শিলিগুড়ি, 30 এপ্রিল: মাঠে তাঁর প্রাঞ্জল উপস্থিতি ফুটবলের সৌন্দর্য বাড়ায় । ফুটবলাররা তাঁদের ফুটবল নৈপুণ্য সুন্দরভাবে মেলে ধরার সুযোগ পান । প্লে অ্যাক্টিংয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করা ফুটবলাররা তাঁকে সমঝে চলেন । তাঁর নাম প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায় । বর্তমান ভারতীয় ফুটবলে রেফারিংয়ে শেষ কথা । আগরপাড়ার ছেলে প্রাঞ্জল চাকরি সূত্রে বর্তমানে শিলিগুড়িতে থাকেন । ময়দান থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণার সঙ্গে আপস করলেও প্রাঞ্জল তাঁর রেফারিং নিয়ে স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে মরিয়া ।
ভালো ফুটবলের জন্যে ভালো রেফারিং জরুরি । সঠিক ম্যাচ পরিচালনা ফুটবলের সৌন্দর্য বাড়ায় । ফুটবলার এবং দর্শকদের কাছ থেকে আদায় করে নেন সম্ভ্রম । তবুও রেফারিরা থেকে যান আড়ালেই । প্রতুল চক্রবর্তী, রবি চক্রবর্তী, মিলন দত্ত, নৃসিংহ চট্টোপাধ্যায়, সুদীন চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ নাগ, হাকিমদের মতো রেফারিদের নাম তাই আড়ালেই থেকে গেছে ।
বাংলার ফুটবলের ভালো মানের রেফারিদের ব্যাটন বয়ে চলেছেন প্রাঞ্জল । একটা চাকরির জন্য কলকাতা ছাড়তে হয়েছে তাঁকে । সুঠাম চেহারা, দীর্ঘদেহী, উজ্জ্বল বর্ণের বছর 34-এর MBA পাশ করা এই তরুণ ভারতের সেরা রেফারি । ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে খেল সম্মানে সেরার স্বীকৃতি দিয়েছেন ।
প্রতিকূলতা সরিয়ে স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার লড়াই প্রাঞ্জলের
স্মরণীয় ম্যাচ বলতে ইরান বনাম কম্বোডিয়া ম্যাচ । ইরানে ওই ম্যাচ দেখতে মহিলাদের প্রথমবারের জন্যে স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল । যা ছিল ঐতিহাসিক । আপাতত এশিয়ান কাপের ম্যাচ খেলানোকে পাখির চোখ করছেন প্রাঞ্জল ।
কিন্তু তারপরের প্রাপ্তি শুধুই আশ্বাস । অথচ কলকাতা শহরে থেকে ম্যাচ পরিচালনার কাজটি আরও সুষ্ঠুভাবে করতে পারতেন প্রাঞ্জল । রেফারিদের সরকারি চাকরির অতীত রেকর্ড রয়েছে । অথচ প্রাঞ্জল নবান্ন থেকে ক্রীড়াদপ্তরে হত্যে দিয়ে পড়ে থেকেও চাকরি পাননি । ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী লক্ষীরতন শুক্লা ঐকান্তিকভাবে চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি । শেষ পর্যন্ত একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি নিয়ে প্রাঞ্জলকে কলকাতা ছাড়তে হয়েছে ।
"একদিকে সংসারের চাপ অন্যদিকে FIFA-র এলিট প্যানেলে পৌঁছানোর লক্ষ্য । দুয়ের মাঝখানে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বেকারত্ব । আমার সামনে আর কোনও পথ খোলা ছিল না । বউকে নিয়ে কিছুটা উপায় না পেয়েই কলকাতা ছেড়েছিলাম । বছর দেড়েক হল শিলিগুড়িতে আছি । কলকাতা মাঠে নিয়মিত খেলানোর সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপ তো রয়েছে । শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এবং অফিস সাহায্য করেছে । এভাবেই চলে যাচ্ছে," বলছিলেন প্রাঞ্জল । কলকাতা ছাড়ার কথা কখনও ভাবেননি । তাঁর কথায়, "নিজেকে ম্যাচ ফিট রাখতে স্থানীয় লিগ ,টুর্নামেন্ট খেলাই । এর পাশাপাশি আই লিগ, ISL-এর ম্যাচ রয়েছে । FIFA রেফারি হওয়ায় আমি 14 থেকে 15টি ম্যাচ পাই । এভাবেই স্বপ্নপূরণের চেষ্টা বলতে পারেন। "
শংকরের মতো বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনার স্বপ্ন দেখেন । ইতিমধ্যে চারটি ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ার খেলিয়েছেন । স্মরণীয় ম্যাচ বলতে ইরান বনাম কম্বোডিয়া ম্যাচ । ইরানে ওই ম্যাচ দেখতে মহিলাদের প্রথমবারের জন্যে স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল । যা ছিল ঐতিহাসিক । আপাতত এশিয়ান কাপের ম্যাচ খেলানোকে পাখির চোখ করছেন প্রাঞ্জল ।
বাবা-মা গত হয়েছেন । স্ত্রী, সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে প্রাঞ্জলের সংসার । নিয়ম অনুসারে আরও এগারো বছর খেলাতে পারবেন । 45-এর পর আর মাঠে নামতে পারেন না রেফারিরা । প্রাঞ্জল বলছেন, "45 বছরের পর রেফারিদের চলবে কী করে ? কোনও চাকরির সুযোগ নেই । 2005 সালে IFA-র রেফারি অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছেন প্রাঞ্জল । ওই ব্যাচে তাঁর থেকে ভালো মানের রেফারি না থাকলেও প্রতিষ্ঠা পাননি প্রাঞ্জল । তাই ফেডারেশন, IFA-র কাছে বিষয়টি ভেবে দেখার আবেদন করতে চান তিনি । তাঁর প্রশ্ন, ফুটবলাররা সরকারি চাকরি পেলেও রেফারিরা কেন বঞ্চিত হবেন । অনেক ফুটবলার আছেন ন্যূনতম ফুটবল না খেলেও চাকরি পেয়েছেন । অথচ রেফারিদের জন্য শুধুই শুকনো সম্ভ্রম ।
লকডাউনে ঘরবন্দী অবস্থায় থাকলেও ফিটনেস বজায় রাখার জন্য এক্সারসাইজ় করছেন । আজও ম্যাচ পরিচালনায় কিছু ভুল করলে প্রাক্তন রেফারি প্রদীপ নাগকে ফোন করেন । স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে লকডাউনেও অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায় ।