বোলপুর, 7 ডিসেম্বর: রাজ্য সরকারি দফতরেই উদ্ধার হল গ্রুপ-ডি কর্মীর (Group D Staff) ঝুলন্ত দেহ (Hanging Body Recovered) ! ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বীরভূমের (Birbhum) বোলপুর থানা (Bolpur Police Station) এলাকায় ৷ মৃতের নাম অরিজিৎ সিনহা ৷ তিনি বীরভূমের লাভপুরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা অভিজিৎ সিনহা ওরফে রানা সিনহার আত্মীয় ৷ স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে ৷ প্রশ্ন উঠছে, সরকারি দফতরে তৃণমূল বিধায়কের এই মৃত আত্মীয়ের চাকরি পাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়েও !
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত অরিজিৎ সিনহা 2010 সালে সরকারি চাকরি পান ৷ সেই সময় রাজ্যে পালাবদলের হাওয়া থাকলেও তখনও ঘাসফুল শিবিরের হাতে সরকার যায়নি ৷ সেই বাম জমানাতেই খাদ্য সরবরাহ দফতরের বোলপুর কার্যালয়ে গ্রুপ ডি কর্মী হিসাবে নিযুক্ত হন অরিজিৎ ৷ কিন্তু, সম্প্রতি রাজ্যজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে নিয়োগ দুর্নীতি ৷ শিক্ষাক্ষেত্র ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্য সরকারি কার্যালয়ে টাকার বিনিময়ে এবং প্রভাব খাটিয়ে অসংখ্য নিয়োগের অভিযোগ উঠছে ৷ গ্রুপ ডি কর্মীদের নিয়োগও তার বাইরে নেই ৷ এ নিয়ে আদালতে রুজু হয়েছে মামলা ৷ তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ৷
আরও পড়ুন:নবম-দশমে চাকরির জন্য 183টি বেআইনি সুপারিশ ! দাবি কমিশনের
গ্রুপ-ডি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার সাপেক্ষেই সম্প্রতি অরিজিৎকে ডেকে পাঠায় সিবিআই ৷ দুর্গাপুরে তাদের যে ক্যাম্প অফিস রয়েছে, সেখানেই ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় অরিজিৎকে ৷ পরিবারের সদস্যদের দাবি, এই ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি ৷ তাঁর মনে আশংকা তৈরি হয়েছিল, নিয়োগ দুর্নীতির গেরোয় পড়ে হয়তো তাঁকেও চাকরি হারাতে হবে ৷ এই অবস্থায় বুধবার সকালে দফতর থেকেই তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ৷
দেহ উদ্ধারে বাড়ছে রহস্য ৷ অরিজিতের ভাই নীলাঞ্জন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁর দাদা যে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন, তা তিনি জানতেন ৷ কিন্তু, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন নাকি এই মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে, তা তাঁর জানা নেই ৷ এদিকে, অরিজিতের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত অফিসেই ছিলেন অরিজিৎ ৷ রোজকার মতো নিজের কাজও করেছেন ৷ তার পরদিনই এমন ঘটনা ঘটায় তাঁরা হতভম্ব হয়ে গিয়েছেন ৷
অন্যদিকে, অরিজিতের স্ত্রী তাঁর দেওরকে মঙ্গলবার রাতেই ফোন করে জানিয়েছিলেন, রাতে স্বামী বাড়ি ফেরেননি ৷ নীলাঞ্জন এই প্রসঙ্গে বলেন, "আমি বউদির ফোন পেয়েছিলাম ৷ কিন্তু, কাল আমার একটা বিয়েবাড়ির নেমন্তন্ন ছিল ৷ আর আজ সকালেই শুনি এমন ঘটনা ঘটে গিয়েছে ! কিছু বুঝতে পারছি না ৷ তবে ও অবসাদে ছিল ৷ চাকরি নিয়ে টেনশনে ছিল ৷ আরও অনেকের একই অবস্থা ৷"
বুধবার সকালে অরিজিতের দেহ উদ্ধার করে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয় ৷ বোলপুর থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ৷