কলকাতা, 11 জুন : উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন অভিনীত ‘সবার উপরে’ ছবিতে কারাবন্দির চরিত্রে অভিনয় করা ছবি বিশ্বাসের কালজয়ী ডায়লগ ছিল, ‘‘ফিরিয়ে দাও আমার ছাব্বিশটা বছর ৷’’ অনেকটা সেই ঢঙেই প্রাক্তন অ্যাথলিট মনোরঞ্জন পোড়েল যদি বলেন, ‘‘ফিরিয়ে দাও আমার তেইশটি বছর ৷’’ তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না । রিল নেমে আসবে রিয়েলে । তাঁর হরিণ পায়ের দৌড় একসময় অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক গতির ঝড় তুলত । বাংলা ও ভারতের হয়ে একাধিক পদক জয়ী অ্যাথলিট মনোরঞ্জন পোড়েল ভাল নেই। বয়স তাঁর সোনালি বিকেলকে ফিকে করেছে । কিন্তু সোনালি বিকেলের রেশ তাঁকে প্রৌঢ় বয়সে স্বস্তি এবং নির্ভরতা দেয়নি । বরং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
1971 সালে ইরানের তেহেরানে আর্ন্তজাতিক অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের একশো মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছিলেন । ওই প্রতিযোগিতায় 4x400 মিটার রিলে রেসে রুপো জিতেছিলেন । 22টি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলার জার্সিতে নিয়মিত পদক জয় অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিলেন মনোরঞ্জন পোড়েল । মোহনবাগানের হয়ে ক্লাব স্তরে নিয়মিত প্রতিনিধিত্ব করা মানুষটি 1998 থেকে 2006 সাল পর্যন্ত ছিলেন ভারতীয় দলের কোচের দায়িত্বে । একবছর আগে মোহনবাগান দিবসের অনুষ্ঠানে জীবনকৃতি সম্মান উপলক্ষে মনোরঞ্জন পোড়েলের নামটি হঠাৎ করে ভেসে উঠেছিল । বর্তমানে ফের তা অস্তাচলে ।
একদা হরিণ গতিতে মনোরঞ্জন করা এই কিংবদন্তি অ্যাথলিট এখন আদালতের দরজায় কড়া নাড়ছেন । বলা ভাল তেইশ বছর কড়া নাড়তে নাড়তে ক্লান্ত বিধ্বস্ত । আইনজীবীকে ফোনের ওধার থেকে মামলার গতি প্রকৃতি জিজ্ঞেস করে রিসিভার নামিয়ে রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন । হয়তো আলগোছে চোখের জল মুছে চোয়াল শক্ত করে ঘুরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন ।
খেলার জন্য দু’টো সরকারি চাকরি পেয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন । ‘‘সাইতে চাকরি পেয়েছিলাম । কিন্তু পোস্টিংয়ের কারণে অন্য রাজ্যে যেতে হত । কাস্টমসে চাকরি পেয়েছিলাম, কিন্তু একটা বিরক্তি ছিল । তবে এখন মনে হয় কাস্টমসের চাকরির সুযোগ হাতছাড়া করাটা ভুল হয়েছিল’’, বললেন মুখচোরা মনোরঞ্জন পোড়েল । স্ত্রী, কন্যাকে নিয়ে প্রবীণ মানুষটির সংসার । 1989 সালে সাহাগঞ্জের ডানলপ ফ্যাক্টরিতে স্পোর্টস অফিসারের পদে চাকরি পেয়েছিলেন । সবকিছু ঠিকই চলছিল । কিন্তু, ন‘বছর কাজ করার পরে ডানলপ বন্ধ হয়ে যায় । বকেয়া মাইনে, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি বানভাসি হয়ে যায় । পাওয়ার আশায় মামলা করেছিলেন তেইশ বছর আগে । তার পর থেকে শুধু আদালতের অলিন্দে আইনজীবীর অফিসে চক্কর কেটে চলা । নিয়মিত ব্যবধানে ফোন করেন আশার আলো দেখার আশায় । কিন্তু মেঘ কাটে না ।
আরও পড়ুন : ভ্যাকসিনেটেড অ্যাথলিটদের তালিকা চেয়ে পাঠাল ভারতীয় অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন