কোচবিহার, 18 অগাস্ট: গ্রামে হু হু করে বাড়ছে কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা । আর এই আতঙ্কে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে কৃষিক্ষেত্রে । সময় পেরিয়ে গেলেও পাটের আঁশ ছাড়ানোর কিংবা ধানের চারা লাগানোর জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না । শ্রমিক না পাওয়ায় জলাশয়েই পড়ে রয়েছে পাট । ধানের বীজতলা পড়ে রয়েছে জমিতেই । এই পরিস্থিতি বেশিদিন চললে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছেন কোচবিহার জেলার চাষিরা ।
কৃষি প্রধান জেলা কোচবিহার । এই জেলার 12টি ব্লকেই পাট চাষ হয় । বর্তমানে বিভিন্ন জলাশয়ে পড়ে রয়েছে পাট । অন্য বছর এই সময়ে পাট ধুয়ে আঁশ বের করার কাজ চলে । সেই আঁশ রোদে শুকিয়ে তারপর গোছা তৈরি করে হাটে হাটে গিয়ে বিক্রি করেন কৃষকরা । এবছর পরিস্থিতি আলাদা । কোরোনা আতঙ্কে কোচবিহার জেলার গ্রামগুলিতে শ্রমিক মিলছে না । জেলায় ইতিমধ্যেই কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হাজার পেরিয়েছে । কৃষিক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে দফায় দফায় লকডাউন চললেও আতঙ্কে কৃষিকাজে যোগ দিচ্ছেন না কেউ । ফলে জলাশয়ে পাট গাছ জাঁক দেওয়া থাকলেও তা থেকে আঁশ বের করার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না ।
শ্রমিকের অভাবে বাজারজাত করা যাচ্ছে না পাট চাষিদের বক্তব্য, এখন জলাশয়ে জল ভরতি । এটাই পাট ধোয়ার আদর্শ সময় । কিন্তু কোরোনা আতঙ্কে শ্রমিক মিলছে না । দৈনিক হাজিরা বাড়িয়ে 250 টাকা করা হলেও কোনও লাভ হয়নি ।
জাঁক দেওয়া পাট পড়ে রয়েছে জলাশয়ে কোচবিহারের বড়নাচিনা গ্রামের বাসিন্দা খয়রত আলি বলেন, "কোরোনা আতঙ্কে কাজের লোক মিলছে না । বর্তমানে 500 শ্রমিক দরকার হলেও 50 জন শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না । জলাশয়ে পাট পচে যাচ্ছে । খুব সমস্যায় আছি ।" কোচবিহার এক নম্বর ব্লকের পাটছড়া গ্রামের শ্রমিক কলিনা বিবি বলেন, "কোরোনা সংক্রমণের জেরে অনেকে কাজ করতে আসে না । কিন্তু খেতে তো হবেই । তাই ভয় থাকলেও কাজ করে যাচ্ছি ।"
কোরোনা পরিস্থিতি শ্রমিক না মেলায় সমস্যায় পড়েছেন পাট ও ধান চাষিরা শুধু পাট চাষ নয়, ধান চাষের ক্ষেত্রেও শ্রমিক সমস্যার কারণে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা । বর্তমানে ধানের রোয়া লাগানোর সময় । কিন্তু শ্রমিকের অভাবে রোয়া লাগানো যাচ্ছে না । জমিতেই বীজতলা পড়ে রয়েছে । কোথাও কোথাও আবার জমিতে জল জমে ধানের রোয়া লাগানোর পর তা নষ্ট হয়ে গেছে । ধান চাষি মোবারক আলি বলেন, "জমিতে রোয়া লাগানোর জন্য শ্রমিক পাচ্ছি না ।" আর এক চাষি রোকেয়া বিবি বলেন, "কোরোনার জন্য একসঙ্গে অনেকে কাজ করতে পারছেন না । কোরোনার ভয়ে অনেকেই কাজে আসছেন না । এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে চলতি মরশুমে আমাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে ।"
এই বিষয়ে কোচবিহার জেলা কৃষি বিভাগের অ্যাসিট্যান্ট ডিরেক্টর অব এগ্রিকালচার অরুণ কুমার বোস বলেন, "গ্রামে শ্রমিক সমস্যা রয়েছে । তবে আশা করি খুব শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে ।"