দার্জিলিং, 2 জুলাই: মণিপুরে ভূমিধসে মৃত্যু হয়েছে একাধিক সেনা জওয়ানের । ধসের কবলে পড়েছে গোটা একটা সেনা ক্যাম্প ৷ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে । এখনও পর্যন্ত 26 জন সেনার মৃতদেহ উদ্ধার করা গিয়েছে । বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও সেনা যৌথ ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ।
জানা গিয়েছে, মৃত জওয়ানদের মধ্যে অনেকেই উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের বাসিন্দা ৷ এঁদের মধ্যে 8-9 জন দার্জিলিং জেলার । টুপুল রেলওয়ে ইয়ার্ডে ধসে রাজ্যের মৃত সেনাদের খবর পাওয়ামাত্র টুইট করে দুঃখপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন । অন্যদিকে, বিজয় মিছিল স্থগিত রেখেছেন জিটিএ নির্বাচনে জয়ী ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনিত থাপা । তিনি জানিয়েছেন, এখন পাহাড়ের কোথাও কোনও বিজয় মিছিল হবে না । এটা গোটা পাহাড়ের কাছে জন্য দুঃখের সময় । পাশাপাশি দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মৃত জওয়ানদের পরিবারের পাশে থাকার আবেদন জানিয়েছেন তিনি ।
শনিবার সকালে মৃত ন'জন সেনার শবদেহ বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে মণিপুর থেকে শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দরে নিয়ে আসার কথা রয়েছে । মোট 11 জন সেনার দেহ দু'টি পৃথক হেলিকপ্টারে নিয়ে আসা হবে । সেখানে তাঁদের শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন সেনা আধিকারিক থেকে প্রশাসনিক কর্তারা । এরপর সড়কপথে দেহ তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে (Body of Jawans died in Manipur Landslide to reach Darjeeling Hill) ।
মণিপুরের টুপুলে ভূমিধসে প্রাণ হারিয়েছেন দার্জিলিংয়ের সঞ্জয় ওঁরাও আরও পড়ুন: মণিপুরের ধসে প্রাণ হারালেন জলপাইগুড়ির সেনা জওয়ান শংকর ছেত্রী
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর শোকবার্তায় তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করে জানিয়েছেন, "মণিপুরের ভূমিধসে দার্জিলিংয়ের (107 টেরিটোরিয়াল আর্মি) 9 সেনা জওয়ান মারা গিয়েছেন ৷ এই খবরে আমি গভীর শোকাহত ৷ তাঁদের পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা রইল ৷ মৃতদের পরিজনকে সব রকম সাহায্য করা হবে ৷"
এই খবরের পর থেকে উদ্বেগে দিন কাটছে শিলিগুড়ি সংলগ্ন বাগডোগরার ককলপুরের বাসিন্দা ছিলেন সঞ্জয় ওরাঁওয়ের পরিবারের । মণিপুরের টুপুল থেকে এক সেনা আধিকারিক মৃত জওয়ানের পরিবারকে জানান যে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছে । স্বভাবতই শোকবিহ্বল গোটা পরিবার । অথচ সেনা ও প্রশাসনের পক্ষে মৃত জওয়ানদের দেহ ফিরিয়ে নিয়ে আসার তালিকায় নাম নেই সঞ্জয় ওরাঁওয়ের । এতে দুশ্চিন্তায় তাঁর পরিজনরা ৷
2017-য় সেনায় চাকরি পেয়েছিলেন সঞ্জয় । টেরিটোরিয়াল আর্মির 107 ব্যাটেলিয়নে কর্মরত ছিলেন । গত বছর ডিসেম্বরে বাড়িতে এসেছিলেন । এবছর সেপ্টেম্বরে আসার কথা ছিল । সেনার তরফে জানা গিয়েছে, কার্শিয়াং মহকুমার রোহিনী গৈরি গাঁওয়ের বাসিন্দা 18 ডোগরা ব্যাটেলিয়নের হাবিলদার মিলন তামাং ও রঙ্গবুলয়ের রঙ্গবুল গোর্খা বস্তির বাসিন্দা নায়েব সুদেবার সীতারাম রাই, দার্জিলিংয়ের মেরিবঙয়ের চুংথুংয়ের বাসিন্দা 19 ডোগরা ব্যাটেলিয়নের নায়েক দিওয়াঙ্কর থাপা, রঙ্গলি রঙ্গলিয়টের বাসিন্দা 5 অসম রাইফেলস-এর রাইফেলম্যান বেঞ্জামিন, সিংমারি নবীন গ্রামের বাসিন্দা 3/1 গ্রনেডিয়ার্স ব্যাটেলিয়নের রাইফেলম্যান মার্কাস গুরুং, মিরিকের মুরমা মারাধুরার বাসিন্দা 13 জাক রাইফেলস ব্যাটেলিয়নের লিঙ্কম্যান বিশাল ছেত্রী, কার্শিয়াংয়ের গৌরীশঙ্কর চা বাগানের বাসিন্দা 15 জাক ব্যাটেলিয়নের হাবিলদার বেধ্যান রাই, হ্যাপি ভ্যালি চা বাগানের বাসিন্দা 5/9 গ্রেনেডিয়ার্সের লিঙ্কম্যান ভূপেন রাই, নাগরিসপুরের নাগারি চা বাগানের বাসিন্দা 2/1 গ্রেনেডিয়ার্স ব্যাটেলিয়নের রাইফেলম্যান লাদুপ তামাং, জলপাইগুড়ির কলাবাড়ির খেরকাটা বস্তির বাসিন্দা 3 অসম রাইফেলস ব্যাটেলিয়ন-এর রাইফেলম্যান শঙ্কর ছেত্রী ও উত্তর সিকিমের লিন্দগেমের বাসিন্দা 12 রাজপুত রাইফেলস-এর নায়েক শেরিং লেপচার দেহ নিয়ে আসা হবে ।
আরও পড়ুন: মণিপুরের ধসে থমকে ইজেই নদীর গতিপথ, প্লাবনের আশঙ্কা; দুর্ঘটনায় মৃত বেড়ে 14