পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

আনলক-1-এও চালু হয়নি রপ্তানি, সমস্যায় চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তের ব্যবসায়ীরা

By

Published : Jun 28, 2020, 6:19 PM IST

Updated : Jul 1, 2020, 6:11 PM IST

লকডাউন শেষ হওয়ার পর রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে শুরু হয়েছে আমদানি-রপ্তানি ৷ কিন্তু, এখনও বন্ধ রয়েছে চ্য়াংরাবান্ধা স্থল বন্দর ৷ এই সীমান্তের গেটে এখনও ঝুলছে তালা ৷ কবে সব স্বাভাবিক হবে, সেই আশায় দিন কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা ৷

চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত
চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত

কোচবিহার, 28 জুন : কোচবিহারে চ্যাংরাবান্ধায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ৷ এখান দিয়েই দুই দেশের মধ্যে চলে বাণিজ্য ৷ চলে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি-রপ্তানি ৷ সারাদিনে দম নেওয়ার সময় থাকে না এই বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত কয়েক লাখ মানুষের ৷ কিন্তু, কোরোনার জেরে লকডাউন শুরুর পর ছবিটা সম্পূর্ণ পালটে যায় ৷ ট্রাকের চাকা প্রায় চার মাস ঘোরেনি ৷ বন্ধ বাণিজ্য ৷ যার জেরে রুটি-রুজিতেও পড়েছে টান ৷

দীর্ঘ তিন মাস পর লকডাউন শেষ হয় দেশে ৷ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে সব কিছু ৷ শুরু হয়েছে পরিবহন, বিভিন্ন পরিষেবা, আমদানি-রপ্তানিও ৷ রাজ্যের অন্যান্য সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু হয়েছে ৷ কিন্তু এখনও লকডাউনে কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত ৷ এই সীমান্তে চালু হয়নি আমদানি-রপ্তানি ৷ চারিদিকে দাঁড়িয়ে সারি সারি ট্রাক ৷ কাজ না থাকায় রুটি-রুজিতে টান পড়েছে কয়েক লাখ মানুষের ৷ পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে ভিনরাজ্য থেকে আসা কয়েকশো ট্রাক ড্রাইভার ও খালাসির খাবারের টাকাটুকুও নেই ৷ কয়েক মাস ধরে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকার কারণে টায়ার নষ্ট হয়েছে ৷ চুরি হয়ে গিয়েছে ব্যাটারি ৷ ট্রাক টার্মিনালে শুয়ে বসে কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা ৷ খাঁ খাঁ করছে সীমান্তের গেট ৷ কবে চালু হবে বাণিজ্য ? উত্তর নেই কারও কাছেই ৷ বাধ্য হয়ে এরপর আন্দোলন শুরু করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে চ্যাংরাবান্ধা স্থল বন্দর যৌথ সংগ্রাম কমিটি ৷ জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য চালুর চেষ্টা চলছে ৷

কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধায় রয়েছে রাজ্যের দ্বিতীয় স্থল বন্দর ৷ এই সীমান্ত দিয়ে 1989 সাল নাগাদ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য চালু হয় ৷ ভারত ও ভুটান থেকে মূলত বোল্ডার বাংলাদেশে যায় ৷ অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের ফলের রস, প্লাস্টিক সামগ্রী, তুলো এদেশে আসে ৷ প্রতিদিন ভারত, ভুটান ও বাংলাদেশ মিলিয়ে হাজার খানেক ট্রাক যাতায়াত করে ৷ কিন্তু লকডাউনের জেরে বন্ধ হয়ে যায় বাণিজ্য ৷ বোল্ডার বোঝাই কয়েক হাজার ট্রাক দাঁড়িয়ে পড়ে স্থল বন্দরে ৷ লকডাউন উঠলে রাজ্যের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু হয় ৷

10 জুন চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তেও শুরু হয় বাণিজ্য ৷ কিন্তু তিন ঘণ্টা বাণিজ্য চলার পরই ওইদিনই আবার তা বন্ধ হয়ে যায় ৷ তারপর থেকে এখনও বন্ধ সীমান্তের গেট ৷ যার জেরে কাজ হারিয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ ৷ ভিনরাজ্যের বহু ট্রাক চালকও আটকে পড়েছেন সেখানে ৷ বর্তমানে তাঁদের খাবারের টাকাও নেই ৷ পঞ্জাবের ট্রাকচালক জগজিৎ সিং বলেন, "লকডাউনের আগে ভুটান থেকে বোল্ডার নিয়ে এসেছি । বোল্ডার বাংলাদেশে রপ্তানি না হওয়ায় এখানেই পড়ে আছি । গাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । কবে চালু হবে কেউ কিছু বলছে না ।" আর এক ট্রাক চালক অলোক পাল বলেন, "খুব কষ্টে আছি । কবে রপ্তানি চালু হবে কিছু বুঝতে পারছি না ।"

চালু হয়নি রপ্তানি, সমস্যায় চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তের ব্যবসায়ীরা

চ্যাংরাবান্ধা ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ কানু বলেন, "সীমান্ত দিয়ে রপ্তানি বন্ধ থাকায় ক্লিয়ারিং এজেন্টদের খুব সমস্যা হচ্ছে ।" চ্যাংরাবান্ধা ট্রাক মালিক সমিতির সম্পাদক আবদুল সামাদ বলেন, "বাণিজ্য চালু হয়েও কেন বন্ধ হয়ে গেল বুঝলাম না । বোল্ডার বোঝাই হাজার দেড়েক ট্রাক দাঁড়িয়ে । কয়েক হাজার কর্মী চরম সমস্যায় । এমনটা চলতে থাকলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না ।"

এদিকে দ্রুত বাণিজ্য চালুর দাবিতে আন্দোলনে নামতে চলেছে চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর যৌথ সংগ্রাম কমিটি । কমিটির আহ্বায়ক তথা এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা অজয় প্রসাদ বলেন, "বাণিজ্য চালু না হওয়ায় লক্ষাধিক মানুষ বিপাকে পড়েছে । এনিয়ে অবিলম্বে আন্দোলনে নামা হবে ।"

কোচবিহারের জেলাশাসক পবন কাদিয়ান বলেন, "গোটা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে । সেখান থেকে নির্দেশ এলেই চালু হবে বন্দর ৷"

Last Updated : Jul 1, 2020, 6:11 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details