পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

লিচু-এনসেফ্যালাইটিস নয়, বিহারে শিশুমৃত্যুতে দায়ি অপুষ্টি-অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ; দাবি সংগঠনের - Child Death

জুন মাসে বিহারে মৃ্ত্যু হয় 182 জনের । প্রাথমকিভাবে মৃত্যুর কারণ হিসেবে লিচু বা এনসেফ্যালাইটিস বলা হয়েছিল । ডাক্তারদের একটি সংগঠনের দাবি, শিশুমৃত্যুর কারণ অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম (AES) নয় । অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে শিশুরা মারা গেছে ।

অপুষ্টির শিকার এক শিশু

By

Published : Jul 7, 2019, 6:34 AM IST

Updated : Jul 7, 2019, 7:18 AM IST

কলকাতা, 7 জুলাই : মুজ়ফ্ফরপুরের শিশুমৃত্যুর কারণ অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম (AES) নয় । অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস এবং চিকিৎসায় বিলম্বের কারণে এই মৃত্যু বলে দাবি করল ডাক্তারদের একটি সংগঠন । এই সংগঠনের তরফে সম্প্রতি মুজ়ফ্ফরপুরের সমীক্ষা চালানো হয়েছে । সেই সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই দাবি করা হয়েছে ।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার চিকিৎসক বিপ্লব চন্দ্রের নেতৃত্বে ওই সংগঠনের এক প্রতিনিধি দল মুজ়াফ্ফরপুরের সাতটি গ্রামে সমীক্ষা চালিয়েছে । সমীক্ষার জন্য প্রায় 100 টি বাড়িতে গেছিল দলটি । মৃত শিশুদের বাড়ি গিয়ে সমীক্ষার পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে যে শিশুরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে, তাদের উপরও সমীক্ষা চালানো হয়েছে । বিপ্লববাবুর কথায়, "এই মৃত্যুর কারণ AES নয় বলে আমরা দাবি করছি । পুনের ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির টিম ওখানে গিয়েছিল । ওই টিমের সদস্যরা স্থানীয় মেডিকেল কলেজ থেকে আক্রান্ত শিশুদের নমুনা সংগ্রহ করে পুনেতে পরীক্ষা করিয়েছেন । পরীক্ষার রিপোর্টে ভাইরাসের অস্তিত্ব তাঁরা পাননি । স্পাইনাল ফ্লুইডস টেস্ট করে কোনও ভাইরাসের খোঁজ পাওয়া যায়নি ।"

এই সংক্রান্ত আরও খবর :লিচুতে কি লুকিয়ে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম ?

কেন AES নয় ?

এনিয়ে বিপ্লববাবু বলেন, "এনসেফ্যালাইটিস হলে ব্রেনে ইনফেকশন বা স্পাইনাল কর্ডের ফ্লুইডে অস্বাভাবিকতা দেখা যায় । AES হলেই হঠাৎ খিঁচুনি শুরু হবে, এমন নয় । " বিপ্লববাবুর বক্তব্য, প্রাথমিক উৎসর্গ হল, কমপক্ষে তিনদিনের জ্বর, ঝিমিয়ে থাকে, খাওয়া-দাওয়া কমে যাওয়া, অসংলগ্ন কথাবার্তা বলা । এরপর অ্যাকিউট স্টেজ ডেভেলপ করে । তিনি বলেন, "এখানে যে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে, তারা আগের রাত পর্যন্ত একেবারেই স্বাভাবিক ছিল । রাতে শুতে গেছে । সকালে শিশুর অস্বাভাবিক আচরণ ধরা পড়ে । খিঁচুনি হচ্ছে । শরীরের তাপমাত্রা বাড়ছে । খিঁচুনির পরে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে দেখা গেছে ।" তিনি বলেন, "ফলে, আগে থেকে শরীরের তাপমাত্রা বেশি নেই । স্পাইনাল কর্ডের ফ্লুইডে ভাইরাসের অস্তিত্ব নেই । এমন অবস্থায় কীভাবে AES বলা যাবে ? আর, AES অথবা ভাইরাসের সব থেকে বেশি অস্তিত্ব দেখা যায় বর্ষার সময়ে । মুজ়ফ্ফরপুরের ঘটনা বর্ষা আসার আগে । বৃষ্টি আসার পরে আক্রান্ত বা মৃত্যুর সংখ‍্যা কমে গেছে । তার মানে এটাও প্রমাণ করছে, শিশুদের এই মৃত্যুর কারণ ভাইরাস নয়‌।"

বিহারে সমীক্ষা প্রতিনিধি দলের

বিপ্লববাবু বলেন, "এই অঞ্চলের বাসিন্দারা প্রচণ্ড দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছেন । এখানকার 100 শতাংশ শিশুই অপুষ্টির শিকার । এখানকার বাড়িগুলির কোয়ালিটি অত্যন্ত নিম্নমানের । ঘরে কোনও জানালা নেই । ভেন্টিলেটরের কোনও ব্যবস্থা নেই । একটি ঘরে পাঁচ থেকে সাতজন থাকেন ।" তিনি আরও বলেন, "বাড়ির ছাদ অ্যাসব‍েস্টর দিয়ে ঢাকা । মুজ়াফ্ফরপুরের বর্ষা আসার আগে অর্থাৎ মে-জুন মাসে প্রচণ্ড বেশি তাপমাত্রা থাকে । তাপমাত্রা প্রায় 45 ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায় । এই ধরনের পরিস্থিতিতে আপেক্ষিক আর্দ্রতা অত্যন্ত বেড়ে যায় । দেখা গেছে, ওই বদ্ধ ঘরে সারা রাত থাকার ফলে আর্দ্রতার পরিমাণ আরও বেড়ে যায় । এর ফলে, আমাদের শরীরের কোষের মধ্যে যে স্বাভাবিক কাজকর্ম চলে, সেটা ব্যাহত হয় । "

এই সংক্রান্ত আরও খবর :এনসেফ্যালাইটিসে বিহারে মৃত বেড়ে 128

এর ফলে কী হয় ?

তিনি বলেন, "এর ফলে কোষগুলি নষ্ট হয়ে যায় । কোষগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে মাল্টি অরগ্যান ফেলিয়োর হয় । এই মাল্টি অরগ্যানের মধ্যে লিভার ও কিডনির পাশাপাশি ব্রেনও রয়েছে ।" তিনি আরও বলেন, "মূল কারণ এখানে ভাইরাস নয় । এমন অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে যে পরিবারে শিশুর মৃত্যু হয়েছে । কিন্তু, এই মৃত্যুর সঙ্গে তাদের লিচু খাওয়ার কোনও সম্পর্ক আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি । কারণ, এই সব শিশুর বামা-মায়েরা বলেছেন, মৃত্যুর আগের কয়েকদিন তাঁদের সন্তানরা লিচু খায়নি ।" তিনি বলেন, "হঠাৎ করে ওইরকম গরম এবং আর্দ্রতার মধ্যে লিচু না খেয়েও যেভাবে অনেক শিশুর মৃত্যু হল, তাতে লিচুর কারণে এই মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা মনে করছি না । ভাইরাসও কারণ নয় ।"

কী কারণে হয়েছিল এনসেফ্যালাইটিস ? ভিডিয়োয় শুনুন বিপ্লব চন্দ্রের বক্তব্য

এই সংক্রান্ত আরও খবর :24 ঘণ্টায় আরও 20 শিশুর মৃত্যু, বিহারে এনসেফ্যালাইটিসে মৃত বেড়ে 93

তাহলে কারণ কী?

বিপ্লববাবু বলেন, "অপুষ্টি, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বাড়ির অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর অবস্থা । অসুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্লাড সুগার ফল করেছে । অর্থাৎ, রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাচ্ছিল, হঠাৎ শরীরের বিভিন্ন স্থানে সল্ট অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছিল । এই সমস্যাগুলির চিকিৎসা খুব সহজেই করা যায় ।" তা দ্রুত চিহ্নিত করে গরিব ঘরের শিশুদের সরকারি উদ্যোগে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার প্রয়োজন ছিল । একথা জানিয়ে তিনি বলেন, "এক্ষেত্রে চিকিৎসা দেরিতে শুরু হয়েছে । স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, প্রায় 300 শিশুর মৃত্যু হয়েছে । সরকারি হিসাবে মৃত্যু হয়েছে 182 জনের। এই মৃত্যু আটকানো যেত।"

বিপ্লববাবু বলেন, "আমরা বলছি, এই মৃত্যুর কারণ প্রতিরোধযোগ্য । যে কারণে মৃত্যু হল অর্থাৎ দারিদ্র্য, অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর বাসস্থান - এগুলিও প্রতিরোধযোগ্য । দ্রুত যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমেও মৃত্যু আটকানো সম্ভবপর ছিল ।" এর আগেও, ওই অঞ্চলে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল । সেক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ কী ? তিনি বলেন, "স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী যেটুকু জানা গিয়েছে, 1995 সালে থেকে প্রায় প্রতি বছর বর্ষা আসার ঠিক আগে এমন ঘটেছে । কোনও বছর 100, কোনও বছর 100, এমনকী কোনও বছর 400 শিশুর মৃত্যু হয়েছে । সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি । ফলে, এই বছর আবার এই ঘটনা ঘটেছে ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "আগামী দিনে সরকার যদি অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, নিকাশি ও স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামোগত উন্নতি না করে, তা হলে আমাদের আশঙ্কা, আগামীদিনে আবারও এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে । আমরা দাবি করছি, এই শিশুদের জীবনের স্বার্থে অবিলম্বে সরকার হস্তক্ষেপ করুক ।"

বিহারে শিশুরা

তিনি বলেন, "যারা অপুষ্টির শিকার, তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় । অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের এরকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কারণে, তাদের শরীরের কোষগুলি নষ্ট হওয়ার সবথেকে বেশি সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে । শিশুরা অসুস্থ হয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খুব সকালে মারা গেছে । অপুষ্টি এবং তার সঙ্গে ঘরোয়া ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে সকালের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে । তারপরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হয়েছে । এর ফলে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে । ভাইরাল ইনফেকশন হলে কিছু উপসর্গ দেখা দেয় । এই সব শিশুর ক্ষেত্রে তা দেখা দেয়নি । অসুস্থ হওয়ার আগে কারও জ্বরও দেখা দেয়নি ।"

Last Updated : Jul 7, 2019, 7:18 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details