শান্তিনিকেতন, 13 জুলাই: ভারতীয় সংবিধানে জাতীয় প্রতীক হিসাবে যে অশোক স্তম্ভ গৃহীত হয়েছিল তার নকশা করেছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী নন্দলাল বসু। কিন্তু, নয়া সংসদ ভবনের জন্য সম্প্রতি যে অশোক স্তম্ভ উন্মোচিত হল তার সঙ্গে মিল নেই সেটির, এমনটাই বিতর্ক তৈরি হয়েছে ৷ এই স্তম্ভের সিংহের মধ্যে স্বাভাবিকতা নেই, হিংসা রয়েছে বলে আক্ষেপ বিশ্বভারতীর কলাভবনের অধ্যাপক-শিল্পীদের। তাঁরা জানান, এটি জাতীয় প্রতীক, এখানে শিল্পীর নিজস্বতা দেখানোর অধিকার নেই (Artists and Professors from Visva-Bharati Kalabhavana speak on Ashoka Stambh Controversy)৷
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ভারতের সংবিধানের নকশা বা অনুলিপির দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী নন্দলাল বসুকে ৷ সেই সময় বিশ্বভারতীর কলাভবনের অধ্যক্ষ ছিলেন নন্দলাল বসু ৷ জানা গিয়েছে, অশোক স্তম্ভকে প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করার জন্য সিংহের স্বাভাবিক অবস্থাকেই বেছে নিয়েছিলেন শিল্পী ৷ তিনি তাঁর ছাত্রদের নিয়ে সেই কাজ শুরু করেছিলেন ৷ বিভিন্ন অশোক স্তম্ভের স্কেচ ছাড়াও নন্দলাল বসু তাঁর ছাত্রদের নিয়ে কলকাতা চিড়িয়াখানায় সিংহের স্বাভাবিক অবস্থার স্কেচ করেছিলেন ৷
'সেন্ট্রাল ভিস্তা'-র ছাদে সদ্য ঠাঁই হওয়া নয়া অশোক স্তম্ভ, নন্দলাল বসুর নকশার সঙ্গে যার মিল না-থাকায় শুরু হয়েছে তরজা আরও পড়ুন :বিতর্কের কেন্দ্রে অশোক স্তম্ভ, দেশের জাতীয় প্রতীক সম্পর্কে যা জানা জরুরি
যুক্তি ছিল, এই চার সিংহের মূর্তি ভারতকে শৌর্য, শান্ত, শক্তিশালী, দৃঢ়তা, পরাক্রমের প্রতীক হিসাবে তুলে ধরবে। তাঁর তৈরি অশোক স্তম্ভের স্কেচ 1950 সালের 26 জানুয়ারি ভারতের জাতীয় প্রতীক হিসাবে গৃহীত হয় ৷ সদ্য নব নির্মিত সংসদ ভবনের জন্য অশোক স্তম্ভের ব্রোঞ্জ মূর্তির উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই মূর্তিতে সিংহের হিংসাত্মক রূপ প্রকাশ পেয়েছে বলে দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে । অর্থাৎ, শিল্পী নন্দলাল বসুর তৈরি জাতীয় প্রতীকের সঙ্গে মিল নেই নব নির্মিত অশোক স্তম্ভের এমনটাই অভিযোগ।
নন্দলাল বসুর তৈরি নকশার সঙ্গে মিল নেই নবনির্মিত অশোক স্তম্ভের, আক্ষেপ বিশ্বভারতীর শিল্পীদের প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদেও রয়েছেন। তাই নব নির্মিত অশোক স্তম্ভ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন বিশ্বভারতীর অধ্যাপক থেকে শুরু করে শিল্পীরা ৷ বিশ্বভারতীর কলাভবনের অধ্যাপক শিশির সাহানা বলেন, "প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, শিল্পী নন্দলাল বসুকে সংবিধানের নকসা তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বহু জায়গা ঘুরে স্কেচ বানিয়ে জাতীয় প্রতীক তৈরি করেছিলেন ৷ এখানে অন্য কোনও শিল্পীর নিজস্বতা দেখানোর অধিকার নেই ৷ কিন্তু, দেখা গেল নতুন যে অশোকস্তম্ভ হল তা আগের মতো হয়নি ৷ সিংহ শৌর্যের প্রতীক এমনটাই রূপ ফুটিয়ে তুলেছিলেন নন্দলাল বসু ৷ কিন্তু, এখন সিংহ স্বাভাবিক অবস্থায় নেই ৷"
আরও পড়ুন :কীভাবে রূপ পেল অশোক স্তম্ভ ? ইটিভি ভারতকে জানালেন স্থপতি লক্ষ্মণ ব্যাস
বিশ্বভারতীর নন্দন আর্ট গ্যালারির প্রাক্তন আধিকারিক তথা শিল্পী সুশোভন অধিকারী বলেন, "নন্দলাল বসু অন্য মাত্রার শিল্পী ছিলেন। জাতীয় প্রতীকে সিংহকে তিনি বীর্য, শক্তি, শৌর্যের প্রতীক হিসাবে তুলে ধরেছিলেন ৷ সেখানের প্রাচীন সংস্কৃতির ছোঁয়াও রয়েছে। কিন্তু, এখন যে অশোকস্তম্ভ নির্মাণ হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে সিংহের হিংসাত্মক রূপ ৷ এমনকী, নিজের কারুকার্যগুলিও খুবই আধুনিকমানের হয়ে গিয়েছে। যেটা সমিচীন নয়।"