের পরিস্থিতি কোনওদিন সম্মুখীন না-হওয়ায় কিছুটা আতঙ্কেও ছিলেন তিনি। তবে তা কাটিয়ে মহিলাদার জিজ্ঞেস করেন 'ইয়ে বাচ্চিলোগো ইতনা কিউ রোরেহি হ্যায়?' অর্থাৎ 'এই বাচ্চারা এত কাঁদছে কেন?' কিন্তু উত্তর আসে 'আপকো ক্যায়া। ভাড়া ঠিকঠাক মিল যায়েগা' অর্থাৎ 'আপনার কী, ভাড়া ঠিকঠাক পেয়ে যাবে'৷

আরও পড়ুন:টোটো চালকের তৎপরতায় বানচাল নাবালিকা পাচার!

এই শুনে আরোও সন্দেহ বাড়ে তার। কিছু না-ভেবে অলিগলি দিয়ে সোজা এয়ারভিউ মোড়ের ট্রাফিক পুলিশের অফিসে নিয়ে চলে যায়। সেখানে পুলিশকে সম্পূর্ণ ব‍্যাপরটি খুলে বলে। তারপর পুলিশ বাকি কাজ করে। খুরশেদ আলি বলেন, "যাত্রীর জন্য দাঁড়িয়ে থাকার সময় ওই দুই মহিলা ও তিন নাবালিকা টোটোতে ওঠে। কান্নাকাটিতে আমার সন্দেহ হয়। এরপরই সোজা পুলিশের কাছে নিয়ে যাই। ভালো লাগছে নাবালিকাদের বাঁচাতে পেরে।"
অন‍্যদিকে, ছেলের এই কাজে খুশি মা মাফরিজা খাতুন। প্রথমে যখন শিলিগুড়ি থানা থেকে তাঁর কাছে খবর আসে যে ছেলে থানায় রয়েছে, ওই খবর শুনেই তিনি অচৈতন্য হয়ে মাটিতে পরে যান ৷

এরপর সবটা শোনার পর তাঁর বুক গর্বে ভরে যায়। তিনি বলেন, "আমরা খুব সাধারণ গরীব খেটে খাওয়া পরিবার। শত কষ্টেও নিজের বাচ্চাদের আগলে রাখি। ছেলে এই কাজ করায় খুব ভালো লাগছে।" শিলিগুড়ি উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার। দিনে দেশ-বিদেশের কতই না-লোকের আনাগোনা এই শহরে। পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি অপরাধ রোধে সাধারণ মানুষও এগিয়ে আসে। এমনই পরিচিতি দিলেন খুরশেদের মতোই একজন দায়িত্ববান নাগরিক ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details