পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ঢং ঢাং শব্দে আর ঘুম ভাঙে না কেঞ্জাকুড়াবাসীর, চরম মন্দায় কাঁসা শিল্প

এক দশক আগেও কাঁসা পিতলের বাসনের বহুল ব্যবহার ছিল জেলা এবং জেলার সীমানা পেরিয়ে রাজ্য এবং বিদেশের বাজারে । বাড়িতে দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যবহার হত কাঁসা পিতলের বাসনপত্র । আত্মীয় কুটুম্ব এলে কাঁসা পেতলের থালা বাটিতে খাবার দেওয়ার একটা রেওয়াজ ছিল গ্রামবাংলায় । কিন্তু সেইসব আজ অতীত ।

bronze_industry
bronze_industry

By

Published : May 28, 2021, 7:52 PM IST

বাঁকুড়া, 28 মে : কাঁসা পিতলের ঢং ঢাং আওয়াজে ঘুম ভাঙত গ্রামবাসীর । শিল্পীর অসামান্য কারিগরীতে তৈরি করা বাসন রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিত ৷ জাহাজে করে অন্য দেশে রফতানি হত ৷ কাঁচামাল আমদানি হত লরি ভর্তি করে । চাহিদার চাপে নাওয়া খাওয়ার সময় জুটত না । দিন রাত জেগে কাজ করে বরাত তুলে দিতে হত ব্যবসায়ীর হাতে । এখন সেসব অতীত ৷ বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি কারখানা চলছে নমো নমো করে । কোনওরকমে দিন গুজরান করছেন কাঁসা পিতল শিল্পীরা ।

কথা হচ্ছে বাঁকুড়ার কাঁসা পিতলের শহর নামে পরিচিত কেঞ্জাকুড়ার । কেঞ্জাকুড়া জুড়ে ছিল 300টি ছোট বড় কাঁসা পিতলের বাসন তৈরির কারখানা । বংশপরম্পরায় কাঁসা পিতলের বাসন তৈরি উপর নির্ভর করেই কেঞ্জাকুড়ার শিল্পীদের জীবন চলত । এলাকার দু থেকে আড়াই হাজার মানুষ কাঁসা পিতলের বাসন তৈরি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ৷ কেঞ্জাকুড়া শিল্পীদের তৈরি কাঁসা পিতলের বাসনের চাহিদা দিন দিন কমে আসছে । কাঁচামালের চড়া দাম, পুঁজির অভাব, চাহিদার কমতি, সবে মিলে এখন প্রায় ধুঁকছে কাঁসা পিতল শিল্প ।

চরম মন্দায় কাঁসা শিল্প

কারখানা বন্ধ হতে হতে এখন 50টিতে ঠেকেছে । তাও প্রতিদিন কাজ হয় না । হাতে গোনা কয়েকজন সপ্তাহে দু তিনদিন কাজ করে কারখানা খোলেন । অন্যদের সকালবেলা কারখানা খুলে ঠাকুরকে ধূপ দেখানো আর বন্ধ করা, এই যেন রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

আরও পড়ুন : গঞ্জ রইল, ফ্রেজার সাহেবের স্মৃতি চলে গেল সমুদ্রগর্ভে

কারণ যে শুধু লকডাউন তেমনটা নয় । এক দশক আগেও কাঁসা পিতলের বাসনের বহুল ব্যবহার ছিল জেলা এবং জেলার সীমানা পেরিয়ে রাজ্য এবং বিদেশের বাজারে । বাড়িতে দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যবহার হত কাঁসা পিতলের বাসনপত্র । আত্মীয় কুটুম্ব এলে কাঁসা পেতলের থালা বাটিতে খাবার দেওয়ার একটা রেওয়াজ ছিল গ্রামবাংলায় । কিন্তু সেইসব আজ অতীত । কাঁসা পেতলের বাসনের জায়গা নিয়েছে স্টেনলেস স্টিল, ফাইবার, চিনামাটির বাসন । আজ কাঁসা পিতলের বাসনের কদর কমেছে । কাঁসার পিতলের বাসন এখন পুজোর কাজে কিংবা বিয়েতে কাঁসার বাসন যৌতুক হিসাবে বরপক্ষকে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে জেলার অনেকাংশেই । কিন্তু করোনা অতিমারির প্রভাবে কার্যত লকডাউনের জেরে নমো নমো করে হচ্ছে বিয়েবাড়ি, উপনয়ন, অন্নপ্রাশন সহ সামাজিক অনুষ্ঠান ।

সকাল দশটার পর দোকানপাট ও যানবাহন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । যাতায়াতের সমস্যায় গত দু'বছরে কাঁচামালের দ্বিগুণ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে । কাঁসা পিতলের বাসন তৈরি মূল উপাদান তামা, যার দাম প্রতি কেজি 400 টাকা ছিল ৷ এখন তা বেড়ে হয়েছে 700 টাকা । অন্যান্য কাঁচামাল রাংতা, দস্তার দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে । এদিকে চাহিদার অভাব । ফলে শেষের মুখে বাঁকুড়ার ঐতিহ্যবাহী কেঞ্জাকুড়ার কাঁসা পিতলের বাসন শিল্প । এ প্রজন্মের কেউ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে চান না । প্রচন্ড কষ্ট, চাহিদা নেই, পুঁজির অভাব । অনেকেই লেখাপড়া শিখে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন ।

আরও পড়ুন : দুয়ারে ত্রাণ নিয়ে গায়িকা ইমন, দুর্গতদের পাশে শ্রীলেখা-সব্যসাচীরা

অনেকেই আবার বাপ ঠাকুরদার সৃষ্ট এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে আঁকড়ে ধরে বসে রয়েছেন ৷ ভালো দিন ফেরার আশায় বাঁচছেন তারা । সরকারি সাহায্যে, রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপের কাতর আর্তি জানিয়েছেন কাঁসা পিতলের বাসনের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা । যদি সরকার সাহায্য করে তাহলে আবার স্বমহিমায় ফিরতে পারে কাঁসা পিতলের বাসন তৈরীর শিল্প । বাঁচবে শিল্পী, বাঁচবে শিল্প ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details