আলিপুরদুয়ার, 23 জুন : যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত যুবকের মৃত্যু ৷ কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু সন্দেহে ওই যুবকের দেহ দাহ করতে দিল না স্থানীয় বাসিন্দারা । এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল আলিপুরদুয়ার দুই ব্লকে। সোমবার রাত থেকে মৃত ওই যুবকের দেহ পরপর তিনটি শ্মশানে দাহ করতে নিয়ে যায় তার পরিবার । অথচ স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরোধিতায় সেই দেহ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত দাহ করতে পারেনি তারা ৷ অবশেষে বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার বিকেলে বাড়িতেই কবর খুঁড়ে দেহ সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নেয় । এদিকে যুবকের মৃত্যুর কারণ নিয়ে শুরু হয়েছে BJP, তৃণমূলের চাপানউতোর ।
জেলা BJP-র সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মার অভিযোগ, "দিল্লি ফেরত যুবক সঞ্জিত দেবনাথকে কোরোনার উপসর্গ নিয়ে কোরোনা হাসপাতালে ভরতি হয় । তার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে । তারপরই ওই যুবককে আলিপুরদুয়ার তপসিখাতা কোরোনা হাসপাতালে ভরতি করে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ । অথচ সেই যুবক যখন সোমবার রাতে মারা যায় ৷ জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে মৃত যুবক কোরোনায় আক্রান্ত ছিল না । তার সব রিপোর্ট নেগেটিভ ।" তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, "যদি ওই যুবকের কোরোনা সংক্রমণ না থাকে তবে কেন তাকে কোরোনা হাসপাতালে ভরতি করা হল ৷" তাঁর অভিযোগ, "মৃত যুবকের পরিবার সোমবার রাত থেকে মৃতদেহ নিয়ে শ্মশানে শ্মশানে ঘুরছে । অথচ সেই যুবকের দেহ নিয়ে শুরু হয়েছে নোংরামি । প্রশাসন তৃণমূলের নির্দেশে কাজ করছে। প্রশাসন ও জেলা তৃণমূলের কাছে জবাব চাই কেন যুবকের মৃতদেহ নিয়ে এই রকম রাজনীতি করা হচ্ছে ।"
এবিষয়ে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী জানান, "মৃত যুবক কোরোনা হাসপাতালে ভরতি ছিল । তবে সে কোরোনায় আক্রান্ত ছিল না । ওই যুবক যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ছিল । গতকাল ওই যুবকের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয় । তখন তাকে কোরোনা হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে রাখা হয় । ওই যুবক দিল্লি থেকে এসেছিল এবং যক্ষ্মায় তার শারিরীক অবস্থা খারাপ ছিল ৷ ওই যুবকের দুই বার সোয়াব টেস্ট হয়েছে দুই বারেই রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে । যেহেতু ওই যুবক ভিনরাজ্য থেকে ফিরেছিল তার জন্য তাকে কোরোনা হাসপাতালে রাখা হয়। এবং ওই যুবকের মৃত্যুর পর তার দেহ তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় ।" তিনি পালটা BJP-র বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, "ওই যুবকের দেহ শ্মশানে দাহ করতে নিয়ে গেলে BJP-র উস্কানিতে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা দেহ সৎকার করতে বাধা দেয় ।" যুবকের মতদেহ সৎকার নিয়ে BJP-র বিরুদ্ধে পালটা নোংরামি করার অভিযোগ তুলেছেন তিনি ।
গোটা ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মৃত যুবকের দুই ভাই । বড় ভাই চিরঞ্জিত ও ছোট ভাই রঞ্জিত দেবনাথের অভিযোগ, "গতকাল রাত থেকে সঞ্জিতের মৃতদেহ নিয়ে শ্মশানে শ্মশানে ঘুরে বেড়াচ্ছি । কোনও শ্মশানেই ভাইয়ের দেহ দাহ করতে দেয়নি । প্রশাসনের সাহায্য চেয়েও কোন সাহায্য পাইনি । সোমাবার রাত থেকে ভাইয়ের মৃতদেহ নিয়ে চলছে টানাপোড়েন । অবশেষে বাধ্য হয়ে বাড়িতে সমাধিস্ত করেছি ।" আলিপুরদুয়ার জেলা উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবর্ণ গোস্বামী জানান, "গতকাল সন্ধ্যায় কোরোনা হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে । ওই যুবকের দুই বার সোয়াব টেস্ট হয়েছে । দুই বারই রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে । দিল্লি ফেরত ওই যুবক যক্ষ্মায় আক্রান্ত ছিল । তাই কোরোনা নেগেটিভ থাকলেও আমরা কোন ঝুঁকি না নিয়েই তাকে কোরোনা হাসপাতালে রেখেছিলাম । কারণ ওই যুবকের ভেন্টিলেশনের দরকার ছিল ।" তবে আলিপুরদুয়ার থানার IC অনিন্দ্য ভট্টাচার্য বলেন, "স্থানীয় বাসিন্দাদের বোঝানো হয়েছে । গতকাল রাতে শ্মশানে বাধা পাওয়ার পর ওই যুবকের মৃতদেহ আলিপুরদুয়ার মর্গে পাঠানো হয়েছিল । আজ বিকেলে তার পরিবারের লোক গিয়ে মর্গের থেকে দেহ এনে বাড়িতে সমাধিস্থ করে ।"