বাঁকুড়া, 27 সেপ্টেম্বর : লকডাউনের কারণে বালুচরি শাড়ির বাজারে মন্দা । দুর্গাপুজোর আগে এই পরিস্থিতিতে চরম আর্থিক সংকটে বিষ্ণুপুরের বালুচরি শিল্পী ও ব্যবসায়ীরা ।
বলা হয়, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহর একদিকে যেমন মন্দির নগরী বা টেরাকোটার জন্য বিখ্যাত, ঠিক তেমনই এখানকার বালুচরি তাঁত বিখ্যাত । এখানকার বালুচরি শাড়ির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে দেশ-বিদেশে । বলা হয়, সারা বছর এই শাড়ি যত পরিমাণ বিক্রি হয়, তার মধ্যে শুধু দুর্গাপুজোর সময়েই 60% বিক্রি হয়ে থাকে । তবে এই বছর চিত্রটা সম্পূর্ণ আলাদা । মহামারির কারণে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি রপ্তানির বাজার একেবারে তলানিতে । পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে কোনও মতে সামান্য লাভ রেখেই বিক্রি করতে চাইছেন ব্যবসায়ীরা । বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কম দামেও বিক্রি করতে হচ্ছে শাড়ি ।
আর্থিক ক্ষতির মুখে বালুচরি শিল্প একটা বালুচরি শাড়ি তৈরি করতে 5 থেকে 6 দিন সময় লাগে । সব থেকে কম দামের বালুচরি শাড়ি পাওয়া যায় 5 হাজার 500 টাকায় । এই শাড়ি তৈরি করতে প্রায় 3 হাজার 900 টাকার কাঁচামাল প্রয়োজন হয় । কাঁচামালের মধ্যে রয়েছে সুতো, সুতোচিট, মাকু তৈরি করা । এরপর শাড়ির বুননের জন্য একজন কারিগরকে মজুরি দিতে হয় 700 থেকে 800 টাকা । 5 হাজার 500 টাকা থেকে শুরু করে 10 হাজার পর্যন্ত দাম হয় এক-একটি শাড়ির । সাধারণত এই ধরনের শাড়িতে রামায়ণ অথবা মহাভারতের বিভিন্ন ছবি ফুটিয়ে তোলা হয় তাঁতের মাধ্যমে । একটি ডিজ়াইন করা শাড়ির ওজন 450 গ্রাম থেকে 785 গ্রাম পর্যন্ত হয় ।
মূলত এই শাড়ি তৈরির সুতো দুই জায়গা থেকে আমদানি করতে হয় । টানা সুতো অর্থাৎ লম্বা সুতো বেঙ্গালুরু থেকে আমদানি হয় যার দাম কেজি প্রতি 4 হাজার 500 টাকা । এছাড়াও শাড়ির চওড়া অংশ তৈরি করতে যে সুতো লাগে যাকে স্থানীয় ভাষায় ভন্না সুতো বলা হয়, সেই সুতো আমদানি হয় মুর্শিদাবাদের সুজাপুর অথবা কালিয়াচক এলাকা থেকে । 3 হাজার 100 টাকা কেজি দরে এই সুতো আমদানি করতে হয় । 2002-03 সালে এই শিল্পের যা অবস্থা ছিল বর্তমানে তা অনেকটাই ভালো হয়েছে তুলনামূলকভাবে । ওই সময় বিষ্ণুপুর শহরে প্রায় 600 মতো শিল্পী ছিলেন । বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে প্রায় সাড়ে 700 হয়েছে । তবে বর্তমানে যেহেতু মহামারির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ রয়েছে তাই রপ্তানি করা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে বালুচরি শাড়ির ।