কলকাতা, 7 মে: চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের নায়ক ছবিতে হিরো অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়ের টাকার গহ্বরে ডুবে যাওয়ার স্বপ্ন দৃশ্যে "শংকরদা বাঁচান" চিৎকার সিগনেচার হয়ে রয়েছে । তারপর থেকেই শংকর নামটাই বিপদতারণ হিসেবে রয়ে গিয়েছে বাঙালির মনে ।
বাঙালি গোলরক্ষক শংকর রায়ের উত্থানে নায়ক ছবির সেই ট্রেডমার্ক দৃশ্যের মিল আছে কি না তা আলোচনার বিষয় । তবে বাঙালি গোলরক্ষক এখন কলকাতার দুই প্রধানের এখন অন্যতম ভরসা । দেবজিৎ মজুমদার, শিলটন পালদের টপকে কিবু ভিকুনার প্রথম একাদশে জায়গা করে নেওয়া মোটেই সহজ ছিল না । অধ্যাবসায়কে সঙ্গী করে শংকর রায় সেটাই করে দেখিয়েছেন । নতুন মরশুমে মোহনবাগানের জার্সি ছেড়ে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলবেন । বাবার শেষ ইচ্ছের মর্যাদা দিতেই লাল-হলুদের প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন । নতুন জার্সিতেও পুরানো ছন্দ বজায় রাখতে চান ।
বাংলা ফুটবলের নতুন বিশ্বস্ত হাতের মালিক শংকর রায়
বাঙালি গোলরক্ষক এখন কলকাতার দুই প্রধানের এখন অন্যতম ভরসা । দেবজিৎ মজুমদার, শিলটন পালদের টপকে কিবু ভিকুনার প্রথম একাদশে জায়গা করে নেওয়া মোটেই সহজ ছিল না । অধ্যাবসায়কে সঙ্গী করে শংকর রায় সেটাই করে দেখিয়েছেন ।
নাগেরবাজারের RN গুহ রোডের বাড়িতে এখন শ্রী এসেছে । কয়েক বছর আগেও যা ছিল কল্পনা । তা এখন কিছুটা হলেও বাস্তব। বাবা মারা গিয়েছেন বহু দিন । মা লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন । দশ বাই দশ ফুটের ঘরটির মধ্যে এখন আর আগের সেই স্যাঁতস্যাঁতে ভাবটা আর নেই ।
কয়েক বছর আগে শংকরের কাছে পড়াশোনা ছিল বিলাসিতা । বই, খাতা, প্রাইভেট টিউশনের খরচ জোগানোর চেয়ে অন্নচিন্তা ছিল প্রধান । তবে কোনও কিছুর বিনিময়ে ফুটবলকে ছাড়ার কথা সে ভাবতে পারত না মোটেও । আর সেই অদম্য জেদের সামনে বোধহয় নতজানু হয়েছিলেন ফুটবল দেবতা । বাংলা দলে সুযোগ পাওয়া, সেখানে ভালো পারফরম্যান্স শংকরকে পাদপ্রদীপে নিয়ে আসে । চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলা । তবুও স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে অনটন যেন যেতেই চাইছিল না । এই সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ছিলেন তখনকার IFA সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় । নিজে একসময় হকির গোলরক্ষক ছিলেন । ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের হয়ে আর্ন্তজাতিক মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করেছেন । ফলে শিল্পপতি হলেও খেলোয়াড়দের দুঃখ বোঝার ক্ষমতা ছিল তাঁর । সেই মানসিকতা থেকেই শংকরকে নিজের সংস্থায় চাকরি দিয়েছিলেন । এটাই বোধহয় ছিল শংকরের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রথম পর্ব ।
কিন্তু সেই চাকরিতে প্রতিশ্রুতিমান গোলরক্ষক থিতু হলেন কোথায় ? অনুশীলনে অসুবিধা হচ্ছিল বলে চাকরিতে ইস্তফা দিলেন । ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশোনা, প্রত্যাশিত মানের পারফরম্যান্সের অভাব, চাকরি ছাড়া । শংকরকে দেখে অনেকেই বলেছিলেন, এটি আরও একটি প্রতিভার অপমৃত্যু । কিন্তু তাদের ভুল প্রমাণ করতেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই শুরু করেন বছর বাইশের গোলরক্ষক । ফলসরূপ রেলওয়ে FC, পাঠচক্র, পিয়ারলেস, মহমেডানের হয়ে খেলার পরে মোহনবাগানের জার্সিতে আইলিগ জয়ে বড় ভূমিকা নিলেন সেই অনামী, জেদি ও সাহসী গোলরক্ষক । সুব্রত পালকে আদর্শ মেনে চলা তরুণ বলছেন, নতুনভাবে নিজেকে মেলে ধরতে চান । ভারতীয় দলের জার্সিতে নিজেকে দেখতে চান । আপাতত ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ফের চ্যাম্পিয়ন হওয়াই পাখির চোখ তাঁর ।
বাংলার ফুটবলে নতুন বিশ্বস্ত হাতের মালিকের নাম শংকর রায় ।