কলকাতা, 10 জুন : রাত পোহালেই ইউরো কাপ (EURO 2020) ৷ ফুটবল জ্বরে কাবু হতে চলেছে ইউরোপ ৷ বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরের ক্রমতালিকা তৈরি করা হলে একনম্বরে যদি থাকে বিশ্বকাপ ফুটবল, দুইয়ে অবশ্যই ইউরো কাপ । 24 দেশের লড়াই ৷ ফুটবল বিশেষজ্ঞদের ধারনা, আসন্ন কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ 2022-এর সাম্ভাব্য রূপরেখা তৈরি করে দেবে ইউরো 2020 । তবে এবারের ইউরো কাপ হচ্ছে অন্য আঙ্গিকে ।
করোনার কথা মাথায় রেখে 11টি দেশের মোট এগারোটি স্টেডিয়ামে খেলা হবে । 23জন ফুটবলার নয়, দলগুলি 26জন ফুটবলারের নাম নথিভুক্ত করতে পারবে ৷ তিনজন নয় পাঁচজন ফুটবলার পরিবর্ত হিসেবে নামানো যাবে । তাই ইউরো কাপকে বিশ্বকাপের ড্রেস রিহার্সাল বলাই চলে ৷ করোনা ভাইরাসের কারণে একবছর পিছিয়েছে ইউরো । ইতালির মাটিতে ইউরোপ সেরার লড়াই শুরু হবে ।
ইতালির ফুটবল মানেই ভারতীয় সময়ে রাত জাগার রোমান্টিকতা । করোনা আবহে জীবন ঘরবন্দী । আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে । এই অবস্থায় রাত জেগে ফুটবল দেখার আমন্ত্রণ উপেক্ষা করা কঠিন, বলছেন ফুটবলপ্রেমীরা । কিন্তু কোন দেশ এবার ইউরোপ সেরার দৌড়ে এগিয়ে? কোন ফুটবলার হবেন তারকা? ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো কি দখলে রাখতে পারবেন ইউরোর মুকুট? না, বিশ্বকাপের পর কিলিয়ানে এমবাপে ইউরোর আসরে নায়ক হবেন? মোট 6টি গ্রুপের, জার্মানি, পর্তুগাল ও ফ্রান্স সহ গ্রুপ এফে গ্রুপ অব ডেথ বলা হচ্ছে ।
ফুটবলের মক্কা কলকাতার অন্যতম সেরা ফুটবলার ছিলেন মানস ভট্টাচার্য ৷ আসন্ন ইউরো কাপে তাঁর বাজি ফ্রান্স ৷ ইউরো নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মানস বলছেন, ‘‘আমার বাজি ফ্রান্স । গ্রুপ এফ-কে গ্রুপ অব ডেথ বলা হচ্ছে । আমি এই ধারনার সঙ্গে একমত । কারণ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও ইউরো কাপ চ্যাম্পিয়ন ছাড়াও আছে জার্মানি ৷ তাই এই গ্রুপে প্রথম থেকে লড়াইটা সেয়ানে সেয়ানে । ফ্রান্সকে বাজি ধরছি কারণ কিলিয়ানে এমবাপে,করিম বেঞ্জিমা, অ্যান্তেনিও গ্রিজম্যান,পল পোগবা, কন্তে, রাফায়েল ভারানের মতো সেরা তারকা রয়েছে দেঁশর ফরাসি ড্রেসিংরুমে ।’’
ফ্রান্স ফুটবলদলের শক্তি বিশ্লেষণে মানস ভট্টাচার্য (Manas Bhattacharya) বলছেন, ‘‘বেঞ্জিমা সাতবছর পরে ফিরেছেন । চোটের কারণে হয়তো প্রথম ম্যাচে নেই ৷ তবে দ্রিদিয়ের দেঁশর দলে তার প্রভাব পড়বে না । গত বিশ্বকাপের তুলনায় এমবাপে এখন অনেক পরিণত । একাই যেকোনও ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন । ক্লাব ফুটবলে পিএসজিতে নেইমারের পাশে খেললেও তাঁর ছায়ায় ঢাকা পড়েনি ৷ বরং কোনও কোনও ম্যাচে ছাপিয়ে গিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান তারকাকে । করিম বেঞ্জিমা, পল পোগবারা অভিজ্ঞ এবং বিধ্বংসী । তাই ফ্রান্সকে এগিয়ে রাখব ।’’
ইউরো কাপ 2016-র খেতাব জয়ী দল পর্তুগাল ৷ সিআরসেভেনের পর্তুগাল নিয়ে মানস ভট্টাচার্যের বিশ্লষণ, ‘‘পর্তুগাল ইউরোর খেতাব জয়ী হলেও বড্ড বেশি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো নির্ভর । সম্ভবত এবারই সিআরসেভেনের শেষ ইউরো কাপ । তাঁর পাশে মিডফিল্ডার ব্রুনো ফার্নান্দেজ, ডিফেন্ডার রুবেন ডায়াস, উইঙ্গার জোয়াও ফেলিক্স ছাড়া বড় নাম নেই ফার্নান্দোর দলে । এই রকম পরিস্থিতিতে নিংড়ে দেওয়ার বাড়তি তাগিদ থাকে খেলোয়াড়দের মধ্যে । কিন্তু বয়স হয়তো রোনাল্ডোর বিপক্ষে যাবে । যোগ্যতা অর্জন পর্বে সহজ গ্রুপে পড়েও দু’নম্বরে শেষ করেছে । তবে নামটা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো,তাই নেতৃত্ব, ক্যারিশমা, গোল করার অবিশ্বাস্য ক্ষমতার জন্য পর্তুগালকে নজরে রাখতেই হবে ।’’
গ্রুফ অফ ডেথে অন্যতম সেরা দল চারবারের বিশ্বকাপ জয়ী জার্মানি ৷ মানস ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘লড়াকু জার্মানি সবসময়ই অনন্য । শেষ বিন্দু অবধি লড়াই করে । ব্যক্তি নির্ভরতা নয়, দলগত সংহতি প্রধান ওদের কাছে । কোচ বদল হয়েছে । জোয়াকিম লো ইউরোর পরে দায়িত্ব ছাড়বেন । এই দলটি এখন গড়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে । 2024সালে ইউরোর আয়োজক জার্মানি । ম্যানুয়েল নয়ার, টনি ক্রুজ, গাই হাবাস, মুলারের মতো ফুটবলার রয়েছেন । মুলারকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে অন্য বার্তা দিচ্ছে । তবে আমার চোখ থাকবে ফ্রান্সের দিকেই ।’’
আরও পড়ুন : WTC final : একসঙ্গে অনুশীলন শুরু করলেন বিরাট-রোহিতরা
একসময় তাঁকে বলা হত ভারতের মিডফিল্ড জেনারেল ৷ সেই মেহতাব হোসেনও (Mehtab Hossain) রাত জেগে ইউরো কাপ দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন ৷ তাঁরও নজরেও ইউরোর গ্রুফ অফ ডেথ ৷ মেহতাব বলছেন, ‘‘ইউরোর আসরে সবদলই উনিশ বিশ । আর প্রতিটি দেশের ফুটবলাররা বিশ্বের বিভিন্ন লিগে খেলে । ফলে পরস্পরকে চেনে । তাই প্রতিটি ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে । গ্রুপ এফ সব অর্থেই মারণ গ্রুপ । ওই গ্রুপ থেকে লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে নক আউটে আসবে যারা, তারা যে চ্যাম্পিয়নের দাবিদার হবেন, তা বলাই যায় । ফ্রান্স দলটি অবশ্যই গোছানো । এমবাপে, পাশে পোগবা, বেঞ্জিমা রয়েছেন । এদের মধ্যে যত দ্রুত বোঝাপড়া গড়ে উঠবে ততই ভয়ংকর হবে । আমি তো রোনাল্ডোর পর্তুগালের বিরুদ্ধে এমবাপের ফ্রান্সের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে । এই ম্যাচে তারকার দ্যুতি রয়েছে । ছাপিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ থাকবে । তাই লড়াইটা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং তার পর্তুগালের সঙ্গে ফ্রান্সের লড়াই । জার্মানি লড়াই করবে । নিজেদের দেশে খেলার সুযোগ পাচ্ছে, একাধিক প্রতিভাবান এবং অভিজ্ঞ ফুটবলার রয়েছেন । আর বিদায়ী টুর্নামেন্টে কোচ জোয়াকিম লো একটা ছাপ রাখার চেষ্টা করবেন । এছাড়াও আমার পছন্দের তালিকায় ইংল্যান্ড, স্পেন রয়েছে ।’’
তবে নতুন রূপে ইতালিও চমক দিতে পারে বলে মনে করছেন দুই প্রাক্তনই । রাশিয়ার বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারার আক্ষেপ ইউরোর আসরে মানচিনির দল মেটানোর চেষ্টা করবে । তবে ইংল্যান্ডকে বেশি নম্বর দিতে রাজি নন মেহতাব ও মানস ।