পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

সাদাকত এবং টারজানদের জেরা করেই অস্ত্র কারখানার পর্দা ফাঁস, রয়েছে জালনোট যোগ - অস্ত্র কারখানা

গতকাল কলকাতা পুলিশের টাস্কফোর্সের তদন্তকারী আধিকারিকরা প্রথমে গ্রেপ্তার করে সাদাকত, টারজান, ঋষি কুমার ও সুমন কুমারকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় 30টি দেশি 9MM পিস্তল। এই চারজনকে জেরা করে জানা যায় রাজারহাটের অস্ত্র কারখানার কথা। তারপরই সন্ধ্যায় নারায়ণপুর থানা এলাকার ছোটো গাঁথি ও দোননগরে বেআইনি অস্ত্র কারখানার হদিশ পায় পুলিশ। STF(স্পেশাল টাস্ক ফোর্স) এবং নারায়ণপুর থানার পুলিশ যৌথভাবে তল্লাশি চালায়। উদ্ধার হয় আরও 60টি অস্ত্র।

অস্ত্র উদ্ধার

By

Published : Apr 5, 2019, 12:29 PM IST

কলকাতা, 5 এপ্রিল : কাঁকিনাড়া থেকে রাজারহাট। অস্ত্র কারবারিদের মোডাস অপারেন্ডি একই। মুঙ্গেরের অস্ত্র যাচ্ছে বাংলাদেশেও! বিনিময় হচ্ছে জাল টাকায়। লাভ হচ্ছে দু'পক্ষেরই। কারবারিরা ভারতের বাজারে ছড়িয়ে দিতে পারছে জাল নোট। অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদের জন্য অস্ত্র চলে যাচ্ছে বাংলাদেশে। আবার এ রাজ্যের দুষ্কৃতীদের হাতেও প্রয়োজনমতো তুলে দেওয়া হচ্ছে অস্ত্র। গতকাল কলকাতা পুলিশের টাস্কফোর্সের তদন্তকারী আধিকারিকরা প্রথমে গ্রেপ্তার করে সাদাকত, টারজান, ঋষি কুমার ও সুমন কুমারকে। এদের মধ্যে ঋষি কুমার ছাড়া প্রত্যেকের বাড়ি বিহারের মুঙ্গেরে। ঋষির বাড়ি বিহারের বাঙ্কায়। কলকাতা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় 30টি দেশি 9MM পিস্তল। এই চারজনকে জেরা করে জানা যায় রাজারহাটের অস্ত্র কারখানার কথা। তারপরেই সন্ধ্যায় নারায়ণপুর থানা এলাকার ছোটো গাঁথি ও দোননগরে বেআইনি অস্ত্র কারখানার হদিশ পায় পুলিশ। STF(স্পেশাল টাস্ক ফোর্স) এবং নারায়ণপুর থানার পুলিশ যৌথভাবে তল্লাশি চালায়। উদ্ধার হয় আরও 60টি অস্ত্র। গ্রেপ্তার করা হয় দুই 'ইঞ্জিনিয়ার' সহ কারখানার মালিক মুন্নাকে।

যোগসূত্রটা মুঙ্গেরের। অস্ত্র কারখানা গজিয়ে উঠছে শহরতলীতেও। কাজ করছে বিহারের বিখ্যাত মুঙ্গেরি 'ইঞ্জিনিয়ার'-রা। তৈরি অস্ত্র চলে যাচ্ছে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে। পুলিশের সূত্রে খবর, সেই অস্ত্র ব্যবহার করছে জামাত জঙ্গীরা। বিনিময়ে এদেশে ঢুকছে জাল নোট। গত বছরের জুলাইয়ে কাঁকিনাড়ার অস্ত্র কারখানার সূত্র ধরে আগরপাড়ার অস্ত্র কারখানার খোঁজ মেলে। জুলাই মাসে, জাল নোট চক্রের সূত্র ধরেই পর্দা ফাঁস হয় কাঁকিনারার অস্ত্র কারখানার। ময়দান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তিন জালনোট কারবারিকে। তাদের নাম সুকু সেখ, মহম্মদ আমজাদ রায়েন এবং মহম্মদ আবদুল্লাহ। তাদের কাছে উদ্ধার হয় অস্ত্রও। ওই জাল নোট কারবারিদের জেরা করে জানা যায়, তারা অস্ত্র পেয়েছিল কাঁকিনারা থেকে। সেই সূত্রেই STF তল্লাশি চালায় কাঁকিনারায়। পর্দাফাঁস হয় অস্ত্র কারখানার। গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচ অস্ত্র কারবারি এবং অস্ত্র তৈরির কারিগরকে। তাদের নাম মহম্মদ সাবির, মহম্মদ সইদ আলম, মহম্মদ শাহনওয়াজ, মহম্মদ ফয়জল এবং মহম্মদ রাজি। এদের মধ্যে সাবির মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। বাকিরা সবাই বিহারের মুঙ্গেরবাসি। ময়দানে গ্রেপ্তার হওয়া আমজাদ বিহারের মুঙ্গেরের বাসিন্দা। এই মুঙ্গেরবাসি অস্ত্র তৈরির কারিগরদের জেরা করেই রবীন্দ্রসরণি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জের বাসিন্দা মহম্মদ আসফাক আহমেদ এবং মুঙ্গেরের মহম্মদ আসলামকে। তাদের কাছ থেকেই আগরপাড়ার ডেরার হদিশ মেলে।

আগরপাড়ার উষুমপুরে দোতলা বাড়িটির একতলা ভাড়া দিয়েছিলেন কালাচাঁদ পাল। পাপ্পু খান নামে এক ব্যক্তি তাঁর কাছ ভাড়া নিয়েছিলেন লেদ কারখানা করার জন্য। পাপ্পুর বাড়ি কামারহাটিতে। STF সূত্রে খবর, আগরপাড়ার ওই কারখানায় পিস্তলের ইস্পাতের কাঠামো তৈরি করা হত। সেই কাঠামো তারপর পাঠানো হত কাঁকিনাড়াতে। সেখানেই হতো ফিনিশিং। তারপর তা চলে যেত জঙ্গিদের হাতে। তখন থেকেই জোরদার হচ্ছিল সন্দেহটা। পরে সূত্র মারফত একেবারে নিশ্চিত হয়ে যায় গোয়েন্দারা। বিষয়টি নিয়ে প্রতি মুহূর্তে খোঁজখবর রাখছিলেন STF কর্তারা। গোপন সূত্র খবর পাওয়া যায় নারকেলডাঙ্গা এলাকায় হবে অস্ত্রের চোরাচালান। সেইমতো গত 12 জানুয়ারি ওত পেতে ছিল গোয়েন্দারা। জাল নোটের বিনিময়ে অস্ত্র চোরাচালানের সময়েই গোয়েন্দারা ধরে ফেলে কুচক্রীকে। বিহারের মুঙ্গেরের মির্জাপুরের মহম্মদ নিজাম ওরফে তাতার, মহম্মদ নওসাদ, রহিত সাহিল ওরফে বিজয় কুমার নিয়ে আসে অস্ত্র। তারা সঙ্গে এনেছিল তিনটি 7MM সেমি অটোমেটিক পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন এবং 21 রাউন্ড 7MM কার্তুজ এবং আরও 14 টি পিস্তল। অন্যদিকে মালদার কালিয়াচকের রফিকুল শেখ ওরফে মুন্না, রফিকুল শেখ ওরফে মুসল্লিম, মহম্মদ জিয়াউল সেখ, তাহির শেখ আনে 60 হাজার টাকার জালনোট। তাদের সঙ্গে ছিল বীরভূমের সিউড়ির জিয়াউদ্দিন মল্লিক। তাদের জেরা করেই হলদিয়ার অস্ত্র কারখানার হদিশ মেলে। সেই মোডাস অপারেন্ডির পুনরাবৃত্তি হল গতকাল।

অস্ত্র কারখানার মালিক শেখ আলি হোসেন ওরফে মুন্নাকে গ্রেপ্তার করে STF এবং বিধাননগর পুলিশের যৌথ দল। তার কাছে অস্ত্র ছাড়াও উদ্ধার হয় আট লাখ আশি হাজার টাকার জাল নোট। সেখানে গ্রেপ্তার করা হয় আরও দুই কর্মীকে তাদের নাম শামিম আলম এবং মহম্মদ সোনু। এই চক্রটিও মূলত বাংলাদেশ অস্ত্র পাচার করত। তবে ভোটের বাজারে কলকাতায় তারা কাকে অস্ত্র সরবরাহ করতে গিয়েছিল সেটি জানার চেষ্টা করছে তদন্তকারীরা।

ABOUT THE AUTHOR

...view details