পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Jun 24, 2020, 4:45 PM IST

ETV Bharat / state

লকডাউনের জেরে সমস্যায় শুশুনিয়ার পাথর শিল্পীরা

লকডাউনের জেরে পাথর খোদাই, মূর্তি তৈরির কাজ বন্ধ । তাই চরম সমস্য়ায় পড়েছেন শুশুনিয়ার পাথর শিল্পীরা । পেট চালাতে কেউ আবার 100 দিনের কাজে যোগ দিয়েছেন ।

পাথর শিল্পী
পাথর শিল্পী

বাঁকুড়া, 24 জুন : পাথর খোদাই করে নানা অবয়ব দেওয়াই তাঁদের কাজ । এই করেই পেট চলে । কিন্তু, লকডাউন আর কোরোনার জেরে আপাতত বন্ধ সমস্তকিছু । আর কেউ নতুন মূর্তির অর্ডার দেন না । যাঁরা অর্ডার দিয়েছিলেন, তারাও মূর্তি নিতে আসেননি । এর জেরে চরম আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন বাঁকুড়ার শুশুনিয়ার পাথরশিল্পীরা । সংসার চালাতে অনেকেই এখন 100 দিনের কাজে যোগ দিয়েছেন।

বাঁকুড়ার ছাতনায় শুশুনিয়া পাহাড় । এই পাহাড়ের কোলেই রয়েছে ছোট্ট গ্রাম শুশুনিয়া । ছোটো-বড় সবমিলিয়ে গ্রামে প্রায় 200 শিল্পী রয়েছেন এখানে । পাথর খোদাই করে নানা মূর্তি, আসবাবপত্র, পুজোর সরঞ্জাম তৈরি করেই এদের সংসার চলে । গ্রামের তিনজন শিল্পী রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন । প্রথম প্রথম শুশুনিয়া পাহাড় থেকে পাথর এনেই কাজ চলত । শিল্পীরা বাড়িতে বসে সেই পাথর খোদাই করে নানা দেব-দেবীর মূর্তি, জিনিসপত্র তৈরি করতেন । কোনও মূর্তির দাম 200 টাকা, কোনওটির আবার এক লাখ টাকা । পরের দিকে পাহাড়ের ক্ষতি হওয়ার জেরে পাথর তোলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় প্রশাসনের তরফে । এরপর দক্ষিণ ভারত ও রাজস্থান থেকে পাথর এনে কাজ শুরু করেন এখানকার শিল্পীরা । সাধারণত চেন্নাই থেকে একটি বিশেষ পাথর নিয়ে আসেন এই শিল্পীরা । যা প্রতি ফুট 900 টাকা থেকে প্রায় 30 হাজার টাকায় কিনতে হয় । রাজস্থান থেকেও সাদা পাথর আমদানি শুরু হয় । যার মূল্য 20-22 হাজার টাকা । এই সমস্ত পাথর কেটে, তা খোদাই করে শুরু হয় মূর্তি নির্মাণ ।

1970 সালের পর থেকে এই শিল্প প্রসার লাভ করে । ওইসময় জেলা শিল্পবিভাগের উদ্যোগে তামিলনাড়ুর মহাবলিপুরম থেকে বিশেষ প্রতিনিধি দল আসেন । শুশুনিয়ার শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেন । তারপর থেকে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে ছোট্ট শুশুনিয়ার পাথরের কাজ । সবকিছু দিব্যি চলছিল । এর মাঝেই থাবা বসায় কোরোনা । দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হয়ে যায় । আর তারপর থেকেই সমস্যায় রয়েছেন পাথর শিল্পীরা । কয়েকমাস হল কাজ প্রায় বন্ধ । কারণ, নতুন কোনও অর্ডারের দেখা নেই । পাশাপাশি যাঁরা অর্ডার দিয়েছিলেন, তাঁরাও আর জিনিস নিতে আসেননি । তাই পুঁজিতে টান পড়েছে শিল্পীদের । রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত পাথরশিল্পী নয়ন দত্ত বলেন, "চারদিকে কোরোনা আতঙ্ক । লকডাউন । অর্ডার থাকলেও পার্টিরা জিনিস নিতে আসছে না । এখন আর কেউ অর্ডারও দিচ্ছে না । যাঁরা কাজ করতেন, তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন । কারণ কেউ জিনিসপত্র নিচ্ছেন না । বিক্রিবাটা বন্ধ রয়েছে । এভাবেই দিন কাটছে ।"

গ্রামের অনেক শিল্পী তাঁদের তৈরি করা ছোটোখাট মূর্তি, পাথরের বাটি অথবা জিনিসপত্র নিয়ে দোকান দেন । সারাবছর রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে যাঁরা এখানে বেড়াতে আসেন, তাঁরা এই জিনিসপত্রগুলি কেনেন । কিন্তু লকডাউনে পর্যটন বন্ধ । তাই মুখ থুবড়ে পড়েছে এই ছোটো ব্যবসাগুলিও । ছোটো শিল্পী ও দোকানদার তারকেশ্বর চৌধুরি বলেন, "শোচনীয় অবস্থা । পাথরের বাজার নেই । দোকান মেলে বসলেও, কেউ আসে না । জীবনে এইরকম অবস্থা দেখিনি । কোনওরকমে ধার-দেনা করে সংসার চলছে । সরকারি কোনও সাহায্যও মেলেনি । ওই যা মাস গেলে পাঁচ কেজি করে চাল পাই ।"

কয়েকজনকে নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে । কিন্তু কোনওরকমে চলছে সবকিছু । সংসারের চাপে অনেক পাথর শিল্পী এখন খোদাইয়ের কাজ ছেড়ে 100 দিনের কাজে নাম লিখিয়েছেন । কেউ ধার-দেনা করে সংসারের বাকিদের ভাতের ব্যবস্থা করছেন । আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার দিকে তাকিয়ে তাঁরা । কবে সব ঠিক হবে ? কবে আবার পাথর কাটার ঠকঠকানিতে ব্যস্ত হয়ে উঠবে কর্মশালাগুলি । শুরু হবে কেনা-বেচা ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details