গঙ্গাসাগরে কৃষ্ণ প্রেমের কাছে হার মানল বিদ্বেষ গঙ্গাসাগর, 19 জানুয়ারি: 'যুদ্ধ মানে রক্ত ক্ষয়' ৷ যুদ্ধ মানে লক্ষ লক্ষ মানুষের বলিদান ৷ যুদ্ধ কোনও কিছুর সমাধান নয়! আর যুদ্ধ নয় এই বিশ্বে বিরাজ করুক চিরশান্তি। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ 10 মাস 26 দিন অতিক্রান্ত (Russia-Ukraine War)। যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন দুই দেশের বহু মানুষ। এবার এই ধ্বংসের আবহে বিশ্ব শান্তির বাণী নিয়ে গঙ্গাসাগরে হাজির রাশিয়া ও ইউক্রেনের সন্ন্যাসীরা।
এমনিতে দুই দেশের মানুষ একে অপরের দিকে তাকালে যেন চোখ থেকে বিতৃষ্ণা ঝরে পড়ে । কিন্তু গঙ্গাসাগরে একসঙ্গে কৃষ্ণ নামে মজেছেন রাশিয়া ইউক্রেনের সন্ন্যাসী রুমেল গেরুয়াভ ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ দাস। যুদ্ধ ছেড়ে কৃষ্ণ নাম করছেন দুই দেশের দুই নাগরিক। যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস পরেই রাশিয়ার নাগরিক রুমেল গেরুয়াভ কৃষ্ণ নামে দীক্ষিত হয়ে ভারতবর্ষে চলে আসেন। ভারতবর্ষের মায়াপুরের ইসকনে এতদিন ধরে কৃষ্ণ নাম সংকীর্তনে মেতে থাকতেন তিনি।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের নাগরিক বীরেন্দ্রকৃষ্ণ দাস বন্দুক ও গোলাগুলি ছেড়ে ভারতবর্ষের মায়াপুরে চলে আসেন এবং সেখানেই দীক্ষিত হয়ে এখন সন্ন্যাসী। রুমেল গেরুয়াভ ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ দাস দু'জনেই একইসঙ্গে কৃষ্ণ নাম ভজন ও একই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় হরিনাম সংকীর্তনে শামিল হন। দুই দেশের মধ্যে যতই গোলাগুলির আওয়াজ থাকুক না-কেন যতই প্রাণ ঝরে পড়ুক না-কেন বিশ্ব শান্তির বার্তা নিয়ে গঙ্গাসাগরে এসে পৌঁছেছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের বহু সন্ন্যাসীরা। তাঁরা চাই অবিলম্বে যুদ্ধে থেমে যাক বিশ্বে বিরাজ করুক শান্তি।
আরও পড়ুন:হ্যাম রেডিয়োর মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে গঙ্গাসাগর মেলা
ইসকন সূত্রে খবর, এবার গঙ্গাসাগর মেলায় 15টি দেশ থেকে 60জন বিদেশি সন্ন্যাসী গঙ্গাসাগর মেলায় এসেছিলেন। গঙ্গাসাগর ইসকনের ছাউনিতে কৃষ্ণ নামের মজেছিলেন তারা। টিভির পর্দায় চোখ রাখার সুযোগ না-থাকলেও যুদ্ধের খবর তাঁরাও পাচ্ছেন নিয়মিত। তবু রুশ-ইউক্রেন বৈরিতা ভুলে সারাক্ষণ বিশ্বশান্তি, সংহতি ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধের চিন্তায় মগ্ন তাঁরা। হাসি মুখে উপভোগ করছেন বাংলার গঙ্গাসাগর মেলা। লাখো মানুষের ভিড়েও তাঁদের মুখে হাসি। চেহারায় তৃপ্তির ছাপ। নিজেরাই জানালেন মাস দুয়েক হয়ে গিয়েছে তাঁদের ভারত সফর। বাংলা খুব ভালো লাগছে। মায়াপুর তো বটেই কলকাতাও তাঁদের মনে ধরেছে। খুব ভালো লাগছে মেলার ভিড়। গঙ্গাসাগর মেলায় এসে বাংলাটা ভালো বুঝতে পারছেন তাঁরা ৷
উচ্চারণে রয়েছে রুশ টান। কেন যুদ্ধ হচ্ছে সেটাও তাঁদের কাছে দুর্বোধ্য। তাঁরা শুধু চান, বিশ্বশান্তি। সেই শান্তির সন্ধানেই তাঁরা দিক্ষিত হয়েছেন ইসকনে। ঘর ছেড়েছেন। জন্মভূমি তাঁদের ইউক্রেন হোক বা রাশিয়া, এখন তাঁরা শুধু বিশ্বশান্তির আরাধনাতেই মগ্ন। ইসকনের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাসের মতে, "বিদেশি ভক্তদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। সন্নাসীরা সকলেই মগ্ন মানবজীবন ধন্য করার ধ্যানে রয়েছেন।
আরও পড়ুন:গঙ্গাসাগর মেলায় হারিয়ে যাওয়া পুণ্যার্থীদের বাড়ি ফেরাচ্ছে হ্যাম রেডিয়ো
রুমেল গেরুয়াভ রাশিয়ার বাসিন্দা বলেন, "অবিলম্বে যুদ্ধ থেমে যাক বিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক। মধুর কৃষ্ণ নাম যেন বিশ্বে ঘোষিত হয়, পুতিন আমার প্রেসিডেন্ট নয়, আমার প্রেসিডেন্ট ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। কৃষ্ণ নামে বিলীন হয়ে ওঠুক বিশ্ব। আমরা এখানে ভালো রয়েছি কৃষ্ণ নাম করে মানুষের সঙ্গে ভালোভাবেই মিশে উঠেছি। গঙ্গাসাগর মেলা আমরা ভালো উপভোগ করছি। গঙ্গাসাগরের স্নান করে আমরা পবিত্র হয়ে গিয়েছি। আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভাবধারায় দীক্ষিত। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষ্ণ নামের মহিমা আমরা প্রচার করতে যাব।"
অন্যদিকে, ইউক্রেনের বাসিন্দা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ দাস তিনি বলেন, "যুদ্ধ কোনও কিছু সমাধান নয় আমরা চাই যুদ্ধ থেমে যাক। ইউরোপের বহু দেশগুলিতে টাকা বেশি থাকতে পারে কিছু ভারতবর্ষে শান্তি ও প্রেম রয়েছে। সনাতন ধর্ম শ্রেষ্ঠ ধর্ম। আমরা সবাই একসঙ্গে কৃষ্ণ নাম ভজন করি। কৃষ্ণ নামের মহিমায় আমরা চিরশান্তি লাভ করি। গঙ্গাসাগরে এসে আমাদের খুব ভালো লাগছে। এখানে মানুষ খুবই বন্ধুত্বসুলভ ৷ আমাদের সঙ্গে সুখ-দুঃখে মিশে থাকে।