সোনাঝুরি জঙ্গলের হীরালিনী দুর্গাপুজো বোলপুর, 13 অক্টোবর: শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি জঙ্গলের মনোরম পরিবেশে হীরালিনী দুর্গোৎসব আর পাঁচটি পুজোর থেকে একেবারে আলাদা । অনেকে আবার একে সোনাঝুরির দুর্গাপুজোও বলে থাকেন । 23 বছরের পুরোনো এই পুজো । সোনাঝুরি জঙ্গলে এই শৈল্পিক দুর্গা দেখতে প্রতি বছরই বহু মানুষ ভিড় জমান । এ বার লোহার দুর্গা আকর্ষণ আরও বাড়িয়েছে ৷
2001 সালে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি জঙ্গলে শৈল্পিক দুর্গাপুজোর সূচনা করেন প্রয়াত শিল্পী বাঁধন দাস । তাঁর অবর্তমানে এখন তাঁরই ছাত্র শিল্পী আশিস ঘোষের হাত ধরে স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন এই পুজোর আয়োজন করে থাকেন । আর পাঁচটা পুজোর মতো এই পুজোয় নেই কোনও আদি রীতি-রেওয়াজ । মণ্ডপে নেই আকর্ষণীয় জাঁকজমক । হয় না প্রথা মেনে পুজো । এখানে শুধুই রয়েছে শিল্পের ছোঁয়া । আর তাই অন্যান্য পুজোর থেকে সোনাঝুরি জঙ্গলের এই হীরালিনী দুর্গাপুজোর আকর্ষণ মানুষজনের কাছে অনেক বেশি । এখানে দেবীর হাতে অস্ত্রের বদলে থাকে পদ্মফুল ।
সোনাঝুরির এই জঙ্গল লাগোয়া রয়েছে আদিবাসী অধ্যুষিত একাধিক গ্রাম । বনেরপুকুর ডাঙা, ফুলডাঙা, বল্লভপুর ডাঙা ও সরকার ডাঙা নামে প্রভৃতি গ্রামের আদিবাসী মানুষজনই এই পুজোর সমস্ত আয়োজন করে থাকেন । এছাড়াও, প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ড রাজ্য থেকেও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন এই পুজোয় অংশ নেন ।
আরও পড়ুন:আগমনীতেই বিদায়ের সুর! মহালয়ায় মায়ের আবাহনের দিনই বিসর্জনের সাক্ষী যে গ্রাম
সোনাঝুরির জঙ্গলে এই শৈল্পিক দুর্গা দেখতে প্রতি বছরই ভিড় জমান বহু মানুষ । 2001 সালে পুজো শুরু করার সময় দেবীর হাতে অস্ত্র ছিল ৷ এরপর 2002 সালে আমেরিকায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিস্ফোরণ ও ইরাক যুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসের নগ্ন রূপ বেরিয়ে আসে । তাই সেই বছর থেকে 'বিশ্ব শান্তির' বার্তা দিতে শিল্পী বাঁধন দাস দেবীর হাতে অস্ত্রের বদলে পদ্মফুল দেন । সে বছরই প্রয়াত হন তিনি । তারপর থেকে এই পুজোর হাল ধরেন তাঁরই ছাত্র শিল্পী আশিস ঘোষ । এ বছর লোহার প্রতিমা নির্মাণ করা হয়েছে । প্রতিমা থেকে শুরু সমস্ত নকশা, সবই লোহা দিয়ে তৈরি ।
শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরির হীরালিনী দুর্গোৎসব পুজোর বিষয়ে শিল্পী আশিস ঘোষ বলেন, "আমার শিক্ষক শিল্পী বাঁধন দাস এই পুজোর সূচনা করেছিলেন । বর্তমানে আদিবাসী মানুষজনের সহযোগিতায় আমরা এই পুজো চালিয়ে আসছি । আর পাঁচটা পুজোর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এই পুজো । তাই মানুষজন খুব উৎসাহের সঙ্গে এখানে আসেন । আমরা শিল্পকেই গুরুত্ব দিই, যেহেতু আমি নিজেও একজন শিল্পী । পুজোর চার দিন আদিবাসী, সাঁওতাল জনজাতির উৎসব ও অনুষ্ঠান এখানে হয়ে থাকে ।"
পুজোর উদ্যোক্তা চিত্রা ঘোষ বলেন, "আমি আদিবাসী সমাজকে এই পুজোর মাধ্যমে এক করতে পারি । এটাই আমার ভালো লাগা । প্রচুর মানুষ এই পুজো দেখতে আসেন । আমার দাদা পুজোটির সূচনা করেছিলেন ।"