কলকাতা, 22 সেপ্টেম্বর : কলকাতা ময়দান । শহরের মাঝখানে এক বিস্তীর্ণ সবুজ প্রান্তর । প্রায় সাড়ে ছয় মাইল বিস্তৃত এই অঞ্চলটি মূলত বাংলার খেলাধুলোর প্রধান মঞ্চ হলেও তার পিছনে যে নীরব ইতিহাস রয়েছে তা বেশ চমকপ্রদ । আর ময়দানের এই ইতিহাস নিয়েই গবেষণা করেছেন সোনারপুর কলেজের অধ্যাপক শুভ্রাংশু রায় । ময়দান নিয়ে তাঁর গবেষণাপত্রও জমা দিয়েছেন সম্প্রতি ।
কলা বা বিজ্ঞান বিভাগের ভারী কোনও বিষয় নয় । শুভ্রাংশুবাবুর গবেষণার বিষয় কলকাতা ময়দান । যা অভিনব । তিনি বলছেন, কলকাতা ময়দানে তিন প্রধান ছাড়া আরও অনেক ক্লাব আছে যারা শতবর্ষ অতিক্রম করেছে । ডালহৌসি, রেঞ্জার্স, CCFC বছর সত্তর আগেও ছিল ব্রিটিশ কলোনিয়াল কালচারের প্রতিভু । দেশ স্বাধীন হয়েছে । কিন্তু এই তিন ক্লাব আজও ময়দানে রয়েছে । এবং তারা রয়েছে ব্রিটিশ সংস্কৃতির অংশ হিসেবে নয় বরং বঙ্গীয় খেলাধুলোর চর্চা কেন্দ্র হিসেবে । ফুটবল, ক্রিকেটে এই ক্লাবগুলোর সক্রিয় যোগদান ময়দানের কসমোপলিটান কালচারের উজ্জ্বল উদাহরণ ।
ময়দানের অন্দরমহলে এমন সমস্ত ইতিহাস লুকিয়ে যা শহর কলকাতার রাজনৈতিক-সামাজিক চরিত্রের সাক্ষ্য বহন করে । শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকটি ক্লাব রয়েছে যা বাংলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য বহন করে । উদাহরণ হিসেবে ক্যালকাটা পার্সি ক্লাব, মেকন ইনস্টিটিউট, বুদ্ধিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, আর্মেনিয়ান ক্লাব এবং মুসলিম ইনস্টিটিউট । এরা প্রত্যেকেই একশো বছর অতিক্রম করেছে । ময়দানের সুবিস্তৃত সবুজ সমারোহে অচলায়তন হিসেবে দাঁড়িয়ে নেই । নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী বঙ্গীয় খেলাধুলোয় নিজ সম্প্রদায়ের চিহ্ন বহন করে চলেছে । ময়দানের এই বিবিধের মাঝে মিলনের সংস্কৃতি শুভ্রাংশু রায়কে গবেষণার বিষয় হিসেবে ময়দানকে বেছে নিতে আকৃষ্ট করেছিল ।
ক্লাব সংস্কৃতির পরিচয় এসেছিল ব্রিটিশদের হাত ধরে । ইংরেজদের সঙ্গে পাল্লা দিতে তদানীন্তন বাংলার রাজা, জমিদাররা ক্লাব তৈরি করেছিলেন । ইতিহাস ঘাঁটলে পাওয়া যায় শোভাবাজার ক্লাব, টাউন ক্লাব, শ্রীরামপুর ক্লাবের নাম । সোনারপুর কলেজের অধ্যাপক বলছেন, তিনি ছোটোবেলা থেকে অভিভাবকদের হাত ধরে ময়দানে খেলা দেখতে আসতেন । পরবর্তী সময়ে কলেজে পড়ার সময় ময়দানে এসেছেন । প্রতিবারই ভেদাভেদহীন মঞ্চ হিসেবে কলকাতা ময়দান তাঁর চোখে ধরা পড়েছে । এবং ময়দানের এই চরিত্রটি নতুন নয় । শাসক ইংরেজ যখন সমাজের অন্য পরিসরে নেটিভ বলে ভারতীয়দের দূরে ঠেলছে তখন ময়দানে অন্য ছবি । সেখানে শাসকপক্ষ জাতপাতের বিভেদ করেনি । উলটে নৈপুণ্যের গুনগান গেয়েছে । শুভ্রাংশুবাবুর কাছে ময়দান তাই ল্যান্ড অফ হারমনি । যা বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক । গবেষণাপত্রে এই বিবিধের মাঝে মিলনের ছবি তুলে ধরেছেন তিনি । যা সত্যিই অভিনব ।