কলকাতা, 4 এপ্রিল: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন খতিয়ে দেখবে মৌলা শেখের মৃত্যুর কারণ। তার জন্য কমিশনকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে রাজ্যকে। পাশাপাশি মানবাধিকার কমিশন যদি দেখে এই ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেওয়া দরকার তাহলে ক্ষতিপূরণও দিতে হবে রাজ্যকেই। গতকাল এই নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
বহরমপুরের রাধারহাট আধারমানিক গ্রামের বাসিন্দা রুবেল শেখ। তাঁর আব্বা মৌলা শেখ। 2017র 17 অক্টোবর মৌলা শেখকে মারধর ও অস্ত্রশস্ত্র রাখার অপরাধে বহরমপুর থানাতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর থেকে বহরমপুর জেলে তিনি বন্দী ছিলেন। অসুস্থতার কারণে সেখান থেকে তাঁকে গত 4 নভেম্বর 2017-তে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভরতি করা হয়। পরে সেখান থেকে তাঁকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। 9 নভেম্বর তিনি সেখানে মারা যান। কিন্ত বাড়ির লোক মৃত্যুর খবর জানতে পারেন পরদিন অর্থাৎ নভেম্বরের10 তারিখ। অভিযোগ, মৌলা শেখের অসুস্থতার ব্যাপারে বাড়ির লোককে কোনও খবরই দেওয়া হয়নি। মারা যাওয়ার পর মেডিকেল কলেজ থেকে ফোন করে রুবেল শেখকে জানানো হয় যে তাঁর আব্বা মারা গেছেন। তিনি মেডিকেল কলেজে গিয়ে দেখেন ময়নাতদন্তও করা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কীভাবে মারা গেলেন তাঁর বাবা তার উত্তর পাননি তিনি।
26 নভেম্বর 2018 বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর সিঙ্গেল বেঞ্চে মামলা দায়ের করেন রুবেল শেখ। জেলবন্দি অবস্থায় মারা গেছেন মৌলা শেখ, তার তদন্ত হোক। সঠিক তদন্ত ও ক্ষতিপূরণের দাবি করেই মামলা দায়ের করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, তাঁর আব্বাকে মারা হয়েছে। মামলাটি 8 মার্চ 2019এ বেঞ্চ পরিবর্তন হয়ে দেবাংশু বসাকের বেঞ্চে আসে। তিনি রাজ্যকে রিপোর্ট পেশ করতে বলেন। পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে পুরো বিষয় জানিয়ে এই মামলায় অংশ নিতে বলেন। এরপর গত 2 এপ্রিল 2019 মামলার শুনানি ছিল। সেখানে রাজ্যের তরফ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে যে সমস্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে সেগুলো মোটেই সন্তুষ্টিকর নয়। গতকাল আবারও শুনানি হয়।
মামলাকারীর তরফে আইনজীবী সৌম্যজিৎ দাস মহাপাত্র ও রিমা দাস জানান, "জেলবন্দীর মৃত্যুতে ময়নাতদন্তের ব্যাপারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটা গাইডলাইন রয়েছে। সেখানে বলা আছে, ময়নাতদন্ত করবে কোনও ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি দেখার চেষ্টা করবেন কোনও গন্ডগোল আছে কি না। এখানে দেখা যাচ্ছে পুরো ব্যাপারটাই করেছে ACP (অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার অব পুলিশ)। কী কারণে মারা গেছে তাও লেখা নেই। বারবার নথিপত্র চাওয়ার পরও রাজ্য তা দিতে পারেনি। যেটুকু পাওয়া গেছে তাতে বিস্তর গন্ডগোল রয়েছে। শুধু তাই নয়, ঘটনার দু'বছর পর একজন জেলবন্দীর মৃত্যুতে যে ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্তই হয়নি সেটা ধরা পড়েছে শুনানিতে।" আইনজীবীদের কাছে এই বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি দেবাংশু বসাক নির্দেশ দেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আগামী দু'মাসের মধ্যে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। আর তাতে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে রাজ্যকে। আগামী জুন মাসে আবারশুনানি হবে এই মামলার।