আধুনিক যুগে হারিয়ে যেতে বসেছে সার্কাস ডায়মন্ড হারবার, 12 মার্চ: একসময় সার্কাস (Circus) ছিল বিনোদনের বড় মাধ্যম । শীতকাল পড়লেই বিভিন্ন জায়গায় দেখা যেতে সার্কাসের তাবু ৷ আর সেখানে ভিড় জমাত 8 থেকে 80 সকল বয়সের মানুষজন ৷ কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে অস্তিত্ব সংকটে সার্কাসের ৷ এখনকার দেখা যায় না অত বেশি সার্কাসের তাবু ৷ তবুও অস্তিত্বের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সার্কাস শিল্প ৷ এমনই লড়াইয়ে সামিল 'ডায়মন্ড সার্কাস'ও ৷ বর্তমানে সার্কাসের তাঁবু পড়েছে দক্ষিণ 24 পরগনার ডায়মন্ড হারবারের কলাগাছিয়াতে ৷ সেখানেই তাদের লড়াইয়ের কাহিনী শুনল ইটিভি ভারত ৷
সার্কাসের তাঁবু পড়েছে ডায়মন্ড হারবারে করোনার অতিমারীর প্রভাব পড়েছে সার্কাস শিল্পেও সার্কাসে নিষিদ্ধ জীবজন্তু: সার্কাসে জীবজন্তু নিষিদ্ধ হয়েছে অনেক বছর হল ৷ আর তার প্রভাব যে কিছুটা হলেও এই শিল্পে পড়েছে, তা মেনে নিয়েছেন ডায়মন্ড সার্কাস কোম্পানির ম্যানেজার মোল্লা সাদেক রহমান । তিনি বলেন, "আগে বাঘ, সিংহ, হাতির গর্জন শুনলেই মানুষ টের পেয়ে যেত সার্কাসের আসর বসেছে । এখন সেসব অতীত । তবু, আমরা দর্শকদের মনোরঞ্জনে কোনও খামতি রাখিনি । সার্কাসকে ঘিরে সাধারণ মানুষের যে উৎসাহ উদ্দীপনা রয়েছে, তাতে আশা করছি এই শিল্পের সুদিন ফিরবে অদূর ভবিষ্যতে ।"
একসময় সার্কাস ছিল বিনোদনের বড় মাধ্যম প্রয়োজন সরকারি সাহায্যের: সরকারি সাহায্য ছাড়া এই সার্কাস হারিয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে ৷ কারণ করোনা পরিস্থিতি সবকিছু যেন ওলটপালট করে দিয়েছে । টানা দু'বছর অন্যান্য সবকিছুর সঙ্গে এই শিল্পও মুখ থুবড়ে পড়েছে । পেটের তাগিদে অনেকেই আবার পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন । লোকসানে চলায় বহু সার্কাস কোম্পানির ঝাঁপও বন্ধ হয়ে গিয়েছে । যেখানে 2019 সালে সার্কাস কোম্পানির সংখ্যা ছিল 300-এরও বেশি ৷ এখন বর্তমানে হাতে গোনা 50টি সার্কাস কোম্পানি জীবিত রয়েছে । বেশ কয়েকটি সার্কাস কোম্পানি বর্তমানে টিমটিম করে জ্বলছে । তারই একটি হল 'ডায়মন্ড সার্কাস' ।
শীতকাল পড়লেই বিভিন্ন জায়গায় দেখা যেতে সার্কাসের তাবু করোনা পরিস্থিতির প্রভাব:করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া এই সার্কাস কোম্পানিগুলি । তবে ইন্টারনেটের যুগে সার্কাসের কদর কমায় দর্শক টানতে ইতিমধ্যে নতুন ভাবনাও আনতে হয়েছে তাদের ৷ দিনদিন এর কদর কমতে থাকায় চিন্তা বেড়েছে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত কয়েকশো শিল্পীর । পেটের তাগিদে প্রতিনিয়ত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা । এই ভেবে যে, একদিন আবার সার্কাসের সুদিন ফিরবে । মানুষ প্রাধান্য দেবে শিল্পীর মাহাত্ম্যকে । প্রাচীন এই খেলাকে বাঁচাতে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের একযোগে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ ও সার্কাস কোম্পানিগুলি ।
সার্কাসের ভবিষ্যৎ: গ্রাম বাংলায় একসময় সার্কাস অন্তপ্রাণ ছিল মানুষ ৷ জীবজন্তু থেকে জিমন্যাস্টিক, স্টান্টবাজির রকমারি খেলা দেখতে লোকজন ভিড় করতেন সার্কাসের শোগুলিতে । মজাও পেতেন দর্শকরা । এখন অবশ্য কেন্দ্ৰীয় সরকারের নির্দেশে সার্কাসে জীবজন্তু পুরোপুরি নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে । রয়েছে শুধু স্টান্টবাজি, জিমন্যাস্টিক এবং জোকারের বিভিন্ন মজাদার খেলা । তবে, সার্কাসে জন্তু জানোয়ার নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ায় একদিকে শো-এর সংখ্যা যেমন কমেছে । পাশাপাশি, রুটি-রুজিতেও টান পড়েছে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত শিল্পীদেরও ।
দর্শক টানতে আনা হচ্ছে আফ্রিকান জিমন্যাস্টদের আফ্রিকান জিমন্যাস্টদের রমরমা: বর্তমানে সার্কাসের ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে রয়েছে আফ্রিকান জিমন্যাস্টদের হাতে । এক আফ্রিকান জিমন্যাস্ট বলেন, "লকডাউনের সময় সার্কাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । আমরা দেশে ফিরে গিয়ে ছোট ছোট ব্যবসা শুরু করেছিলাম । সার্কাস শুরু হতে আবার এই মুখি হয়েছি আমরা । সার্কাসকে বাঁচিয়ে রাখতে আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য ৷ এছাড়াও রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকার সার্কাসের শিল্পীদের বিশেষ সাহায্য করলে । অন্তত হারিয়ে যাওয়া বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম সার্কাস আবারো পুনরায় উজ্জীবিত হতে পারে ।"
আরও পড়ুন:জৌলুস হারিয়েছে বহুদিন আগেই, এবার ওটিটি-র দাপটে অবলুপ্তির পথে সার্কাস!